২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একটি দুপুর ও দীর্ঘশ্বাস

-

পূবালী ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পরপরই ঘটল ঘটনাটা। তুয়ার ১০ হাজার টাকাসহ পার্স নিমেষেই গায়েব। আরো গেল ভাংতি কিছু টাকা, একটা মোবাইল ফোন আর প্রয়োজনীয় কাগজ। সব গেল, সব কিছু হারাল। কিভাবে কী হলো টেরই পেল না। ব্যাংক থেকে টাকাটা উঠিয়ে বাইরে আসামাত্রই...। এসব অঘটন ঘটনা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে। হাত-পা কাঁপছে।
পাশেই ফাস্টফুডের একটি দোকান। সেখানে একটা টেবিলে এসে বসল সে। দোকানের ছেলেটি এসে জানতে চাইল কিছু নেবে কি না। সে না-সূচক মাথা নাড়ল। তুয়ার এরকম লাগছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। কিছুক্ষণ বসে কেটে যাওয়ার পর ছেলেটিকে সে ডাকল। নিঃসঙ্কোচে বলল, আপনার মোবাইল ফোনটা একটু দেবেন? বাড়িতে ফোন দেব। আমার টাকা মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। ছেলেটি তুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বিনয়ের সাথে পকেট থেকে বের করে দিলো। ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার টিপতে গিয়ে তুয়া থমকে গেল। কারোর নম্বরই মুখস্থ নেই। কোনো দিন মুখস্থ রাখার প্রয়োজনবোধ করেনি। এখন চরম এ বিপদে বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলা দরকার। অথচ কোনো নম্বরই জানা নেই। দোকানের ছেলেটিকে ডেকে মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে উঠে দাঁড়াল। আশ্বিন মাস। গরম যাচ্ছে। আকাশে গুমোট মেঘ। এর পরও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। রোদ আর মেঘ কিছুক্ষণ পরপরই জায়গা বদলাচ্ছে। আপনজনের ফোন নম্বর কেন মুখস্থ রাখা উচিত সেটি তুয়া আজ খুব বুঝতে পারল। এখন কী করবে? শহরে সে এসেছিল জবের সন্ধানে। গ্রাম থেকে শহরে আসতে চার ঘণ্টা লাগে। বাবা ভোরবেলায় বাসে তুলে দিয়েছিল। সকাল ১০টায় বাস থেকে নেমে একটা সিএনজি করে অফিসে পৌঁছায়। ভাইভা দিয়ে অফিসের সামনে বেরোয় কিছু খাবার জন্য। ভাইভা হতে একটা বেজে গিয়েছিল। খিদে ছিল প্রচণ্ড। বেশিদূর যাওয়া যাবে না। আবার তিনটায় অফিসে আসতে হবে জব হয়েছে কি না জানার জন্য। জব হলে দশ হাজার টাকা জামানত রাখতে হবে। বাবার দেয়া চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে প্রস্তুত হচ্ছিল। ব্যাংক থেকে কিছু দূরে খাবার হোটেল। হেঁটে সেখানে যাওয়ার পথেই ঘটল ঘটনাটা। অফিসে আর যাওয়া হবে না। কারণ জব হলে টাকা দিতে পারবে না। ফাস্টফুড থেকে বেরিয়ে তুয়া এসব ভাবতে থাকে। এখন কোথায় যাবে, কী করবে। বাড়ি যাওয়ার জন্য একটা টাকাও কাছে নেই। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে গিয়ে একটি গাড়ি সামনে এসে পড়ল। ভাগ্যিস চালক সময়মতো ব্রেক কষে থামিয়ে পাগল-ছাগল মেয়ে বলে পাশ কেটে বেরিয়ে গেল। তুয়া অবাক হয়ে যায় এ কেমন আচরণ? আবার হাঁটতে থাকে আর কিভাবে বাড়ি পৌঁছাবে তাই ভাবতে থাকে। এ শহরে তার চেনাজানা আপনজনরা থাকেন। কিন্তু তাদের বাড়িতে আগে কোনো দিন যায়নি। কে কোথায় থাকে বলতে পারবে না। অনেকক্ষণ হাঁটছিল তুয়া। শরীর দুর্বল লাগছে। সেই সকালে দুটো কলা আর পাউরুটি খেয়েছে। আর তো খাওয়া হলো না। এই ভরদুপুরে তুয়া হাঁটতে হাঁটতে অফিসের সীমানা ছেড়ে অনেক দূরে চলে এলো। হঠাৎ মাথা ঘোরা শুরু হলো। চোখে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। মাথা ঘুরে পড়ে গেল মাটিতে।
রাত ১০টায় তুয়ার জ্ঞান ফেরে। চোখ মেলে দেখে সে হাসপাতালে। বেডের পাশে বাবা চিন্তিত মুখে বসে আছেন। তুয়া বলল, আমাকে মাফ করে দাও বাবা। আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। আমার সব কিছু ছিনতাই হয়েছে।
বলেই কান্না শুরু করল। বাবা বললেন, কাঁদিস না মা। চাকরি হয়নি তো কী হইছে? তোকে ফিরে পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ।
বাবা আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো। এ শহরে এক মুহূর্ত থাকব না।
যাবি। আজকের রাতটা তো থাকতেই হবে। সকাল হলেই আমরা চলে যাবো।
জানালার বাইরে জোছনার নরম কোমল আলো। সে দিকে তাকিয়ে তুয়ার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যেন ছড়িয়ে দিল অচেনা শহরের ওপর।


আরো সংবাদ



premium cement