২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হবিগঞ্জ কারাগারে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি হাজতী

-

হবিগঞ্জ কারাগারে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি কয়েদি রয়েছে। ৫৬০ জন হাজতী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হবিগঞ্জ কারাগারে গতকাল সোমবার বিকাল পর্যন্ত কারাবন্দীর সংখ্যা ছিল ১৩২৯ জন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী ১৬৮ জন এবং সাধারণ হাজতী ১১৬১ জন। এর মধ্যে সোমবার সন্ধ্যা থেকে সারা জেলায় বিএনপি যুবদল ছাত্রদলের শীর্ষ ১৮ নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মামলায় সাধারণ অপরাধী গ্রেফতার হয়েছেন আরো অন্তত ৫০ জন।

একমাস আগেও ৮শ’ থেকে ৯শ কারাবন্দী ছিল হবিগঞ্জ কারাগারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর হঠাৎ করে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তা প্রতিদিনই বাড়ছে। কিছু কিছু মামলায় আদালত থেকে জামিন হলেও বের হতে পারছেন না রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কোনো আসামি।

জেল গেইট থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তিন থেকে পাঁচটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এমন আসামির সংখ্যা অনেক। কোনো আসামি আবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এলে জেল গেইট থেকে আটকের পর তার মামলার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়।

একটি মামলায় জামিন লাভের পর জেলা যুবদল নেতা অ্যাডভোকেট গুলজার খান ও অ্যাডভোকেট অলিউর রহমানকে অন্তত তিনটি নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়েছে। দুটি শ্যোন এরেস্টের আবেদন শুনানীর জন্য রাখা হয়েছে সংসদ নির্বাচনের পরের দিন। অর্থাৎ এসব আসামি নির্বাচনের আগে জামিনে বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।

কারাবন্দী অনেক নেতাকর্মী জামিন নিতেও আগ্রহী নয়। এমনই একজনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন- জামিন লাভ করলে মামলার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে এসব মামলায় বছরের পর বছর কোর্টে আসা যাওয়া করতে হয়। বরং জামিন না করিয়ে একটি মাত্র মামলা নিয়ে থাকাই ভালো।

লাখাই উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহনুর তালুকদারের জামিন লাভের পর জেল গেইট থেকে আটক করে আরো একাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী মুশাহিদ আলীর জামিন হলেও বের হতে পারেননি। জেল গেইট থেকে আবার ডিবি অফিস। পরে নতুন মামলায় জেলে প্রেরণ।

চুনারুঘাটের সাজল মিয়ার নামে মামলা ছিল একটি। জামিনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করায় তাকে অন্তত ৫টি মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করা সাজল মিয়াকে সর্বশেষ ডাকাতির মামলায়ও আসামি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই।

রাজনৈতিক মামলায় জামিন হয়ে যায় এমন ধারণা থেকে অন্তত দুজন বিএনপি নেতাকে বহু পুরাতন হত্যা মামলায় আসামি করে চালান দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ সদর আসনের বিএনপির এমপি প্রার্থী আলহাজ¦ জিকে গউছ। তাদের একজন নুরপুর ইউনিয়নের পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বেলাল।

জিকে গউছ জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে হবিগঞ্জ সদর আসনের অন্তত ১৩৪ জন বিএনপি পরিবারের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি আসামির ব্যবস্থাপনা কিভাবে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে হবিগঞ্জ কারাগারের জেলার শওকত জানান, বড় ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া শীতের দিন হওয়ায় আসামিরা অল্প জায়গাতেও নিজেদের মতো করে থাকতে পাড়ছে। আর কারাগারের খাবারের হিসাব যেহেতু মাথাপিছু হিসাবে ধরা হয় সে কারণে খাবারেরও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

বর্তমানে হবিগঞ্জ কারাগারে বন্দী অবস্থায় রয়েছেন জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি মুশাহিদ আলী, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল জলিল, জেলা যুবদল সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মিয়া মো: ইলিয়াছ, সাধারণ সম্পাদক জালাল আহমেদ, ছাত্রদলের জেলা সেক্রেটারি রুবেল চৌধুরী, বাহুবল থানা জামায়াতের সভাপতি আব্দুর রউফ বাহার, জেলা জাসাস সভাপতি মিজানুর রহমান চৌধুরী, যুবদল নেতা নজরুল ইসলাম, জাসাস নেতা মাসুমসহ অন্তত ৩ শতাধিক নেতাকর্মী।


আরো সংবাদ



premium cement