২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজারে খাচ্ছে ৩ ফসলি জমি

-

কুমিল্লার মুরাদনগরে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিলীন হতে চলছে উপজেলার তিন ফসলি জমি। উপজেলার ২২ ইউনিয়নে শতাধিক ড্রেজার প্রতিনিয়ত কৃষি ও সরকারি খাল-বিল থেকে মাটি কাটছে। অপরপক্ষে এ মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা ও পুকুর ভরাটের কাজে। নিরুপায় হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩০ জন জমির মালিক ইউএনও এবং এসিল্যান্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাঝে মধ্যে মাঠে গেলে ব্যাবসায়ীরা ড্রেজার চালানো কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রাখলেও প্রশাসন চলে গেলে আবার আবার শুরু করে অবৈধ ড্রেজিংয়ের মহোৎসব।
সরেজমিন দেখা যায়, বাঙ্গরা পশ্চিম ইউনিয়নের ধনপতিখলা, কালারাইয়া, দীঘিরপাড়, বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের খামার গ্রাম, বিষ্ণপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ চাপিতলা, যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া, যাত্রাপুর, রঘুরামপুর, ভবানীপুর, কাশিপুর, সিংহারিয়া, টনকি ইউনিয়নের টনকি, বাইড়া, চাপিতলা ইউনিয়নের শ্রীরামপুর, চাপিতলা, পুস্করিনীর পাড়, শ্রীকাইল ইউনিয়নের রোয়াচালা, সোনাকান্দা, পেন্নই, কামাল্লা ইউনিয়নের কামাল্লা, নোয়াগাঁও, নেয়ামতপুর, আসনপুর, কামারচর, নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়নের রামধনীমুড়া, মুরাদনগর সদর ইউনিয়নের ধনীরামপুর, ইউসুফ নগর, নেয়ামতপুর, পূর্বধইর পশ্চিম ইউনিয়নের হাটাশ, খৈয়াখালী, রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৈজুরীসহ উপজেলার ৩১২টি গ্রামে কোনো না কোনো স্থানে ড্রেজার মেশিন চলে। মাইলের পর মাইল পাইপ সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে পকুর ভরাট করা ও ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুরাদনগর উপজেলা ৫৬ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে আবদ্ধ। এরই মধ্যে বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ৭২টি ইটভাটা রয়েছে। গ্যাসফিল্ড রয়েছে চারটি। গ্যাস উত্তোলনে মাটির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্য দিকে ইটভাটাগুলো মাটির উর্বরের অংশ কেটে নিচ্ছে। অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর থেকে মাটি ও বালু উত্তোলনের কারণে আশপাশের তিন ফসলের জমিগুলো কূপে পরিণত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্তত ৯ ব্যক্তি বলেন, প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই কিভাবে যেন তারা টের পায়। মেশিনপত্র বন্ধ করে চলে যায়। পরক্ষণে প্রশাসনের লোকজন চলে গেলে তারা আবারো মাটি কাটার উৎসবে মেতে ওঠে।
বিষয়টির ব্যাপারে অভিযুক্ত অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী সৈকত আলীর সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ড্রেজার বন্ধ করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহম্মেদ সোহাগ বলেন, আমি উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। কেননা তিন ফসলি জমির টপসয়েল্ট (উর্বর মাটির উপরের অংশ) ব্যাপকহারে কেটে নিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ছয় মাসের মধ্যে চাষাবাদের জন্য একখণ্ড জমি থাকবে না। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কড়াভাবে নিষেধাজ্ঞা আছে জমির মাটি কেটে নিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিষেক দাশ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু ড্রেজার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ড্রেজার বন্ধে সব রকমের পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement