ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। মঙ্গলবার হাউজ অব কমন্সে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ওপর গণহত্যা পরিচালনাকারী সেনা সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাপ দেবে যুক্তরাজ্য।
মিয়ানমারের অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করার প্রস্তাব দিতে তিনি জাতিসঙ্ঘের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আহ্বান জানাবেন।
গত বছরের আগস্টে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রাখাইনে পূর্বপরিকল্পিত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই অভিযানে জাতিগত নিধনযজ্ঞের আলামত পেয়েছে। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে এক তদন্ত রিপোর্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছে। মিয়ানমার সরকার বারবারই দাবি করে এসেছে যে, নিরাপত্তার স্বার্থে এই অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কোনো নিধনযজ্ঞ চালানো হয়নি। তবে জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রত্যাখ্যানের মাত্রায় তারা হতবাক। সামরিক অভিযানে কখনোই হত্যা, সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ, শিশু নিপীড়ন ও গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মঙ্গলবার হাউজ অব কমন্সে বক্তব্য দেয়ার সময় ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্ট বলেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকে ‘বিশেষ দায়িত্ব’ নিতে হবে। এ মাসের শেষের দিকে তিনি এ ব্যাপারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশ্য করে হান্ট বলেন, ‘যে আকার কিংবা কায়দায় অথবা যে জায়গাতেই জাতিগত নিধন হোক না কেন একে কখনোই বিচারের আওতামুক্ত রাখা উচিত নয়। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ সংগঠনকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সেখানে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, শিশুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে, গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে ও গণহারে বিতাড়নের ঘটনা ঘটেছে।’
হান্ট জানান, তিনি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ‘মন্ত্রীদের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক’ আয়োজনে আগ্রহী। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের কথা সুপারিশ করতে চাইলে এেেত্র জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। আর নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র এতে সমর্থন দেবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। মিয়ানমারের সাথে চীনের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক খুব গভীর। মিয়ানমারবিরোধী যেকোনো প্রচেষ্টায় দেশটি ভেটো দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। হান্ট আরো জানান, মিয়ানমার কর্তৃপরে সাথে এ ইস্যুটি নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি মিয়ানমার সফরে যেতে চান।
আরো পড়ুন :
দুই সাংবাদিকের মুক্তি দাবি মাইক পেন্সের
রয়টার্স
মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের কারাদণ্ড বাতিল করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। মঙ্গলবার এক টুইটে তিনি বলেছেন, ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার যে ঘটনা উদঘাটন করেছেন, সেজন্য তাদের জেল না দিয়ে প্রশংসা করা উচিত।
শক্তিশালী গণতন্ত্রের জন্য সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা যে জরুরিÑ সে কথাও মিয়ানমার সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহের সময় গ্রেফতার রয়টার্সের ওই দুই সাংবাদিককে গত সোমবার ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন ইয়াংগনের একটি আদালত। রাখাইনের সেনা অভিযানের সময় ইনদিন গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলার একটি ঘটনা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন ওই দুই সাংবাদিক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা