২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা

-

বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিন দিন অনলাইনে কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্যমতে বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধনকৃত এক হাজারের বেশি অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে। এসব সাইটের মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ হাজারেরও অধিক পণ্য ডেলিভারি হয়ে থাকে। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে। এ সুযোগে স্বার্থান্বেষী একটি চক্র গ্রাহকদের সাথে করছে প্রতারণা। অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন আর লোভনীয় অফার দেখে অনেক সাধারণ গ্রাহক পণ্য কিনে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে চাহিদা অনুযায়ী কাক্সিক্ষত পণ্য সরবরাহ না করা এবং করলেও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করার ঘটনা এখন প্রতিনিয়তই ঘটে চলছে।
করোনা দুর্যোগকালে এ প্রতারণা আরো বেড়ে গেছে। করোনা প্রকোপ ঠেকাতে মানুষ যখন লকডাউন হয়ে গৃহবন্দী হয়ে আছে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা পছন্দের পণ্যটি যখন মার্কেটে গিয়ে কেনা সম্ভব হচ্ছে নাÑ তখন মানুষ অধিকার হারে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে অনলাইন কেনাকাটায়। পছন্দের জিনিসটি অর্ডার করছেন অনলাইনে। কিন্তু মানুষের এই চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসার নামে প্রতারণার জাল বুনছে একশ্রেণীর প্রতারক। যে পণ্যটি অর্ডার করা হয়েছে কাক্সিক্ষত সে পণ্যটি না দিয়ে নিম্নমানের বা অর্ডারকৃত ওই পণ্যের সাথে সামঞ্জস্যহীন আরেকটি পণ্য দিচ্ছে। এখন ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমেও কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই পেজ খুলে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু নির্ভরযোগ্য সাইট নিয়েই প্রশ্ন!
অনলাইন পণ্য কিনে প্রতারিত হলে নির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে দেশের ভোক্তা অধিকার আইনে অভিযোগ করা যেতে পারে। কিন্তু প্রচার না থাকায় সে আইনের প্রক্রিয়া, নিয়মকানুন সম্পর্কে দেশের সব ক্রেতা জানেন না। এ জন্য জনগণকে পণ্য কেনাকাটায় সচেতন করতে, ভোক্তা অধিকার আইনের প্রচার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা ছাড়া অনলাইনে পণ্য কেনাকাটায় প্রথমেই যেটি প্রয়োজন তা হলো ‘সচেতনতা’। কোনো আকর্ষণীয় বা লোভনীয় বিজ্ঞাপন বা অফার দেখেই হুট করে অর্ডার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা ও মালিকের নাম-ঠিকানায় অসামঞ্জস্য আছে কি না ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখতে হবে। অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠানও ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। ওয়েবসাইটে ট্রেড লাইসেন্সের কপি আছে কি না দেখতে হবে, যদি না থাকে তা হলে ট্রেড লাইসেন্স করা আছে কি না এবং থাকলে তার নিবন্ধন নম্বর কত তা জেনে নিতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের কিউআর (ছজ) কোড স্ক্যান করে দেখতে হবে। কোনো বিকাশ নম্বরে মূল্য পরিশোধ করতে বললে নম্বরটি একাধিক নম্বর থেকে ফোন করে যাচাই করে নিতে হবে। আর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য দিতে বললে নির্দিষ্টভাবে পণ্য সরবরাহ যেন করা হয় এবং কেনার রসিদ দেয়া হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান, ভেরিফাইড পেইজ, মানুষের রিভিউ দেখে নিজের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সব বিচার বিশ্লেষণ করে তার পর পণ্য অর্ডার করতে হবে। যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে আগে পণ্য সরবরাহ করে এবং নির্দিষ্ট পণ্য হাতে পাওয়ার পর বিক্রয় প্রতিনিধিকে সরাসরি মূল্য পরিশোধ করা যায় এমন ওয়েবসাইট, পেইজগুলো থেকে পণ্য অর্ডার করতে হবে।
যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পণ্য কেনাকাটায় মানুষকে রীতিমতো প্রতারিত করছে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের চিহ্নিত করে দেশের প্রচলিত আইনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো দেশের মানুষের অনলাইনে কেনাকাটায়, ই-কমার্সের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। হ
লেখক : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
emranemon4321@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement