৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বুদ্ধির জয়

-

অনেক অনেক দিন আগের কথা, এক দেশে ছিল এক রাজা। তিনি তার রাজ্যে নিয়ম জারি করলেন যে, রাতের বেলা অযথা রাস্তাঘাটে ঘুরাফেরা করা সম্পূর্ণ নিষেধ এবং পুলিশবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন, রাতের বেলা কাউকে চলাফেরা করতে দেখলে তাকে শির-েদ করতে। ঘটনাক্রমে এক রাতে পাহারাদার পুলিশ তিন যুবককে হেলেদুলে চলতে দেখে তাদের ঘিরে ফেলল এবং কঠোরভাবে জবাবদিহিতা শুরু করল যে, তোমরা কারা যে রাজার নির্দেশ অমান্য করে রাতের বেলা আনন্দচিত্তে চলাফেরা করছ? তখন তিন যুবক মনে মনে চিন্তা করতে লাগল, আমাদের বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। আমরা যদি আসল পরিচয় দেই তাহলে আরো সমস্যা। হঠাৎ তাদের মাথায় চমৎকার একটি বুদ্ধি এলো যে, আমরা আসল পরিচয়ই দেবো তবে আমাদের বাচনভঙ্গি হবে ভিন্নরূপ। যেই কথা সেই কাজ। পুলিশ সদস্য একজনকে জিজ্ঞেস করল, এই যুবক তুমি কে ও পরিচয় কী? তখন যুবক বলল, আমি এমন ব্যক্তির ছেলে যার সম্মুখে রাজা-প্রজা সবার গর্দান নত হয়ে যায়। সবাই নতশিরে আমার কাছে আগমন করে। শুধু তা-ই নয়, আমি যেমনটি করতে বলি তেমনটিই করে। অতঃপর যাওয়ার সময় আমাকে সম্পদও দিয়ে যায়। তখন পুলিশ সদস্য ভাবতে লাগল, সম্ভবত সে রাজার ঘনিষ্ঠ কেউ হবে এবং তাকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকল। এবার দ্বিতীয় জনকে লক্ষ করে বলল, তুমি কে? তৎক্ষণাৎ যুবক জবাব দিলো যে, আমি সেই ব্যক্তির সন্তান, যার পাতিল কখনো চুলা থেকে নামে না। কোনো সময় যদিও নামে তাহলে অতিদ্রুত আবার চুলায় ফিরে যায়। যুবকটি পুলিশকে লক্ষ করে আরো বলল, আপনি অতি আগ্রহের সাথে ওই আগুনের পাশে কাউকে দাঁড়িয়ে আবার কাউকে বসা অবস্থায় দেখতে পাবেন। তখন পুলিশ এই যুবকের মৃত্যুদণ্ডও স্থগিত রাখল। এটি ভেবে যে, সম্ভবত এই যুবকও কোনো সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান হবে। তাই তৃতীয় যুবককে জিজ্ঞাস করল, এই যুবক তুমি কার কে? তখন সেও বলিষ্ঠ কণ্ঠে জবাব দিলো যে, আমিও এমন ব্যক্তির ছেলে, যে বীরত্বের সাথে শত্রুদলের মধ্যে প্রবেশ করে এবং তরবারি দিয়ে তাদের উত্তম শিক্ষা দেয়। আর রণাঙ্গন থেকে যখন অশ্ব পলায়ন করে, তখনো তার পদযুগল পাদানি থেকে সামান্য বিচ্যুত হয় না। পুলিশ এই যুবকেরও হত্যা করা থেকে বিরত থাকল। এটা ভেবে যে, হয়তো এই যুবক ও কোনো সেনাপতির সন্তান হবে এবং তাদেরকে সারা রাত নিজেদের কাছে রাখে। আর সকাল হতেই রাজদরবারে তিন যুবকের ব্যাপারে পয়গাম পাঠায়। রাজা তাদেরকে আদেশ দিলেন, যেন ওই তিন যুবককে রাজদরবারে উপস্থিত করা হয়? পুলিশ সদস্যরা রাজার আদেশ পেয়ে তাদেরকে উপস্থিত করল। রাজা সব মন্ত্রী ও বুদ্ধিজীবীর সামনে তাদের ঘটনা তদন্তের পর নিশ্চিতভাবে জানতে পারলেন, প্রথমজন হলো নাপিতের ছেলে, দ্বিতীয়জন বাবুর্চির ছেলে ও তৃতীয়জন তাঁতির ছেলে।
তখন রাজা তিন যুবকের বর্ণনাভঙ্গির ওপর মুগ্ধ হয়ে তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্ত করলেন এবং পুরস্কৃত করলেন।


আরো সংবাদ



premium cement