২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হার্ভার্ড-এমআইটিসহ আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্ব নিয়ে যা ঘটছে

- ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেবার পরে ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট ক্লডিন গে’র পদত্যাগের চাপ বাড়ছে।

ইহুদিদের উপর গণহত্যা চালানোর বিষয়টিকে যারা সমর্থন করেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট।

সেজন্য ৫৩ বছর বয়সী ড. গে-কে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।

এই ঘটনার পরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শত শত শিক্ষক তার পক্ষে (ড. গে) দাঁড়িয়েছেন এবং তাকে যাতে চাকরিচ্যুত করা না হয় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

এখন ড. গে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থাকতে পারবেন কি না সে বিষয়ে হার্ভার্ড কর্পোরেশনের সভায় এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত হবে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের হাউজ অব রেপ্রেজেনটেটিভ-এ শুনানির সময় ড. গে’র মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

কংগ্রেসের সেই শুনানিতে আরো ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালিজাবেথ ম্যাগিল এবং ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’র (এমআইটি) স্যালি কর্নবাথ।

রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যালিস স্টেফানিকের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়েন বিশ্বখ্যাত এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহীরা।

কংগেস সদস্য মিস্ স্টেফানিক প্রশ্ন করেন-ইহুদিদের গণহত্যার আহ্বান জানানোর বিষয়টি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ‘বুলিং অ্যান্ড হ্যারাসমেন্ট’ সংক্রান্ত যেসব বিধি-বিধান আছে সেগুলোর লঙ্ঘন কি না?

জবাবে ড. গে বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে প্রেক্ষাপটের ওপর।’

এরপর হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস সংবাদপত্র ‘ক্রিমসন’ এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. গে উল্লেখ করেন, ‘আমি দু:খিত। কথার কারণে যদি হতাশা এবং বেদনা তৈরি হয়, তাহলে অনুশোচনা ছাড়া আর কী করা যেতে পারে সেটা আমি জানি না।’

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি পরিচালনার জন্য দু’টি গভর্নিং বডি আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট হার্ভার্ড কর্পোরেশন। ড. গের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য হার্ভার্ড কর্পোরেশন এ সপ্তাহে আলোচনায় বসবে।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার উপর যাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না হয় এবং প্রেসিডেন্ট ড. গে যাতে পদচ্যুত না হন সেজন্য গত সপ্তাহান্তে ৫০০ শিক্ষক একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত সে সংখ্যা ৭০০ তে দাঁড়িয়েছে।

এই পিটিশনের সহ-লেখক অ্যালিসন ফ্রাঙ্ক জনসন রয়টার্সকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমরা তাকে হারাতে চাই না।

তিনি আরো বলেন, অনেকে এটা জানেন না যে একজন স্কলার, সহকর্মী এবং প্রশাসক হিসেবে ক্যাম্পাসের ভেতরে তার প্রতি কতটা সমর্থন রয়েছে। যারা তার সাথে মাঝেমধ্যে দ্বিমত পোষণ করেন, তারাও তাকে সমর্থন করেন।’

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ৩৬৮ বছরের ইতিহাসে ড. গে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। গত জুলাই মাসে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান।

কংগ্রেসের ৭০ জন সদস্য হার্ভার্ড, এমআইটি ও পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন। যেসব কংগ্রেস সদস্য এ আহ্বান জানিয়েছেন তাদের বেশিরভাগ রিপাবলিকান দলের সদস্য।

কংগ্রেস সদস্যরা এ চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, শুনানির সময় তিনটি ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টরা যে উত্তর দিয়েছেন সেটি ‘অনৈতিক’।

শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে যে ধরণের নৈতিকতা আশা করা হয় তারা সেটির বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ইহুদিদের ওপর গণহত্যা চালানোর আহ্বান সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসগুলোতে যে প্রভাব তৈরি করবে সেটি বলতে পারেননি এই তিনটি ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্টরা। ফলে সেসব ইউনিভার্সিটির ইহুদি অথবা ইসরাইলি শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপদ বোধ করবেন না।

গত শনিবার ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার প্রেসিডেন্ট মিস ম্যাগিল স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

কংগ্রেস শুনানিতে তার মন্তব্যের প্রতিবাদে ইউনিভার্সিটি থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান ফেরত নেবার ঘোষণা আসে।

মিস ম্যাগিল পদত্যাগের ঘোষণা দেবার পরেও তাকে কংগ্রেসে শুনানির জন্য তলব করা হয়।

এক্স প্লাটফর্মে কংগ্রেস সদস্য মিস্ স্টেফানিক লিখেছেন ‘একজন গেছে, আরো দু’জনকে যেতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রায়ই ফিলিস্তিনের পক্ষে অথবা ইসরাইলের পক্ষে সমাবেশ দেখা যাচ্ছে। এতে করে ইহুদি-বিদ্বেষ কিংবা ইসলাম-ভীতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement