রুটি বিক্রেতা রহিমার জীবনযুদ্ধ
- অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সিংড়া (নাটোর)
- ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:৪৪
জীবনের প্রতিটি ধাপ তার যুদ্ধে ঘেরা। কষ্টের সংসারে ১৬ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে শাহ আলম হাল ধরতে শুরু করে। হঠাৎ ষড়যন্ত্রমূলক একটি হত্যা মামলায় ফাঁসানো হয় শাহ আলমকে। মামলার রায়ে যাবজ্জীবন জেল হয়। এরই মধ্যে কেটে গেছে জীবনের ৯টি বছর। দীর্ঘ এই সময় সংসারের বোঝা ও সাত রাজার ধন একমাত্র ছেলের মামলার খরচ জোগাতে রাস্তায় রাস্তায় রুটি বিক্রয় করেছেন অসহায় রহিমা।
এই দীর্ঘ সময়ে অনেক সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে অভুক্ত থেকেছেন রহিমা। ঘটনাটি সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিনগ্রামের অসুস্থ দিনমজুর হাচেন আলীর স্ত্রী রুটি বিক্রেতা রহিমা বিবির। অবশেষে শাহ আলমের মামলার দায়িত্ব নেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী। উচ্চ আদালত থেকে তাকে জামিনে মুক্ত করেন।
সম্প্রতি একদিন অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী হঠাৎ সিংড়ার বিনগ্রামে রাস্তার পাশে অসহায় রহিমা বিবির রুটির দোকানে যান। জীবনযুদ্ধে হার না মানা সেই অসহায় নারীর ঘটনা শুনে রহিমা বিবির মুখে। এ সময় তার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দেন এবং তার ছেলে শাহ আলমের মামলার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ইউসুফ আলী।
শাহ আলম বলেন, যে হত্যা মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছিল তাতে সে কোনোভাবেই জড়িত নন। তার ওস্তাদ কাঠমিস্ত্রি রুহুল আমিন এ ঘটনাটি ঘটিয়েছিল। তাকে অন্যায়ভাবে ৯ বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। অসহায় ও গরিবের কথা কে বা শোনে।
শাহ আলমের মা রুটি বিক্রেতা রহিমা বিবি বলেন, এক দিকে সংসারের বোঝা অন্য দিকে একমাত্র ছেলে শাহ আলমের যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ শুনে ভেঙে পড়েছিলাম। বিনা খরচে ছেলের জামিন ও আর্থিক সহযোগিতায় আমার অনেকটা উপকার হলো। আল্লাহ যেন ইউসুফ আলীকে সম্মানিত করেন।
অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী বলেন, ২০১২ সালের একটি হত্যা মামলায় শাহ আলমকে আসামি করা হয়। কিন্তু তার জন্ম সনদ অনুযায়ী তখন তার বয়স ছিল ১৫-১৬ বছর। কিন্তু রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার কারণে নিষ্পাপ একটি কিশোর তার জীবনের ৯টি বছর জেলে কাটিয়েছে। তাকে জেলে না পাঠিয়ে কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো দরকার ছিল। আমি মনে করি এর জন্য রাষ্ট্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা ছাড়া এ হত্যার সাথে এই ছেলের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ যে এই হত্যা সংঘটিত করেছিল ভাড়াটে কাঠমিস্ত্রি রুহুল আমিন। আর শাহ আলম ছিল তার দোকানের হেলপার বা যোগালা। রুটি বিক্রেতা এক অসহায় নারীর জীবন যুদ্ধের ঘটনা আমাকে কাঁদিয়েছে। তাই শাহ আলমের মামলার সব দায়িত্ব আমি নিয়েছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা