০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন গণতন্ত্র নয়

নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন গণতন্ত্র নয় -

রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা ক্ষমতালোভীসহ বহু শ্রেণীর মানুষের। কেমন করে তা সম্ভব? সবারই ইচ্ছা যত সহজে পারা যায় তা করতে হবে। তাই অনুসন্ধান চলে। অতীত থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত। অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে এই অনুসন্ধান এত দীর্ঘ কেন? জবাবও হবে দীর্ঘ এবং বহুমাত্রিক ও বহুমুখী। তবে শক্তির উপস্থিতি লক্ষ করা যায় সব স্থানে। এর একটি কারণ হতে পারে, সব কর্মকাণ্ডের ভিত্তি হয় কোনো একটি নির্দেশ, যা দিতে পারে শুধু ক্ষমতাবান। এই অনুভূতির রেশ ধরেই জন্ম হয় নির্বাচনপদ্ধতির। আর এই পদ্ধতির নিয়ন্ত্রণ।

তাই বারবার নানা প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে। কোনো নির্বাচনই যেন নিষ্কলঙ্ক নয়। এমনকি এই লেখকেরও মাঝে মধ্যে মনে হয় ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মতো আর নির্বাচন হয়নি। ’৭১-এর নির্বাচন মনে হয় আবেগের নির্বাচন। প্রার্থীর বিষয়টি ছিল নিতান্তই গৌণ। লক্ষ্যই ছিল মূল বিষয়।

এমন বিতর্ক বিশ্বব্যাপী। এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন নিয়ে এক বিশাল ঝড় উঠেছে। এটা সত্য, নির্বাচনের পর পরাজিতরা নানা অভিযোগ উঠায় এবং তাদের মধ্যে সত্যতাও থাকে। প্রথম প্রশ্নই হলো এটা কেমন করে সম্ভব? এত সার্ভে, এত অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যদ্বাণী সবই মিথ্যা হলো? কে প্রভাবিত করল? কোন বিদেশী শক্তি? বিজয়ীরা কোনো গোপন পন্থা কি অবলম্বন করেছিল?

তবে প্রভাবান্বিত করে নির্বাচন হয় এবং নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন বিষয় দু’টি পৃথক এবং এর ফলাফলও প্রায়ই অনাকাক্সিক্ষত হয়। তবে মূল বিষয় হয় প্রভাবান্বিত নির্বাচন কখনোই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয় এবং গণতন্ত্রও এটা কায়েম ও দৃঢ় করতে পারে না। বরং এগুলো সৃষ্টি করে নৈরাজ্য এবং অনিশ্চয়তা। নির্বাচন প্রভাবান্বিত করার শঙ্কা অবশ্য এ ব্যবস্থার জন্মলগ্ন থেকেই। তবে এখন সবাই প্রকাশ্যে বলছে, নির্বাচন প্রভাবান্বিত করলে তার প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রযুক্তির কল্যাণে নির্বাচনকে নিজের মতো করে পরিচালনা করা অনেক সহজ হয়ে পড়েছে। অধ্যাপক জে আলেক্স হল্ডারম্যান মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় পড়ান। তার মতে, প্রযুক্তি দিয়ে নির্বাচন প্রভাবিত করা এখন ‘শিশুর খেলা’ (চাইল্ডস প্লে)। অনেক যুক্তির মধ্যে তার একটি প্রধান যুক্তি হলো, এখন নির্বাচন প্রভাবান্বিত করতে বাহ্যিক উপস্থিতির প্রয়োজন নেই। যদি নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার থাকে এবং কোনো নির্বাচন পরিচালনাকারীর সাথে পরিচয় থাকে, তবে এটা বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে পরিচালনা অতি সহজ।

এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ঝড় উঠেছে। এক বিশালসংখ্যক ভোটার মানতেই চান না নির্বাচন এবং ফল নিয়ে। এমন প্রশ্নও উঠেছে যে, রাশিয়া তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বর্তমান প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেছে। এর আগে কখনো এমন ব্যাপক অভিযোগ ওঠেনি। অভিযোগকারীরা বিশ্বাসযোগ্য অনেক তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছেন। অনেকেই এ দাবি ভুয়া উল্লেখ করে দাবি করেছেন, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে যোগাযোগকে কেন্দ্র করেই এ বক্তব্যগুলো আসছে। যাই হোক, এ কথা সত্য প্রযুক্তি যেমন নির্বাচন কর্মকাণ্ডকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, সময়ের সংক্ষিপ্ততায় সাহায্য করেছে, তেমনিভাবে এর মতামত বদল করার পন্থাও সহজ করে দিয়েছে। ক্যামব্রিজ এনালিটিকা বলে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটি এর অনেক কথাই সম্প্রতি প্রকাশ করেছে। তারা দেখিয়েছে কেমন করে নির্বাচন ফল প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই পরিবর্তন করা যায়। ইন্টারনেট এর একটি প্রধান মঞ্চ। ইন্টারনেটের জন্ম এবং এর ব্যবহার যেমন চমকপ্রদ, তেমনি বিশাল। বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের এক-তৃতীয়াংশ এখন এই মঞ্চ ব্যবহার করছে।

নির্বাচনপদ্ধতিতে এর ব্যবহার এবং অপব্যবহার হবে এটা স্বাভাবিক। শুধু তাই নয় রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং জীবনও এখন অনেকাংশে এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তবে এই মাধ্যম যেমন অত্যধিক প্রয়োজনীয়, তেমনি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির অন্যতম বাহক। যেমন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে এর নজির পাওয়া গেছে। গত বছর ৬ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর আংশিক ব্যবহার করা হয়েছিল। এই নির্বাচন জয়ের পর ট্রাম্প যেমন এর ওপর নির্ভরতাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেন, তেমনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনও এ অবস্থান নেন।

তারা মনে করেন, রাশিয়া প্রযুক্তির মাধ্যমে এই নির্বাচন প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করেছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে সাক্ষ্যদানকালে ক্রিস্টোফার ওয়াইলি বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে মার্কিন ভোটারদের প্রভাবান্বিত করা হয়। ক্যামব্রিজ এনালিটিকা অন্তত ৩০টি ফল পরিবর্তন করতে সক্ষম হয় বলে দাবি করে। অধ্যাপক হল্ডারম্যানের প্রদর্শনীর পরও যখন ভোটিং মেশিন নির্বাচনে ব্যবহৃত হলো, তখন অনেকেই মন্তব্য করলেন, ক্ষমতাসীনেরা এই যান্ত্রিকব্যবস্থার সুবিধাকে কখনোই হারিয়ে যেতে দেবে না। এ ব্যবস্থা কতখানি ভঙ্গুর এবং অনির্ভরযোগ্য, তার পরীক্ষা হয় ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিশিগানসহ আটটি শহরে। এর মধ্যে লাসভেগাসের পরীক্ষাটি অন্যতম। এখানে প্রতিটি সেন্টারে ভোটিং মেশিনে কার্ড সংযুক্ত হলো। কেউ ভোট দিলে একটি ফুটো (পাঞ্চড) কার্ড বেরিয়ে আসত। ফলে ভোট চুরির সম্ভাবনা নেই বলে ধরে নেয়া হতো; কিন্তু এটা যে অব্যর্থ নয় তা প্রমাণ করেছিল মাত্র ১১ বছরের শিশু অড্রে জোনস। সে ওয়েবসাইটের পাতায় ঢুকে ভোট দিলো এবং একটি কার্ড বেরিয়ে এলো। সে কাজটি করল এমনভাবে। সে সরকারি ভোটের পাতাকে নকল করে ভোট দিয়ে, আসল পাতার পরিবর্তন করল সব তথ্যসহকারে। অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তি কাজটি যেমন সহজ করেছে, তেমনি সেই সাথে বেআইনি বা অনাকাক্সিক্ষত কাজগুলোও সহজ করে দিয়েছে অপরাধীদের জন্য।

এ কাজটি ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে জনপ্রতিনিধি বলতে যা বোঝা যায়, সে বিষয়টি বিতর্কের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। একটি অভিজ্ঞতার কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। একজন ভোটার মরহুম আনিসুল হকের বন্ধু ছিলেন। তাকে বললেন, ‘আমি সাধারণত ভোটকেন্দ্রে ভিড়ে যাই না, তবে এবার শুধু আপনাকে ভোট দিতে যাবো।’ তিনি ভোটকেন্দ্রে যেতেই এজেন্টরা তাকে সালাম জানিয়ে বলল, ‘মুরব্বি কষ্ট করে কেন এসেছেন, আপনার ভোট আমরা দিয়ে দিয়েছি।’ সেই ভোটার অবাক হলেন না, কারণ আরো দু-একবার এ ঘটনা অতীতে ঘটার জন্য তিনি ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতেন। অবস্থার পরিবর্তন তো হয়নি, বরং প্রসারতার স্পর্শ পাওয়া গেল। নিজেকেই হেসে বললেন, ‘অবশ্যই দেশ সর্বস্তরে এগিয়ে চলেছে।’

অনেকেই প্রশ্ন করেন, যারা রাজনীতি করেন এবং সে পথ ধরে নির্বাচন ইত্যাদি করে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত হন, তারা কেন এমনটি পথে পা দেন? তা হলে কি জনগণের প্রতিনিধি না হয়ে নিজের ইচ্ছার প্রতিনিধি হতে ভালোবাসেন?

গত জার্মান নির্বাচন নিয়েও এমন আলোচনা এবং বিতর্কের মধ্য দিয়ে একটি তথ্য বারবার বেরিয়ে এলো, তা হলোÑ ‘সর্বস্তরে হ্যাক হচ্ছে। শুধু যে বান্ডেসস্টাগ (পার্লামেন্ট) বা সরকারে তথ্য ‘হ্যাক’ (চুরি) হচ্ছে তা নয়, এটা এত গভীরে পৌঁছে গেছে যে, এর স্পর্শ যেন প্রতিটি নাগরিকই পাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এদের মধ্য দিয়ে সব ধারণা ও বক্তব্যও অন্যদের কাছে পৌঁছে যায়। এ জন্য ক্ষমতাবান (সরকার সহকারে) ও ক্ষমতাহীন সবাই এ মাধ্যমে সহজেই আকৃষ্ট হয়। রাজনীতিবিদেরা যে এ মাধ্যমকে পরিপূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন, বলাই বাহুল্য।

এর একটি প্রধান কারণ জনমতকে ঐতিহ্যিকভাবে প্রভাবিত করতে প্রচুর সময়, অর্থ এবং অন্যান্য অবস্থার প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেট এবং এমন প্রযুক্তির ব্যবহারে সে সমস্যাগুলো অনেক কম এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সহজ। সে জন্যই এখন বিশ্বব্যাপী ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাবানেরা এই প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে চাইছেন এবং বাড়াচ্ছেন। ‘সাইবার আক্রমণ’ ইত্যাদি এখন এত পরিচিত শব্দ এবং অবস্থা।

বিখ্যাত জার্মান সাইবার যুদ্ধবিশারদ সান্ড্রো গাইকেন বলেছেন, ‘জার্মান বৈদেশিক মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য চুরি প্রতিদিনের বিষয়। যেমন রাশিয়ানরা প্রতিদিন এ কাজটি করছে।’ ১২ জন রাশিয়ান গোয়েন্দা ২০১৬ মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচন প্রযুক্তি দিয়ে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা চালায় বলে বিশাল আলোচনা হয় এবং তার রেশ এখনো চলছে। প্রযুক্তিসমৃদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এমনটি হলে, তৃতীয় বিশ্বের অবস্থা কেমন হবে? বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিনির্ভর হতে চাইছে।

আলোচনা শুরু হয়েছিল নির্বাচন এবং গণতন্ত্র নিয়ে। প্রযুক্তি এ দু’টির বিস্তার এবং নিশ্চিতকরণে কী ভূমিকা রাখছে। কেন ক্ষমতা আরোহণ ইচ্ছুকেরা এর ব্যবহার চাইছেন? আলোচনায় এসে গেছে প্রযুক্তির ব্যবহার হলে জনমত কিভাবে সহজেই তাদের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে প্রতিফলন সম্ভব।
ফেসবুকের প্রধান এবং অন্যতম মালিক মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করেন, ক্যামব্রিজ এনালিটিকা ফেসবুকের আট কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নেয়। ফেসবুক এটা প্রতিরোধ করতে পারেনি।

এখন প্রযুক্তিনির্ভর উভয় সঙ্কটে। অবশ্যই কেউই এর ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন না। তবে কাগুজে ভোটের পক্ষে সব আলোচকই। তাদের বক্তব্য কাগুজে ব্যালট দিয়ে ভোট ধীরে হতে পারে, তবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য। এর কারণ কোনো ব্যত্যয় বা চুরি সহজেই নির্ণয় করা যায়। তাই অধ্যাপক হল্ডারম্যান দাবি করেছেন, ‘ডিজিটাল ভোটের সাথে সাথে কাগুজে ভোটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নতুবা কোনো সমস্যা বা প্রতিবাদ সঠিক এবং ন্যায়ভাবে সমাধান করা যাবে না।’ কাগুজে ব্যালটও নকল করা যায় এবং নির্বাচনে ব্যবহার সম্ভব। তবে তা ধরা পড়ে সহজেই। হল্ডারম্যান বলেছেন, ‘কেন্দ্র থেকে ডিজিটালপদ্ধতির মাধ্যমে যে ফল পাঠানো হয় কেন্দ্রে, সেটা হ্যাক হতে পারে। তবে পার্থক্য এই যে, এর সাথে কাগুজে ফলও এসে যায়। কিন্তু ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে বোতামে চাপ দিয়ে ভোট দেয়া হলো, তা কোন ঘরে পৌঁছল তার নিশ্চয়তা নেই। অপর পক্ষে এর প্রতিবাদ করার জন্য কোনো দলিলও থাকে না।

এ জন্যই মাত্র ডজন দুই দেশে এর ব্যবহার হচ্ছে তবে আংশিকভাবে। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এর ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত এবং পরীক্ষামূলক।

এ জন্যই বলা হয়, নির্বাচন যদি জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য হয় এবং গণতন্ত্র সমৃদ্ধ করার জন্য, সেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা ডিজিটাল বোতামের মধ্যে হবে না। তার সাথে পুরনো কাগজপদ্ধতিও থাকতে হবে।

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা চাইছে সারা বিশ্বের দেশগুলো তাদের মেশিনও ব্যবহার করুক। তাদের দাবি, এগুলোকে কোনোক্রমেই প্রভাবিত বা হ্যাক করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বে এই ডিজিটাল পদ্ধতি কতখানি প্রয়োজন এবং কতটুকু নির্ভরযোগ্য। আগেই বলা হয়েছে এটা প্রতিটি নির্বাচনের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়।

বিতর্কের মূলে হলো, একটি অন্যতম সন্দেহ। তা হলো বোতামে চাপ দিয়ে যে ভোট দেয়া হলো এবং যে কাগজ ফুটো হয়ে বেরুল, তা কি সত্যিকারের চিত্র?
এ প্রশ্নের কারণ যে সফটওয়্যার দিয়ে মেশিনগুলো পরিচালনা করা হয়, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। শুধু নির্বাচন পরিচালনাকারী সরকারি কর্মচারীরাই এটা জানেন। তিনি যদি পক্ষপাতদুষ্ট হন, তবে অবশ্যই সেই নির্বাচনে জনমত প্রতিফলিত হবে না। আবার নির্বাচন পরিচালনাকারী হয়তো পক্ষপাতদুষ্ট নন, কিন্তু যে যন্ত্রটি তিনি ব্যবহার করছেন, তার নিয়ন্ত্রণ তার নেই এবং এর অভ্যন্তরীণ কলাকৌশলও তার অজানা।
মোদ্দা কথা হলো, সত্যিকারের গণতন্ত্রে জনগণকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে। আর সব কর্মকাণ্ড হতে হবে নিরপেক্ষ। এখন বিশ্বের সর্বত্র দেখা যায় সব কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে মাত্র কিছু ব্যক্তি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সাথে জড়িত। যারা রাজনীতিবিদ বলে পরিচিত, এদের বেশির ভাগই এই গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় যেন ব্যস্ত থাকে। এর সাথে তার নিজের স্বার্থও খানিকটা উদ্ধার করে নেয়।

এ কথা সত্য, মানুষ অতীত থেকে অনেক দূর এগিয়ে এসেছে। মানুষের অনেক অধিকার এখন স্বাভাবিকভাবে নিশ্চিত। অতীতের কয়েকটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, সে সময়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কত ভয়াবহ ছিল। অবশ্য এটাও সত্য, অনেক বিষয় বর্তমানকালের চেয়ে ভালো ছিল। পশ্চিমা বিশ্বে একদা নিজেদের শিশুদের পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠির মতো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠান হতো। আবার মারাত্মক নেশা কোকেন ছিল, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে চিকিৎসার অন্যতম উপাদান। শিশুদের বাইরের বাতাস খাওয়ার জন্য খাঁচায় আবদ্ধ করে রাখা হতো। গর্ভবতী নারীর জন্য ধূমপান করার উৎসাহ দেয়া হতো। আসলে আজ থেকে ৭০ বছর আগে ধূমপানের প্রচারের ওপর কোনো বিধিনিষেধও ছিল না। আবার মানবদেহের বিভিন্ন অংশ সংগ্রহ করার বাতিক ছিল। মার্কিন সেনারা নতুন দেশ জয়ের পর তাদের বিপক্ষ দলের সেনাদের মাথা কেটে নিয়ে বিজয়ের চিহ্ন হিসেবে রাখত। আবার মার্কিনিরা আফ্রিকা-এশিয়া থেকে মানুষ বন্দী করে এনে জন্তু-জানোয়ারের চিড়িয়াখানায় রেখে তা অর্থের বিনিময়ে প্রদর্শন করত। এমনকি তারা মানসিক রোগীদের এক স্থানে আবদ্ধ করে মানুষের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করত। তখন ডাক্তাররা চিকিৎসার নামে প্রকাশ্যে ভয়াবহ সব অনুসন্ধান এবং পরীক্ষা করত। অবশ্য এ অবস্থা এখনো চালু, তবে সীমিত আকারে।

প্রযুক্তি এবং নানা রাজনৈতিক ধারা এখন জনগণকে অনেক ক্ষেত্রে মানসিক প্রতিবন্ধী বানিয়ে স্বার্থ উদ্ধারের কর্মে রত। এই কৌশল অতীতে ছিল না। অনেক অনুসন্ধানকারী আবিষ্কার করেছেন, জনগণের এক বিশাল অংশকে গণতন্ত্রের নামে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ করার চেষ্টা অবিরত। কারণ রাজনৈতিকভাবে যত সহজে মানসিক প্রতিবন্ধিতা সৃষ্টি করা যায়, তা অন্য কোনো পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রতাপ ভানু মেহতা এ অবস্থার ওপর এক চমৎকার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ভণ্ডামি হলো পাপ-পুণ্যের প্রতি দেয়া শ্রদ্ধা (ভেট)’। অর্থাৎ গণতন্ত্রের নামে কপটতা ও ভণ্ডামি এত ব্যাপক যে, এটা জীবনের এক অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ এটাকে একটা রসিকতা হিসেবেও ভাবে। প্রচলিত বাক্যালাপে শোনা যায়, এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে বলছে, তুই আমার সাথে পলিটিকস করছিস? অর্থাৎ অবস্থা অনুসারে এর অর্থ হবে ঠাট্টা, ষড়যন্ত্র বা লজ্জা দেয়া। রাজনীতির ব্যবহার কোনপর্যায়ে।
তাই গণতন্ত্র সবার কাছে এত গ্রহণীয়। এটা যেন সব রোগের ধন্বন্তরি। আর এ জন্য পক্ষ-বিপক্ষ সবাই এর নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত; কিন্তু গণতন্ত্র যার জন্য, সেই জনগণ হয় গৌণ। রাজনীতির ব্যর্থতা এখানেই। সে জন্য নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কখনো সত্যিকারের গণতন্ত্রকে রক্ষা করে না।


আরো সংবাদ



premium cement
সিদ্ধিরগঞ্জে হেলে পড়েছে ৬ তলা ভবন, আতঙ্ক জাতিসঙ্ঘ প্রধানকে দ্বিতীয়বারের মতো গাজায় প্রবেশে বাধা দিলো ইসরাইল টানা তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি নোয়াখালীতে অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী সমাবেশ থেকে গ্রেফতার প্রায় ২৫০০ কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড দাগনভুঞা উপজেলা চার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহ্জাদা মিয়ার জামিন হামাসের সাথে চুক্তির ব্যাপারে মিসরীয় প্রস্তাব মেনে নিন : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতে আইনি লড়াইয়ের ল’ফার্ম নিয়োগ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২

সকল