৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সৌরশক্তির কল্যাণে সোমালিয়ায় বহুমুখী উন্নয়ন

সৌরশক্তির কল্যাণে সোমালিয়ায় বহুমুখী উন্নয়ন - ছবি : সংগৃহীত

সোমালিয়ার মতো দরিদ্র, অশান্ত দেশে মানুষের দুর্দশা কমাতে এক বহুমুখী প্রকল্প দৃষ্টিন্ত হয়ে উঠেছে। সৌরশক্তির কল্যাণে বিদ্যুৎ, পানি ও জেলেদের মাছ তাজা রাখার ব্যবস্থা গ্রামে সুদিন নিয়ে এসেছে।

আইয়ো আহমেদ ওসমান বেশ সন্তুষ্ট। আজ তিনি এই কুয়া থেকে পানি তুলে দেখাচ্ছেন যে- বাসায় ব্যবহারের জন্য মূল্যবান এই সম্পদ আনা অতীতে কত কঠিন ছিল। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে আমাদের বাসা থেকে তিন কিলোমিটারের বেশি দূরে হেঁটে গিয়ে পানির সন্ধান করতে হতো। জেরিক্যানে পানি ভরে নিয়ে বাসায় আনতে হতো। সেই পানিও লবণাক্ত ও নোংরা ছিল। আমরা কুয়ার কাছে কাপড় কাচতাম।’

কিন্তু আবায় দাক্সান নামের ছোট গ্রামে বড় কিছু পরিবর্তন এসেছে। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশুর উপকণ্ঠে প্রায় এক হাজার বাসিন্দা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। সৌরশক্তি দিয়ে সেই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

আবায় দাক্সানের বাসিন্দা আব্দুলকাদির মুসে বলেন, ‘ফোন চার্জ করাই আমাদের কাছে বড় সমস্যা ছিল। অনেক দূরে জাজিরায় হেঁটে গিয়ে ৫০ সেন্ট মাসুল দিয়ে চার্জ করতে হতো। অনেক দরিদ্র মানুষের সেটুকু সামর্থ্যও ছিল না। আর এখন আমাদের বাসায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ রয়েছে।’

মোহামাদ আবু আবদি হাজির মতো এই উপদ্বীপের বেশিরভাগ মানুষই পেশায় জেলে। অতীতে মোগাদিশুর বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই তার ধরা মাছ গরমে পচে যেতো। এখন সৌরশক্তিচালিত ফ্রিজার সেই মাছ অনেক বেশি সময় টাটকা রাখে। মোহামাদ বলেন, ‘দুটি মাছ ধরলেও আমার মনে আজ কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কারণ টামারসো সোলার কোম্পানি ফ্রিজার কিনেছে। ড্রাইভার এসে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত মাছ সেখানেই থাকে। আমি বাজারে পাঠিয়ে প্রতিটি মাছের জন্য ৩০ ডলার পাওয়ার আশা করছি।'

আফ্রিকার শৃঙ্গ বলে পরিচিত দেশ সোমালিয়ায় এমন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচি ইতিবাচক পরিবর্তনের মডেল হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে। বহুকাল সোমালিয়া ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র' হিসেবে পরিচিত ছিল। মোগাদিশু বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিফ ওসমান মনে করেন, ‘এটা একটা উন্নয়নশীল দেশ।

নিরাপত্তাহীনতা ও গৃহযুদ্ধ সামলে উঠছে। গোটা বছর সোমালিয়ায় রোদ থাকে। সেটা কাজে লাগানো প্রয়োজন। সোমালি বেসরকারি কোম্পানিগুলি ইতোমধ্যেই সৌরশক্তিতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।'

টামারসো নামের কোম্পানি বর্তমানে আবায় দাক্সানে এমনই এক প্রকল্প চালাচ্ছে। দশ কিলোওয়াট ক্ষমতার মিনি গ্রিড সোলার প্লান্ট সেই উদ্যোগের প্রাণকেন্দ্র। সেখানকার প্রায় ১৫০টি বাসার সবক'টি সেই উৎস থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জাওয়াহির মোহামেদ সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর করছেন। সেই প্লান্ট গ্রামে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এমনকি সূর্যের আলো না থাকলেও সেটা সম্ভব হচ্ছে।

জাওয়াহির জানান, ‘দিনের বেলা ব্যাটারি চার্জ হয় এবং কুলিং সিস্টেমের জন্য জ্বালানি দেয়। গ্রামের দোকান ও মৎসজীবীরা সেই সিস্টেমের ফলে উপকৃত হয়। রাতের বেলা ব্যাটারি ব্যবহার করে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।'

এখন পানি সংগ্রহের কাজও অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। এক ইলেকট্রিক পাম্প মূল ভূখণ্ডের কুয়া থেকে পাম্প করে পানি তুলে উপদ্বীপে এক ট্যাংকে জমা করে। ফলে পানি মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে।

কল খুললেই এখন পানি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সাত সদস্যের পরিবারের জন্য রান্না করতে আইয়ো আহমেদ ওসমানকে আর দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘এখন আমি কিছু বিশ্রাম পাচ্ছি। সৌরশক্তিচালিত পাম্পের কল্যাণে বাসায় কল থেকে পানি আসছে। আগে দূর থেকে পানি বয়ে আনতে হতো। এখন নির্মল পানি পান করতে পারি।'

আবায় দাক্সানের সৌর প্রকল্প গোটা অঞ্চলের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। কাছেই এক জায়গায় অন্য এক সৌরশক্তি চালিত গ্রিড ৩০০ বাসায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement