২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করা কঠিন : ভারতের উদ্দেশে ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান - ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়- তাহলে পাকিস্তানও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় গত সপ্তাহে এক হামলায় অন্তত ৪০ জন আধাসামরিক পুলিশ সদস্য নিহত হবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেবার পর প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ কথা বললেন।

দুই দেশের মাঝে চলমান উত্তেজনার মাঝে মঙ্গলবার তিনি হুমকির সুরে বলেছেন, ‘ভারত আক্রমণ চালালে পাকিস্তান পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করা কঠিন। যুদ্ধ শুরু হলে এর নিয়ন্ত্রণ আর মানুষের হাতে থাকে না।’

জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে ভারত যে অভিযোগ করেছে, আমি এর জবাব সঠিক সময়েই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের গুরুত্বপূর্ণ সফর ছিল।

তিনি বলেন, আমরা বিনিয়োগ সম্মেলন করেছি, যেটা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে আমি প্রতিক্রিয়া জানাব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ তখন যুবরাজের সফর থেকে আমাদের মনোযোগ অন্যদিকে সরে যেত।

তিনি আরো বলেন, ভারতের আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পাকিস্তান আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা যদি আসলেই হয়, তাহলে একটা বিষয় পরিষ্কার করে লিখে রাখুন- পাকিস্তান প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করবে না, প্রতিশোধ নেবে।

কাশ্মীরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর হামলার পর এই প্রথম এমন কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ করতে পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছে নয়াদিল্লি। এর অংশ হিসেবে পাকিস্তানকে দেয়া সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের (এমএফএন) তকমা বাতিল করেছে ভারত। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে এই সুবিধা দেয় নয়াদিল্লি।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন,‘পাকিস্তান স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন আমরা এ ধরনের কাজ (হামলা) করবো। যদি কার্যকর কোনো গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে আমি আশ্বস্ত করছি যে, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই পাকিস্তান ব্যবস্থা নেবে।’

তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করা কঠিন। অতীতে বাস করতে চাইলে আমি ভারতকে বলবো, এটা আমাদের কাজ নয় যে, এখান থেকে কেউ ভারতে গিয়ে অথবা এখানে এসেও কেউ সন্ত্রাসবাদ করতে পারবে না।

টিভিতে দেয়া এই ভাষণে ইমরান খান বলেন, তিনি আশা করেন যে শুভবুদ্ধিরই জয় হবে, কিন্তু ভারত কোন সামরিক পদক্ষেপ নিলে পাকিস্তান তার পাল্টা জবাব দিতে দ্বিধা করবে না।

পাকিস্তানভিত্তিক ইসলামপন্থী গোষ্ঠী জৈশ-এ-মোহাম্মদ বলছে, তারাই এ আক্রমণ চালিয়েছে, তবে বিবিসির সংবাদদাতা সিকান্দার কিরমানি জানাচ্ছেন, আত্মঘাতী হামলাকারী লোকটি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেরই বাসিন্দা ছিল। কিন্তু ভারত অভিযোগ করছে, ওই আক্রমণের সাথে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-ও জড়িত ছিল।

কিন্তু জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ওই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ ঘটনার সাথে পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ দেবার জন্য ভারতকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভারতের হাতে যদি এর কোনো কার্যকর প্রমাণ থেকে থাকে, তাহলে তাদের উচিৎ তা বিনিময় করা।

ইমরান খান বলেন,‘পাকিস্তান যখন স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে চলেছে, তখন এরকম আক্রমণ থেকে তার কি লাভ হতে পারে?’

এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের একজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার লে: জেনারেল কে জে এস ধীলন বলেন, ভারত সরকার জৈশ-এ-মোহাম্মদের শীর্ষ নেতৃত্বকে ধরার চেষ্টা করছে- যারা পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

ভারতের সামরিক কমান্ড থেকে আসা এটিই এ পর্যন্ত সবচেয়ে কড়া মন্তব্য। অবশ্য জেনারেল ধীলন তার বক্তব্যের পক্ষে কোন প্রমাণ দেননি।

ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে এ ঘটনার জবাব দেবার ব্যপারে 'পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছেন।

ভারতের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে তার আন্তর্জাতিক মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

জৈশ-এ-মোহাম্মদকে যে পাকিস্তানই অর্থায়ন করে তার কথিত 'প্রমাণ'সহ একটি ডোসিয়ার বা দলিলপত্রের সংকলন মিত্র দেশগুলোর মধ্যে বিতরণ করেছেন ভারতীয় এই কর্মকর্তারা।


আরো সংবাদ



premium cement