২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কারাগারে অপদস্থ করা হচ্ছে নওয়াজ শরিফকে!

কারাগারে অপদস্থ করা হচ্ছে নওয়াজ শরিফকে! - ছবি : সংগৃহীত

বাবা নওয়াজ শরিফ জেলে গেছেন মাত্র ২৪ ঘণ্টা পেরিয়েছে। আর এর মধ্যেই টুইটারে জেলের বাথরুম নিয়ে অভিযোগ জানালেন ছেলে হুসেন। তার অভিযোগ, রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে নওয়াজকে নিম্নমানের সুবিধা দেয়া হয়েছে। এমনকী, তার বাথরুমটাও নাকি পরিষ্কার নয়।

টুইটারে এই নিয়ে তিনি একটি পোস্ট করেছেন। লিখেছেন, নওয়াজ শরিফকে ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা দেয়া হয়নি। বাথরুমটাও খুব অপরিষ্কার। যেন বহুযুগ ধরে সেটি পরিষ্কার করা হয়নি। তিনি এও অভিযোগ তুলেছেন, কোনো জনপ্রতিনিধির জন্য পাকিস্তানের জেলে কোনো বিশেষ জায়গা নেই। কিন্তু মৌলিক কিছু অধিকার তো রয়েছে।

নওয়াজ শরিফ আদিয়ালা জেলে যাওয়ার পর তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। তারা জানিয়েছেন, তাদের মাত্র পাঁচ মিনিট দেখা করতে দেয়া হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র তো দূরের কথা, ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানারও বন্দোবস্ত নেই। শরিফের সঙ্গে যখন আইনজীবীরা কথা বলছিলেন, একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার সবসময়ই উপস্থিত ছিলেন।

নওয়াজ শরিফকে বি ক্লাস জেলে রাখা হয়েছে বলে খবর। এই ক্লাসের বন্দিরা অন্য বন্দিদের থেকে বেশি সুবিধা ভোগ করে। এমনকী তাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ও টেলিভিশনেরও বন্দোবস্ত থাকে। শরিফের মেয়ে মরিয়মকেও আদিয়ালা জেলের মহিলা বিভাগে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও বর্তমানে সিহালার রেস্ট হাউজে রয়েছেন মরিয়াম। তাকে জেলে যে সুবিধাগুলি দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, তা তিনি নিজেই নিতে চাননি বলে জানা গেছে।

শুক্রবার ন’টা নাগাদ লাহোর নামতেই গ্রেফতার হন নওয়াজ শরিফ ও তার কন্যা মরিয়ম। বিভিন্ন পাক সংবাদমাধ্যম অবশ্য আগেই দাবি করেছিল, আবু ধাবিতে নওয়াজ ও তার মেয়েকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, নওয়াজ শরিফের ১০ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মরিয়ামকে আট বছর জেলে কাটাতে হবে।

আরো পড়ুন :

আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি
ডন ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে বি-শ্রেণীর সুবিধা দেয়া হয়েছে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে। তারা ঘোষিত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে।

কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঔপনিবেশিক যুগের মতো করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে আর কারাবন্দীদের জন্য ‘এ’, ‘বি’ আর ‘সি’ ক্যাটাগরি নেই। কয়েক বছর আগে লাহোর হাইকোর্টের নির্দেশনায় পাঞ্জাবের কারাবিধি পরিবর্তিত হয়। তখন থেকে বন্দীদের ‘অর্ডিনারি ক্যাটাগরি’ ও ‘বেটার ক্যাটাগরি’ নামের দু’টি ভাগে বিভক্ত করে সুবিধা দেয়া শুরু হয়। নতুন ক্যাটাগরিতে একজন সাবেক এমপি হিসেবে আবেদনের মধ্য দিয়ে ‘বেটার ক্যাটাগরি’র বন্দীর মর্যাদা পেয়েছেন নওয়াজ। তবে এমপি না হওয়ায় মরিয়মের জন্য বি-শ্রেণীর প্রকোষ্ঠ বরাদ্দ নিয়ে দেখা দিয়েছিল জটিলতা।

পরিবর্তিত কারাবিধি অনুযায়ী, বছরে ছয় লাখ রুপি কর দেয়া নাগরিকদেরও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বেটার ক্যাটাগরি’ভুক্ত বন্দীর মর্যাদা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এমপি না হলেও বছরে ছয় লাখ রুপি কর দেয়ার সূত্রে মরিয়মকে বি-শ্রেণীর সুবিধা দেয়া হয়েছে। মরিয়মকে যে প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে সেই প্রকোষ্ঠে মডেল আয়ান আলিকেও রাখা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারের অভিযোগ ছিল।
দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত নওয়াজ ও তার মেয়ে শুক্রবার লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন। এর পরপরই তাদেরকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পাকিস্তানের রাজনীতিতে এ দু’জন ভিভিআইপি কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত আদিয়ালা জেলে প্রথম রাত কাটিয়েছেন।

সেই রাতেই ইসলামাবাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতেতে একদল চিকিৎসক আদিয়ালা জেলের ভেতরে নওয়াজ ও মরিয়মের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তারা তাদেরকে সুস্থ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

উল্লেøখ্য, পাকিস্তানে বি-শ্রেণীভুক্ত বন্দীদের জন্য কোনো কঠোর শ্রম আরোপ করা হয় না। তবে অন্যদের শিক্ষিত করতে বা পড়াশোনা করানোর কাজ দেয়া হয় তাদেরকে। এ ক্ষেত্রে নওয়াজ ও মরিয়মের বেলায় ওই একই নিয়ম প্রয়োগ করা হবে কি না তা স্পষ্ট নয়। বি-শ্রেণীভুক্ত বন্দীদেরকে জেলখানায় একটি খাট, একটি চেয়ার, স্যানিটারি সামগ্রী ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দেয়া হয়।

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, মরিয়মকে শিহালা ট্রেনিং কলেজের রেস্ট হাউজে রাখা হবে। ওই রেস্ট হাউজকে সাবজেল ঘোষণা করে হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তাকে আদিয়ালা জেলে নারীদের জন্য নির্ধারিত প্রকোষ্ঠে রাখা হয়েছে। জিও টিভি জানিয়েছে, মরিয়মকে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে তিন দফা সিদ্ধান্ত পাল্টেছে পাকিস্তান সরকার। শেষ পর্যন্ত তাকে সাবজেলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, মারিয়মকে আদিয়ালা জেলেই রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে ‘বেটার ক্যাটাগরি’ শ্রেণীর সুবিধা দেয়া হয়েছে।

এ দিকে নওয়াজ শরীফ আর তার কন্যা মরিয়ম নওয়াজ ঘোষিত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলে জানা গেছে। ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরোর আইনে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আগাম জামিন কিংবা আপিল আবেদনের সুযোগ নেই। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পথ তাই হাইকোর্টে স্বশরীরে হাজির হওয়া। উচ্চ আদালতের কাছে আপিল কিংবা জামিনের আর্জি পেশ করতে হলে তাই গ্রেফতারি বরণ আবশ্যক। আইনি লড়াইয়ের জন্য গ্রেফতার হওয়া ছাড়া নওয়াজ ও তার কন্যার আর কোনো পথ ছিল না।

এখন হাইকোর্টে হাজির হয়ে তারা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন বা গ্রেফতারির বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চাইতে পারবেন। ‘অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্টের’ দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার আইনজীবী খাজা হারিসের আপিল আবেদন জমা দেয়ার কথা। সোমবার বা মঙ্গলবার আবেদনের শুনানি হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement