ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজলকে ছুটি নয়, তাকে ইতঃপূর্বে দেয়া বড় ধরনের কিছু ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সংস্থাটির বোর্ড অব গভর্নরস। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিজি বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলাজনিত কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। জরুরি মুহূর্তেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বোর্ড চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে নিতে হবে। অন্য দিকে ইফায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বপদে থাকা বা ছুটি নেয়ার বিষয়ে ডিজিকেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বোর্ড। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে সম্মানজনক সমাধানের অংশ হিসেবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সভাসূত্রে জানা গেছে।
গতকাল সচিবালয়ে সভাশেষে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও ইফা বোর্ডের চেয়ারম্যান শেখ মো: আব্দুল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি তো আছেন। যাবেন কোথায়? আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। সেখানে বর্তমানে যে অসম্মানজনক কাজ হচ্ছে সেটা আমরা চাই না। সেজন্য ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে বলেছি বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আপনি যেটা ভালো মনে করেন সে সিদ্ধান্ত নেবেন।
জানতে চাইলে বোর্ড অব গভর্নরসের অন্যতম সদস্য আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ডিজির ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রীর কাছ থেকে জানবেন। তবে আমি যদি বলি তাহলে বলতে পারি, উনার ওপরই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত নেয়ার। শনিবার বেলা ১১টা থেকে সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইফা বোর্ডের চেয়ারম্যান ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যোগ দেন ইফা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালও।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইফা বোর্ডের এটিই প্রথম সভা। সভার সব এজেন্ডা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বোর্ড সভার দুই নম্বর এজেন্ডা ছিল ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্ভূত পরিস্থিতির সম্মানজনক সমাধান।’
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই এজেন্ডা আলোচনার সময় ডিজির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয় এবং তার শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে তাকে পদত্যাগ অথবা ছুটিতে যেতে বলা হলে তিনি তাতে রাজি হননি। সভায় কিছুটা উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় বলেও জানা গেছে। এরপর সম্মানজনক সমাধানের বিষয়টিকে সামনে রেখেই বোর্ড বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদানের চিন্তা থেকে সরে আসে। এরপরই ডিজির ক্ষমতা খর্ব করে রেজুলেশন পাস করা হয় এবং ডিজিকে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ডিজিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই অসুস্থতার কারণে ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন কয়েকজন সদস্য।
মিছবাহুর রহমান চৌধুরীসহ অন্য বোর্ড সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ইফা ডিজিকে ১৯৭৬ সালে বোর্ডের একটি রেজুলেশনে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। তাতে জবাবদিহিতা ছিল না। এখন এটা বাতিল করা হয়েছে। নতুন রেজুলেশন পাস করা হয়েছে। এখন থেকে নিয়োগ বদলি, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলাজনিত যেকোনো নিতে সিদ্ধান্ত বোর্ড অব গভর্নরসের অনুমোদন লাগবে। এছাড়া ইমার্জেন্সি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলেও ডিজিকে বোর্ড চেয়ারম্যান অর্থাৎ ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর সাথে কথা বলে পরামর্শ করে নিতে হবে এবং পরে সেটিও বোর্ডে অনুমোদন করাতে হবে। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আগে ডিজি ও ফাইন্যান্স ডাইরেক্টরের স্বাক্ষরে পরিচালিত হতো। এখন থেকে ডিজি ও সচিবের স্বাক্ষরে পরিচালিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া ইফার মার্কেট ও মসজিদ বিভাগের পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদারের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড সেটিও অনুমোদন করেছে।
ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ইফা ডিজিকে গত ১০ জুন ধর্ম মন্ত্রণালয় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পরই ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ডিজি আগের শনিবার ছুটির দিনে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে অফিসে যান এবং কিছু ফাইল বাসার নেয়ার জন্য গাড়িতে ওঠান। পরে সচিব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কথা বলে ফাইলগুলো ফেরত আনেন। এরপর ডিজি তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং পরবর্তীতে স্বপদে বহাল থাকার কথা বলেন। এরপরই সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করলে ডিজি তিন দিনের ছুটি নেন। এরই মধ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি একটি সম্মানজনক সমাধানে পৌঁছার নির্দেশনা দেন। তারই আলোকে গতকালের বোর্ড অব গভর্নরসের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে বোর্ড সভা আহ্বান করায় এবং ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর আশ^াসে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত বৃহস্পতিবার তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের একটি পিলার একজন ব্যবসায়ী কর্তৃক তার নিজস্ব দোকানের সাথে একীভূত করে গায়েব করাকে কেন্দ্র করে মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালককে ডিজি বরখাস্ত করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরখাস্তের অভিযোগে ধর্ম মন্ত্রণালয় ডিজিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল। একই সাথে ওই কর্মকর্তার বরখাস্তের আদেশও বাতিল করেছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা