২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন?

লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? - ছবি : ডয়চে ভেলে

এবার ঈদের ছুটির সাথে যোগ হচ্ছে বাংলা নববর্ষের ছুটি। এর সাথে সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে লম্বা ছুটির মধ্যে পড়ছে বাংলাদেশ। তাই অন্যবারের তুলনায় এবার বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শুধু ঈদে গ্রামের বাড়িই নয়, অনেকে বিনোদনের জন্যও ঢাকা ছাড়বেন। দেশের বাইরেও যাবেন কেউ কেউ।

লম্বা ছুটির হিসাব
বাংলাদেশে ১২ মার্চ রোজা শুরু হয়েছে। ঈদের সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা আছে ১০, ১১ এবং ১২ এপ্রিল। ২৯ রোজা হলে ১০ এপ্রিল হবে ঈদ। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঈদের আগেই ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি করবে, যার প্রস্তাব এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে।

ঈদে যারা বাড়ি যাবেন তাদের কথা চিন্তুা করে ছুটির সময় বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। কারণ রোজা ২৯টি হলে ওই দিন বাড়ি রওয়ানা হয়ে পরের দিন ঈদ করা কষ্টের। আবার ১২ এপ্রিল শুক্রবার এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটি। সরকার তা বিবেচনা করলে ৯ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরুর সম্ভাবনা আছে। বিভিন্ন পর্যায় থেকেও এমন দাবি আছে। তবে এর বাইরেও নানা হিসাবে ঈদে এবার লম্বা ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে বলতে গেলে টানা ১০ দিন ছুটি পাবেন তারা।

ঈদের আগে শবে কদর আর পরে পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল এই ১০ দিনের মধ্যে অফিস খোলা থাকবে মাত্র ৮ এপ্রিল। ৫ ও ৬ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ এপ্রিল শবে কদর সরকারি ছুটি। ৮ এপ্রিল একদিন অফিস খোলা। একদিন বাড়লে ৯ থেকে ১২ এপ্রিল চার দিন ঈদের ছুটি। আবার ১২ ও ১৩ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ১৪ এপ্রিল রোববার বাংলা নববর্ষের সরকারি ছুটি।

ঢাকার অনেকেই বিশেষ করে যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের মধ্যে এবার তাই ঈদের ছুটিতে ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগ্রহ বেশি। সবাই যে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তা নয়। কেউ কেউ সপরিবারে ঘুরতেও যাবেন। সরকারি চাকরিজীবী শাহ আলম বলেন, ‘এবার ইচ্ছা আছে ঈদটা উপভোগ করার। গ্রামের বাড়ি যাওয়া ছাড়াও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে রাঙামাটি যাওয়ার ইচ্ছ আছে।’

পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে অগ্রিম বুকিং
ঈদে কক্সবাজার, রাঙামাটি, সাজেক, কুয়াকাটসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে এবার ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাজেকের রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জেরি লুসাই ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ঈদের তিন দিন এবং পরের দুইদিন বুকিং বেশি। রিসোর্ট এবং কটেজের প্রায় ৮০ ভাগ এরইমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। গত ঈদের চেয়ে এবার বুকিং বেশি। কারণ ছুটি বেশি। আমরাও বেশি গেস্ট আশা করছি। শেষ পর্যন্ত আগ্রহী সবাইকে আমরা হয়ত সিট দিতে পারব না।’

তিনি জানান, ‘আমাদের এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২০টি রিসোর্ট ও কটেজ আছে। মোট তিন হাজারের মতো গেস্টকে আমরা আবাসন সুবিধা দিতে পারি।’

কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘আমরা এবার বেশি গেস্ট আশা করছি। এরইমধ্যে আগাম বুকিং শুরু হয়ে গেছে। অনেকে অপেক্ষা করছেন ঈদের ছুটি বাড়ে কিনা। ঈদের দিনেই আমাদের বুকিংয়ের চাপ বেশি। ঈদের পরেও চাপ আছে। আর দুই-একদিন পর কতটা চাপ হয় তা বোঝা যাবে।’

তিনি জানান, কক্সবাজারে ১০০-এর বেশি হোটেল আছে। সবমিলিয়ে পাঁচ হাজারের মতো কক্ষ আছে।

রাঙামাটি পর্যটন মোটেলের নাঈমুল ইসলাম জানান,‘ঈদের তিন দিনের জন্য আমাদের এখনো কিছু রুম খালি আছে। কিন্তু ঈদের পরের তিন দিনের বুকিং প্রায় শেষ। মাত্র কয়েকটি রুম বাকি আছে।’

ঢাকার আশপাশের রিসোর্টগুলোতেও এই ছুটিতে অনেকেই যাচ্ছেন। গাজীপুরের বেশ কয়েকটি রিসোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ঈদের পরে দুইদিন বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ তারিখে চাপ বেশি। সারা রিসোর্টের এমদাদ হোসেন জানান,‘ঈদের পরের তিন দিন দিনের ৮০ ভাগ রুম এবং কটেজই ভাড়া হয়ে গেছে।’

যানবাহনে চাপ
২৪ মার্চ থেকে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার ঈদে অতিরিক্ত আট জোড়া ট্রেন দেয়া হয়েছে। বাসেও দেয়া হচ্ছে অগ্রিম টিকিট।

আকাশপথেও চাপ আছে। ইউএস বাংলার ম্যানেজার কামরুল ইসলাম জানান, তাদের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ঈদের দিন এবং ঈদের পরের তিন দিন চাপ বেশি। প্রায় সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ঈদের আগেও এবার চাপ বেশি। লম্বা ছুটির কারণে অনেকেই ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, ‘ঈদের দিন কক্সবাজারের সব ফ্লাইটের বুকিংই শেষ।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এবার ঈদে দেশের বাইরে যাওয়ার সংখ্যাও কম না। এর মধ্যে বড় অংশটি যাচ্ছেন কলকাতা ও থাইল্যান্ড।

ঈদে কত মানুষ ঢাকা ছাড়বেন?
গত ঈদে মেবাইল ফোনের সিমের হিসাবে ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৩২ জন মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। তবে এটি প্রকৃত হিসাব নয়। কারণ সিমপ্রতি একজন হিসাব করা হয়েছে। আবার শিশুসহ যারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না তারা এই হিসাবের মধ্যে নাই।

নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘নানা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমাদের ধারণা ঈদে ৪০-৫০ ভাগ মানুষ ঢাকার বাইরে চলে যান। আর এবার ছুটি লম্বা হওয়ায় এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে মনে হয়।’

সবশেষ জনশুমারিতে ঢাকার জনসংখ্যা বলা হয়েছে এক কোটি দুই লাখ ৭৮ হাজার। তবে ২০২৩ সালের জুনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সংসদে ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটি ১০ লাখ বলে উল্লেখ করেন। আর নগর বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটির বেশি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিবেচনায় এবার ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঢাকার বাইরে যাবেন। এরমধ্যে রাজধানী থেকেই ঢাকা ছাড়বেন এক কোটি মানুষ। এবার লম্বা ছুটি এবং সাথে বাংলা নববর্ষ থাকায় মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মের মানুষও ঢাকার বাইরে যাবেন। গত বছর ঈদে আমাদের হিসাবে রাজধানী এবং আশপাশে এলাকা থেকে এক কোটি ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে।’

আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকা শহরে যারা থাকেন তাদের ৭৫-৮০ ভাগের মূল গ্রামে। আর যারা এখানে আছেন তাদের ৮০ ভাগের এই শহরে কোনো নিজস্ব বাড়ি ঘর নেই। ফলে প্রাণের টানে, নাড়ির টানে মানুষ একটু বড় ছুটি পেলেই গ্রামে চলে যায়। সেখানে তারা স্বজনদের সাথে মিলিত হয়।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement