২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাইজেরিয়ার কাছেও হেরে গেল ভারত

নাইজেরিয়ার কাছেও হেরে গেল ভারত - ছবি : সংগৃহীত

আফ্রিকার দু’টি শীর্ষ অর্থনীতির অন্যতম নাইজেরিয়া চরম দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে। একই সাথে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী এক যুগের মধ্যে বিশ্বের প্রতি ১০ জন দরিদ্রের মধ্যে ৯ জনই হবে এ মহাদেশের। 

ওয়ার্ল্ড পোভার্টি ক্লক বা দারিদ্র্য ঘড়ি ব্যবহার করে প্রকাশিত এক রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন এ তথ্য জানিয়েছে। 
ওই রিপোর্টে বলা হয়, তেলসমৃদ্ধ নাইজেরিয়া গত মে মাসে ভারতকে পেছনে ফেলে। বর্তমানে দেশটিতে আট কোটি ৭০ লাখ লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে, যা সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ। অন্য দিকে ভারতে চরম দরিদ্র লোকের সংখ্যা সাত কোটি ৩০ লাখ। ভারতে প্রতি ৪৪ মিনিটে একজন চরম দারিদ্র্যের সীমা থেকে মুক্ত হচ্ছে। অন্য দিকে নাইজেরিয়ায় প্রতি ছয় মিনিটে একজন চরম দারিদ্র্র্যের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। 

এতে আরো বলা হয়, বিশ্বে যে ১৮টি দেশে দারিদ্র্য বাড়ছে, তার ১৪টিরই অবস্থান আফ্রিকায়। চরম দারিদ্র্যের তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে যে হারে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এ দেশটিও শিগগিরই ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আফ্রিকার দারিদ্র্যের এই বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা, স্থানান্তর প্রবণতা ইত্যাদি বিষয় ইতোমধ্যেই ইউরোপের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০১০ সাল থেকেই নাইজেরিয়ায় দারিদ্র্যের হার বাড়তে থাকে। সেখানে এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে গণ্য। কিছু দিন আগে বিশ্বব্যাংকও নাইজেরিয়ার দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির ব্যাপারে সতর্ক করেছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জানায়, দেশটির ৮০ শতাংশ লোকের দৈনিক উপার্জন দুই ডলারেরও কম। তবে রিপোর্টের বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত জানিয়ে নাইজেরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও বিনিয়োগমন্ত্রী ওকেচুকউ এনেলামাহ বলেন, রিপোর্টে যেসব সংখ্যা দেয়া হয়েছে, তা ছিল নাইজেরিয়ার মন্দার সময়ের। আমি বরং আশা করি, নাইজেরিয়ার অর্থ-সংক্রান্ত নীতির কারণে দেশটিতে দারিদ্র্য আরো হ্রাস পাবে। 

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের কর্মকর্তা হোমি খারাস বলেন, আর্থসামাজিক সমস্যা, খারাপ সরকার ও খারাপ শাসনের সাথে সাথে দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নাইজেরিয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নাইজেরিয়া একটি ধনী রাষ্ট্র। এর বেশির ভাগ আয় আসে তেল বিক্রি থেকে। কিন্তু এ অর্থ সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে যায় না। ফলে সেখানে দারিদ্র্য বিরাজ করছে।

আরো পড়ুন :

মহারাষ্ট্রে ৩ মাসে ৬ শতাধিক কৃষকের আত্মহত্যা
এনডিটিভি

মহারাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী চন্দ্রকান্ত পাতিল জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ওই রাজ্যে তিন মাসে ছয় শতাধিক কৃষক আত্মহত্যা করেছে। বিজেপি শাসিত ওই রাজ্যের বিধান সভায় বিরোধী দলীয় বিধায়কের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। এ রাজ্যে কৃষকদের আত্মহত্যা প্রবণতা সব থেকে বেশি। ক’দিন আগে দাবি আদায়ের মিছিলে নেমেছিলেন মহারাষ্ট্রের কৃষকেরা। মুম্বাইয়ের উদ্দেশে তাদের ডাকা লং মার্চে সংহতি জানিয়েছিল সারা ভারতের কৃষকসহ সচেতন জনতা।

সারা বিশ্বেই কৃষকরা বিপন্ন। তবে ভারতে এই বিপন্নতা অন্য অনেকের চেয়েই গভীর। ক্ষুদ্র কৃষকেরা সেখানে বাস করছেন দুর্যোগের কিনারায়। মহারাষ্ট্র সেই বিপন্নতার এক জীবন্ত দলিল। বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও সংবাদমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র খরা, বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা, করপোরেট বাজার ব্যবস্থার উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে টিকতে না পারায় সেখানে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয় কৃষক। মহারাষ্ট্রে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২৫ হাজারের বেশি কৃষক দেনার দায়ে আত্মহত্যা করেছেন। 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সুরক্ষার প্রশ্নে কার্যকর নীতি-পরিকল্পনার অভাব থাকার কারণেই সেখানে ক্রমাগত ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন কৃষকরা। তাদের মতে, দশকের পর দশক ধরে ঋণের বোঝা থাকা, খরা ও আয় কমে যাওয়া ভারতের গ্রামাঞ্চলে কঠোর প্রভাব ফেলেছে। রাজ্য বিধান পরিষদে বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে পাতিল শনিবার জানিয়েছেন, ‘১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত মহারাষ্ট্রে ৬৩৯ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।

সরকারী বিবেচনায় ফসল নষ্ট, ঋণ ও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতার ভিত্তিতে এদের মধ্যে ১৮৮ জনের পরিবারকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে।’ পাতিল জানান, ‘আত্মহত্যা করা ১৮৮ কৃষকের মধ্যে ১৭৪ জনের পরিবার এরই মধ্যে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন, আত্মহত্যাকারী ৩২৯ কৃষকের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে আর ১২২ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। 

বিরোধী নেতা ধনঞ্জয় মুণ্ডে রাজ্য বিজেপি সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেছেন, ঋণ মাফ, ফলন না হওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ, শস্য ঋণ বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মতো সরকার পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণেই কৃষকেরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিজেপি সরকারের নির্লিপ্ত আচরণ এবং মিথ্যা আশ্বাস কৃষকদের আত্মহত্যার দিকে বার বার ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতারা। মুন্ডে অভিযোগ করেছেন, গত ৪ বছরে রাজ্যে ১৩ হাজার কৃষক আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। কিন্তু গত এক বছরেই ১৫০০জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
এ বছর মার্চ মাসেই কৃষক বিক্ষোভে শুধু মহারাষ্ট্রই নয়, কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশই। কৃষকরা এক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হেঁটে এসে অবস্থান করেছিলেন মুম্বাইয়ে। ১০ হাজার কৃষক নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে পথ হাঁটা শুরু করেছিলেন। সেই মিছিল যখন অবশেষে মুম্বাইয়ে এসে পৌঁছেছিল তার সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ৪০ হাজার।

চাকচিক্যের মুম্বাই শহরের এই অগণিত মানুষ তাই পুষ্পবৃষ্টিতে সাদর অভ্যর্থনা জানায় তাদের। তৃষ্ণা আর অভুক্ত জীবনের ধারাবাহিকতা ঘোচে ছাত্রদের তুলে দেয়া পানি কিংবা বিস্কুটের প্যাকেটে। কৃষকদের নিদারুণ অবস্থা বিজেপি সরকারকে সেদিন বেশ বেকায়দায় ফেলেছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জানিয়েছিলেন, সম্পূর্ণ কৃষি ঋণ মওকুফ, এম এস স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন, বনাঞ্চলের অধিকার প্রশ্নে কৃষকদের সব দাবিই তার সরকার মেনে নেবে। তা সত্ত্বেও সেই মার্চ থেকে মে পর্যন্ত কৃষক আত্মহত্যার এমন ভয়াবহচিত্র।


আরো সংবাদ



premium cement