০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কষ্টের পরেই সুখ

-

রাহুল সাহেব একটি বিশাল কোম্পানির ম্যানেজার। তিনি একজন সৎ, নির্ভীক, পরিশ্রমী কর্মকর্তা। কোনো প্রকার অসৎ, অবৈধ কাজকে সমর্থন করেন না। তার অধীনে শতাধিক শ্রমিক সবসময় কাজ করে। তিনি তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করেন। কারণ তিনিও একজন অসহায় গরিবের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত কষ্ট ও পরিশ্রম করে বড় হয়েছেন। রাহুল সাহেব মা-বাবা, ভাইবোনসহ কুঁড়েঘরে থাকতেন। বাবা ছিলেন কৃষক। কখনো কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে আবার কখনো ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার ও সন্তানদের খরচ কোনোরকম চালাতেন। অধিকাংশ দিন না খেয়ে কাজে যেতেন। আর মা হলেন ক্ষুদ্র গৃহিণী। সন্তানদের লেখাপড়ার সরঞ্জামাদি ব্যবস্থা করার জন্য বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালতেন। রাহুল সাহেবরা দুই ভাই, এক বোন। বড় ভাই দু’চার ক্লাস পড়ে পড়াশোনা বাদ দেন। বাড়িতে টুকটাক কিছু কাজকর্ম করেন। আর ছোট বোন পড়াশোনা করে। রাহুল সাহেব হলেন মা-বাবার ছোট সন্তান। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রখর মেধাবী, তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রত্যেক ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। এভাবেই তাদের কষ্টের দিন কাটতে থাকে। কিন্তু রাহুল সাহেব যখন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তখন থেকেই পরিবারে নেমে আসে অভাব-অনটনের ঢল। কথায় আছে, ক্ষত জায়গাতেই বারবার আঘাত লাগে। একে তো অভাবী সংসার, তারপর বিপদ। আয়ের উৎস ছিল বাবার ভ্যান চালানোর ওপর। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ ভ্যান চালানোর ফলে রাহুল সাহেবের বাবার পায়ের হাড় ক্ষয় হয়ে যায়। আর এ কারণে সংসারের আয়ও হ্র্রাস পেতে থাকে। কারণ তার বাবা যে টাকা আয় করেন তার বেশির ভাগ ব্যয় করেন চিকিৎসা খাতে। অপারগ হয়ে সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব এসে পড়ে রাহুল সাহেবের বড় ভাইয়ের ওপর। এমতাবস্থায় রাহুল সাহেবের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু রাহুল সাহেব দমবার পাত্র নন এবং তার মা-ও ছিলেন সন্তানকে লেখাপড়া করানোর জন্য খুব আগ্রহী। তাই সে হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে রাহুল সাহেবের হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলতেন, বাবা! মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হও। রাহুল সাহেবও ছিলেন জ্ঞানপিপাসু। পড়াশোনা ছাড়তে কখনোই সম্মত হননি। মায়ের দেয়া খুচরা টাকা টিফিন খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অল্প অল্প করে জমা রাখতেন। তিনি নিজের জন্য নতুন পোশাক পর্যন্ত কিনতেন না, পুরনো পোশাকই পরতেন। যখন প্রয়োজন হতো তখন ওই জমাকৃত টাকা লেখাপড়ার কাজে ব্যয় করতেন। আজেবাজে কোনো জায়গায় খরচ করতেন না। সর্বদা একটি কথাই স্মরণ রাখতেন, ব্যর্থতার অনেক পথ আছে, তবে সফলতার উপায় একটিই- সেটি হলো অটল থাকা।


আরো সংবাদ



premium cement