২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রা শুরুতে যেভাবে যেতেন

-

১৯৫১ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে প্রথম পোর্ট হজ অফিস স্থাপন করা হয়। শুরুতে পোর্ট হজ অফিসটি পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ রিলেশন্স মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীকালে ১০টি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়ে সর্বশেষ ১৯৮০ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত হয়। ১৯৮৪ সালের পর চট্টগ্রাম সমুদ্রপথে এবং ঢাকায় অস্থায়ী হাজী ক্যাম্প স্থাপন করে আকাশপথে হজযাত্রী পাঠানো হয়। ১৯৮৬ সালে পোর্ট হজ অফিসের নাম পরিবর্তন করে ‘হজ অফিস’ নামকরণ করা হয়। ১৯৮৯ সালে হজ অফিস চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। হজ অফিস ঢাকায় স্থায়ী হাজী ক্যাম্প না থাকায় ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মিরপুর এবং নবাব কাটরায় ভাড়া করা বাড়িতে অবস্থিত ছিল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অস্থায়ী হজ ক্যাম্প করে তখন হজযাত্রীদের পাঠানো হতো। এরপর ১৯৯৭ সালে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার আশকোনায় ৫ একর জমিতে স্থায়ী হজ ক্যাম্প তৈরি করা হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে সেই হজ ক্যাম্প থেকে হজ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আকাশপথের পাশাপাশি নদীপথেও হজযাত্রী গমন করতেন। এর পর থেকে শুধু বিমানেই হজযাত্রী যাচ্ছেন।
২০০৮ সাল পর্যন্ত পিলগ্রিম পাসের মাধ্যমে হজযাত্রীরা হজে যেতেন। ২০০৯ সাল থেকে সৌদি সরকার আন্তর্জাতিক পাসপোর্টের মাধ্যমে হজযাত্রী যাওয়ার নিয়ম চালু করে। বাংলাদেশ ২০১০ ও ২০১১ সালে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের অধীন দক্ষিণ এশীয় হাজী সংস্থা মোয়াসসাসা অফিস কর্তৃক হজ ব্যবস্থাপনায় শীর্ষ স্থানের স্বীকৃতি লাভ করে। সরকার ২০১১ সালে পরীক্ষামূলক থার্ড ক্যারিয়ার চালু করেছিল। হজযাত্রীদের সুবিধার জন্য ২০১১ সালে জেদ্দা হজ টার্মিনালে আলাদা জায়গা ভাড়া করে। হজ অফিস হজ কার্যক্রমকে ডিজিটাল করার অংশ হিসেবে ২০০৯ সালে প্রথম আইটি ফার্ম নিয়োগ করে। এরপর ক্রমেই হজ ব্যবস্থাপনা আইটিভিত্তিক হয়। সৌদি সরকার ক্রমান্বয়ে ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করে। বর্তমানে পুরোটা হজই ই-ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে হজ ব্যবস্থাপনার উন্নতির পাশাপাশি হজযাত্রীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন হজযাত্রীর কোটা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি বছরই প্রচেষ্টা চালাতে হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রা : বাংলাদেশ থেকে দু’ভাবে হজে যাওয়া যায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবং বেসরকারি ব্যববস্থাপনায় বৈধ হজ এজেন্সির মাধ্যমে।
দুই ব্যবস্থাপনায়ই হজ গমনেচ্ছুদের অনলাইনে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়।সৌদি নির্ধারিত কোটার মধ্যে প্রাক-নিবন্ধনের ক্রমিক থাকলে হজের মওসুমে নির্ধারিত সময়ে চূড়ান্ত নিবন্ধনের মাধ্যমে হজে যাওয়ার সুযোগ হয়। হজযাত্রী কোটার অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে প্রাক-নিবন্ধন সারা বছরের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
সামগ্রিক হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তবে হজ ব্যবস্থাপনার সাথে বেসামরিক বীমা ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও জড়িত। কারণ বাংলাদেশের হজযাত্রীর অর্ধেকই পরিবহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসংলগ্ন আশকোনায় স্থায়ী হজ ক্যাম্প রয়েছে। হাজীরা হজযাত্রার আগে সেখানে অবস্থান করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজযাত্রীদের বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনও হজ ক্যাম্পেই সম্পন্ন হয়। এ বছর থেকে হজযাত্রীদের প্রি-ডিপার্টনার ইমিগ্রেশনের প্রস্তুতি চলছে এবং সংশ্লিষ্টরা এ বছরই তা সীমিত পরিসরে হলেও চালুর আশা করছেন। সে ক্ষেত্রে হজযাত্রীদের জেদ্দা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি বিশেষ জোনে বিমানে ওঠার আগেই সৌদি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে সম্পন্ন হবে। ফলে জেদ্দায় নেমে হজযাত্রীরা সরাসরি টার্মিনালে প্রবেশ করকে পারবেন। এতে জেদ্দা বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার ভোগান্তি লাঘব হবে।
হজ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিমালা রয়েছে। চলছে হজ আইন পাসের প্রক্রিয়াও। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতি বছর হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে। তার আলোকে হজ এজেন্সিগুলোও আলাদা আলাদা হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে থাকে। সরকার ঘোষিত সর্বনি¤œ প্যাকেজ মূল্যের কমে হজ এজেন্সিগুলোর প্যাকেজ ঘোষণা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। বিগত বছরগুলোতে মসজিদুল হারাম থেকে হোটেল বা আবাসনের তারতম্যের ভিত্তিতে ধর্ম মন্ত্রণালয় আলাদা দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করে আসছে। এরই আলোকে হজ এজেন্সিগুলোও একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করে হজযাত্রী ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে।
ই-হজ সিস্টেম : ই-হজ সিস্টেম চালু করেছে সৌদি সরকার। ফলে হজযাত্রীদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হয়। অনলাইনে হজযাত্রীদের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
প্রাক-নিবন্ধন : সৌদি সরকার ই-হজ সিস্টেম চালুর পর থেকে বাংলাদেশে হজের প্রাক-নিবন্ধনের নিয়ম চালু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রাক-নিবন্ধিত হজে গমনেচ্ছুদের মধ্য থেকেই ক্রমানুসারে সৌদি সরকার নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী হজযাত্রীদের পাঠনো হয়। সৌদি আরব প্রতি বছর প্রতিটি দেশের জন্য হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণ করে দেয়। নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত কোনো হজযাত্রী পাঠানো যায় না। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ও মোয়াল্লেম ফি এর টাকা জমা দিয়ে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যায়। তবে হজের আগে মূল নিবন্ধনের সময় অবশ্যই মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের তথ্য দিতে হবে। ২০১৭ সাল থেকে প্রাক-নিবন্ধন সারা বছরের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যে কেউ সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের যাওয়ার জন্য প্রাক-নিবন্ধন করে রাখতে পারেন। প্রাক-নিবন্ধনের সময় শুধু সৌদি মোয়াল্লেম ফিয়ের টাকা জমা দিতে হয়। আর লাগবে ব্যক্তির ছবি ও ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
কোন ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন : সরকারি না বেরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন সেই সিদ্ধান্ত আগেই নিতে হবে। উভয় ব্যবস্থাপনায় সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, ভিসা, টিকিট ইস্যু, হজের প্রশিক্ষণ, বিমানভাড়া, মক্কা মদিনায় থাকা ও যাতায়াতের ব্যবস্থা হজ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এর সাথে হজযাত্রীদের খাওয়ারও ব্যবস্থা করে থাকে। তবে হজযাত্রীদের কোরবানি উভয় ব্যবস্থাপনায়ই নিজ দায়িত্বে করতে হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ধর্ম মন্ত্রণালয়, আশকোনা হজ অফিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে প্রাক নিবন্ধন করতে হবে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত হজ ব্যবস্থাপনার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত এজেন্সির মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধন করতে হবে।
সূত্র : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন,
হজবিষয়ক পোর্টাল


আরো সংবাদ



premium cement