২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুলারের রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড়

- ছবি : ভিডিও থেকে নেয়া

রবার্ট মুলারের বহুল প্রতীক্ষিত তদন্ত রিপোর্টে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রমাণ মিলেছে। ২৩ মাসের তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয় রিপোর্টটি। মুলারের অনুসন্ধান অনুযায়ী, মার্কিন নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে লাভবান হতে চেয়েছিল রাশিয়া। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, এ উদ্দেশ্য সফল করতে রুশ গোয়েন্দারা তৎপর ছিলেন। তবে রাশিয়া মুলারের এ রিপোর্ট নাকচ করে দিয়েছে।

২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনে রুশ সংযোগের বিষয়টি অনেকদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। নির্বাচনকে প্রভাবিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতাতে মস্কো প্রপাগান্ডা ছড়িয়েছিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে আশঙ্কা করছিল মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। সংস্থাটির পরিচালকের পদ থেকে জেমস কোমিকে বরখাস্তের পর এই তদন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে মোড় নেয়। ২০১৭ সালের মে মাসে এ সংক্রান্ত তদন্তের দায়িত্ব পান সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলার। মার্চে দেশটির আইনমন্ত্রীর কাছে তদন্ত রিপোর্টটি জমা দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার প্রায় সাড়ে ৪০০ পৃষ্ঠার মুলারের রিপোর্ট জনসম্মুখে আনা হয়। রিপোর্টটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রথমভাগে রয়েছে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত আলোচনা। এ সম্পর্কে রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সে দেশের গোয়েন্দারা মার্কিন নির্বাচন প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে ট্রাম্পকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত ছিল ক্রেমলিন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, রুশ উদ্দেশ্য সফল করতে ট্রাম্পের প্রচারণা দলের সাথে বৈঠকের পাশাপাশি তাদের ট্রাম্প-পুতিন কথোপকথন, দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন, রুশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়। উইকিলিকস কর্তৃক হিলারি ক্লিন্টন ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেইল ফাঁসেও রাশিয়ার সংযোগ পেয়েছেন মুলার।

মুলারকে বরখাস্তের চেষ্টা ট্রাম্পের
রবার্ট মুলারের তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা হারাতে পারেন আশঙ্কায় তিনি তদন্ত বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি মুলারকে বরখাস্ত করারও পরিকল্পনা ছিল তার। এ দীর্ঘ রিপোর্টে এমন অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৭ সালের মে মাসে এ সংক্রান্ত তদন্তের দায়িত্ব পান সাবেক এফবিআই পরিচালক রবার্ট মুলার। রিপোর্টে বলা হয়, ট্রাম্প মুলারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ‘রিপোর্টটি বাধাগ্রস্ত করার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। কারণ, তার চারপাশের সবাই তার এই নির্দেশ কিংবা অনুরোধ মানতে রাজি ছিলেন না।

বিচার বাধাগ্রস্তের ১১ চেষ্টা
রিপোর্ট অনুযায়ী বিচার বাধাগ্রস্ত করার আরো যেসব চেষ্টা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ট্রাম্পের নির্দেশে সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির বরখাস্ত, মুলারের তদন্তের পর্যালোচনা ছিনিয়ে নিতে ট্রাম্পের চেষ্টা।

মুলারকে যে ট্রাম্প বরখাস্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তা অস্বীকার করতে হোয়াইট হাউজের কাউন্সেল ডোনাল্ড ম্যাঘানের প্রতি ট্রাম্পের নির্দেশ এবং মাইকেল ফ্লিন, পল মানাফোর্ট ও মাইকেল কোহেনসহ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত সহযোগীদের প্রতি ট্রাম্পের আচরণ।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রচারণা শিবির বারবারই বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ ধরনের ১১টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টটিতে। সেই সাথে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে একে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে কংগ্রেসের প্রতি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের রুশ সংযোগ
মুলারের তদন্ত রিপোর্টে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রমাণ মিললেও ট্রাম্প ও তার প্রচারণা শিবিরের সাথে ক্রেমলিনের কোনো ‘অপরাধমূলক’ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মেলেনি। মুলারের অনুসন্ধান অনুযায়ী, মার্কিন নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করতে পুতিন সরকার তৎপর ছিল। তবে তাদের নির্বাচনী হস্তক্ষেপের আকাক্সক্ষার সাথে ট্রাম্প শিবিরের ষড়যন্ত্র বা সমন্বয়মূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মুলার তার রিপোর্টের উপসংহারে বলেছেন, ট্রাম্পকে অপরাধী প্রমাণের মতো তথ্য তাদের কাছে নেই। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিরাপরাধ বলে দায়মুক্তি দেননি তিনি। বলেছেন, ট্রাম্প অপরাধ করেছেন কি না- তা বলা কঠিন। কংগ্রেস চাইলে এ নিয়ে নতুন করে তদন্ত করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement