০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বৃদ্ধাশ্রম নয়, আনন্দের আশ্রয় গড়তে হবে

-

অসহায় প্রবীণদের প্রতি সম্মান দেখাতে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সভায় আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি বছর ১ অক্টোবর পালন করা হয় প্রবীণ দিবস। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে প্রবীণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রবীণের সংখ্যা ছিল ৫০ কোটি। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১০ কোটিতে। ২০৩০ সালে এ সংখ্যা হবে ১৫০ কোটি এবং ২০৫০ সালে ২০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রবীণের সংখ্যা এক কোটি ৫০ লাখের মতো। ২০২৫ সালে প্রবীণদের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটি। ২০৫০ সালে হবে প্রায় সাড়ে চার কোটি এবং ২০৬১ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ছয় কোটিতে। প্রবীণের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এর ফলে একসময় শিশুর চেয়ে প্রবীণের সংখ্যাই হবে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচর্যাহীন বার্ধক্যই দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে যাচ্ছে। বেসরকারি এক জরিপে জানা গেছে, বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ প্রবীণ অসুস্থ, অসহায়, অবহেলিত, নিঃসঙ্গ ও সেবাহীন দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমান সমাজে সবচেয়ে অবহেলার শিকার অসহায় প্রবীণরা। কিন্তু ক্রমবর্ধমান বার্ধক্যের অসহায়ত্ব মোকাবেলা করার মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আমাদের নেই। এ কারণে এখন থেকে প্রবীণদের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হাতে নেয়া সময়ের দাবি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাবে দেশে বৃদ্ধ বাবা-মা কত যে অসহায় জীবন যাপন করছেন, বাইরে থেকে তা বোঝা দুষ্কর। অনেক সময় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাড়ি পাহারা, সন্তান দেখাশোনা, বাজার করানো, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, ধমক দিয়ে কথা বলা, অপমানজনক আচরণ করা, চিকিৎসা না করানো, আলাদা রাখা, এমনকি শেষ সম্বল পেনশনের টাকা, জায়গা-জমি বাড়ি পর্যন্ত জোর করে লিখে নেয়ায় মতো ঘটনা ঘটছে। সন্তান ও পুত্রবধূর হাতে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। আর মাদকাসক্ত ছেলেমেয়ে, বাবা-মাকে হত্যা পর্যন্ত করছে। বাবা-মাকে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে নিয়মিত স্বামী-স্ত্রী কর্মস্থলে চলে যায়, এই দৃশ্য এখন ডাল-ভাত। কক্ষে একা আটকা রেখে পাঁচ-সাত দিনের জন্য সন্তানদের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিবারের সব সদস্য অংশ নিলেও বৃদ্ধ বাবা-মাকে ঝামেলা মনে করে সাথে নিতে চায় না অনেকে। বহু প্রবীণের থাকার জায়গাও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সন্তানের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন অজুহাতে অসুস্থ বাবা-মায়ের খোঁজ পর্যন্ত নিতে চায় না অনেকে। তা ছাড়া অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্র্যের কারণেও বাবা-মায়ের যতœ নিতে পারে না। বাবা-মা তাদের এ কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেন না।
অসহায় প্রবীণদের কল্যাণের বিষয়ে এখনই আমাদের উদ্যোগী হওয়া অতীব জরুরি। কেননা বার্ধক্য হচ্ছে মানুষের অবধারিত সমস্যা। আজকের নবীনই আগামী দিনের প্রবীণ। তাই শ্রদ্ধার সাথে প্রবীণদের দেখাশোনা করতে হবে। এখন থেকেই নিজেদের স্বস্তিময় বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিতে হবে। দয়া বা করুণার দৃষ্টিতে নয়, মানবাধিকারের ভিত্তিতে এবং প্রাপ্য মর্যাদার যুক্তিতে প্রবীণদের চাওয়া-পাওয়ার সমাধান করা প্রয়োজন। এর জন্য দরকার গণসচেতনতা। গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবীণদের অবহেলা, অযতœ, দুর্ব্যবহার, নির্যাতনের ঘটনা এবং সবার করণীয় বিষয়গুলো পাঠ্যসূচিতে এবং গণমাধ্যম কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে প্রবীণদের প্রতি কিছুটা হলেও সম্মান দেখানো হবে।
বার্ধক্যপীড়িত প্রবীণের প্রতি যতœবান হওয়া ও সহানুভূতিশীল থাকা খোদার বিধান। শুদ্ধাচার ও শিষ্টাচার মানব জীবনের অলঙ্কার। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন, “বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধ্যকে উপনীত হলে তাদের ‘উহ্’ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না; তাদের প্রতি সম্মান দিয়ে কথা বলো। মমতাবশে তাদের সামনে বিনয়ী ব্যবহার করো এবং বলো, হে আমার প্রতিপালক আমার বাবা-মায়ের প্রতি দয়া করো; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।” (সূরা ১৭, আয়াত : ২৩-২৪)।
যে প্রবীণ যৌবনে তার মেধা, মনন, দক্ষতা দিয়ে সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন; জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে সন্তানদের লালন-পালন করেছেন; মানবকল্যাণে অবদান রেখেছেন; বৃদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে সেই মানুষটি অযতœ-অবহেলার আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হন।
অনেক বাবা-মায়ের পুত্রসন্তান না থাকায় মেয়ের বাড়িতে থাকতে পছন্দ করেন না। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটাই উপায়; কষ্টের বৃদ্ধাশ্রম নয়, প্রত্যেক উপজেলায় আনন্দের সাথে বসবাস করার জন্য ‘আনন্দ আশ্রয়’ গড়ে তুলতে হবে। যেখানে স্বেচ্ছায় প্রবীণরা থাকতে চাইবেন।
প্রত্যেক উপজেলা শহরের কাছাকাছি কমপক্ষে পাঁচ একর জমির ওপরে এ ‘আনন্দ আশ্রয়’ গড়ে তুলতে হবে। আনন্দ আশ্রয়ে থাকবে প্রবীণদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, থাকবে ভালো নার্সিং ব্যবস্থা, থাকবে ভালো মানের খাবার, বিনোদন, থাকবে প্রার্থনার জন্য মসজিদ, মন্দির, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার ইত্যাদি। থাকবে ভালো আবাসন। এখানে যেকোনো প্রবীণ স্বেচ্ছায় থাকতে পারবেন। যাদের দেখার কেউ নেই, স্বামী-স্ত্রী একসাথে বা একা থাকতে পারবেন। ধনীরা ভাড়া বা খরচ দিয়ে থাকতে পারবেন। একই বয়সে অনেকে একসাথে থাকার কারণে প্রবীণরা আনন্দে থাকতে পারবেন। এতে সন্তান, আপনজন দেশ-বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন বাবা-মা ভালো আছেন ভেবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। প্রয়োজনে সন্তান, আপনজন বিদেশ থেকে এসে কিছু দিন আনন্দ আশ্রয়ে বাবা-মাকে সঙ্গ দিতে পারবেন। গরিব অসহায় প্রবীণরা সরকারি খরচে থাকবেন। প্রয়োজন হলে স্বেচ্ছায় কিছু দিন বাড়িতে, কিছু দিন ‘আনন্দ আশ্রয়ে’ থাকতে পারবেন। অসহায় প্রবীণদের বিষয়টি জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে, জনসচেতনতা ও প্রচারের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ‘আনন্দ আশ্রয়’ গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক


আরো সংবাদ



premium cement
দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক শিরীন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, তারপরও লোডশেডিং বড় চমক ছাড়াই প্রস্তুত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল দোয়ারাবাজারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, আটক ১ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের দাবি সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির ২ প্রার্থী নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৮৫ দিন : শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা আবাহনীর ২২তম শিরোপা

সকল