২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খেলাঘর

-

শিরিন বেগম দ্বিতীয়বারের মতো আজ শহরে এসেছেন একমাত্র পুত্র ফাহাদের বাসায়। চার বছর আগে তিনি প্রথম এখানে এসেছিলেন। সেদিন এই বাসাটাকে এখনকার মতো অত অভিজাত লাগেনি। একটা কম দামি খাট, কাঠের একটা আলমারি আর সাদাকালো টিভি ছাড়া তখন স্বল্প বেতনের চাকরি করা ফাহাদের বাসায় তেমন কিছুই ছিল না। এই চার বছরে ফাহাদের অনেক উন্নতি হয়েছে বলতেই হবে। দামি দামি ফার্নিচারে প্রতিটি কক্ষ বেশ পরিপাটি। শিরিন বেগম বিস্মিত চোখে প্রতিটি কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। ফাহাদ কী চাকরি করে যে, অল্প দিনে তার এত পরিবর্তন। গাড়িও নাকি কিনেছে তিন মাস আগে।
ফাহাদ মাকে দেখে আগের মতো খুশি হয়েছে বলেও মনে হলো না শিরিন বেগমের। আর ফাহাদের স্ত্রী কনিকা তো কখনোই শাশুড়িকে সহ্য করতে পারে না। গ্রামের বাড়িতে কনিকা যখন থাকত, শাশুড়ির সাথে প্রায়ই বিবাদ হতো। একদিন ফাহাদ বউকে নিয়ে শহরে চলে আসে। গ্রামের বাড়ির ছোট্ট ঘরে পড়ে থাকে শিরিন বেগম আর মজিবুল হক।
স্বামী মজিবুল হক ছয় মাস আগে মারা যাওয়ার পর খুব একা হয়ে গেলেন শিরিন বেগম। গ্রাম ছেড়ে আজ তিনি চিরদিনের জন্য শহরে চলে এসেছেন ছেলের কাছে। এতদিন পর মাকে দেখে খুব একটা ভাবান্তর হলো না ফাহাদের। কেমন আছো, শরীর ভালো তোÑ এই জাতীয় কয়েকটা প্রশ্ন করেই সে বারান্দায় গিয়ে ফেসবুকে ডুবে গেল। কনিকা মুখে কিছু না বললেও শাশুড়ির আগমনে যে অনেকটা বিরক্ত, সেটা শিরিন বেগম ঠিকই বুঝে নিয়েছেন।
রাতে কনিকা ফাহাদকে বলে, ‘তোমার মা হুট করে এভাবে চলে এলো কেন? কাল আমার বার্থডে পার্টি হবে শহরের সবচেয়ে বড় কনভেনশন হলে। তোমার মাকে ওখানে নেবে নাকি? যাদের ইনভাইট করেছি, তারা সবাই প্রভাবশালী। তাদের পাশে তোমার এই গেঁয়ো মাকে মানাবে না। কি করবে এখন!’ ফাহাদ নিচু গলায় বলল, ‘তুমিই বলো কী করব’? কনিকা কপালের কাছে আসা চুল সরাতে সরাতে বলল, ‘দুপুরে আমরা যখন এখান থেকে বের হবো, তুমি তোমার মাকে বলবে যে তোমার এক অসুস্থ বন্ধুকে হাসপাতালে দেখতে যাচ্ছ। তোমার সঙ্গে আমিও যাচ্ছি।’ ফাহাদ বলল, ‘ঠিক আছে। কিন্তু মা দুপুরে কোথায় খাবে?’ কনিকা বলল, ‘আমি রান্না করে দিয়ে যাবো।’
২.
সাজসজ্জায় পরীর মতো লাগছে কনিকাকে। ফাহাদ মাকে ডেকে বলল, ‘কনিকাকে নিয়ে একটু হাসপাতালে যাচ্ছি মা। আমার বন্ধু খুব অসুস্থ। আমরা বিকেলেই ফিরব মা।’ শিরিন বেগম বললেন, ‘খুব সাবধানে যাস বাবা’। বাসা থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ফাহাদ কনিকাকে বলল, ‘আমার মা খুব সহজ সরল। যে যা বলে, তাই বিশ্বাস করে। এভাবে মাকে মিথ্যা বলাটা ঠিক হয়নি।’ কনিকা ছট করে বলল, ‘তো কী করবে! তোমার গাঁইয়া এই মাকে পার্টি সেন্টারে নেবে নাকি!’
ঘড়ির কাঁটায় দুপুর আড়াইটা। শিরিন বেগম একখানা কাগজে লিখতে শুরু করলেনÑ ‘বাবা, এই নাটক আমার সাথে না করলেও পারতে। কেন মিথ্যে বলেছ? বউমাকে নিয়ে তুমি তো বন্ধুকে দেখতে হাসপাতালে যাওনি। কাল রাতে তোমার আর বউমার সব কথা আমি আড়াল থেকে শুনেছি। বউয়ের জন্মদিন পালন করবে ভালো কথা। কিন্তু মায়ের কাছে তা গোপন করতে হবে কেন! বুড়ো হয়ে গেলাম বলে! বুড়ো হয়ে গেলে আমরা তোমাদের মতো সন্তানদের কাছে গৌণ হয়ে যাই কেন? তোমার এখানে থাকলে আরো কত যে নাটক দেখতে হবে, তা আমি বুঝে গেলাম। তাই আমি আজই গ্রামে ফিরে যাচ্ছি, আমার জন্য চিন্তা করো না। পাদ্রীপাড়ায় আমার এক খালা থাকেন, আমি তার কাছেই গিয়ে থাকব। তোমরা ভালো থেকো বাবা।’
চিঠিটা ভাঁজ করে দরজায় তালা দিলেন শিরিন বেগম। পাশের বাসার কলিংবেল চাপতেই এক ভদ্রমহিলা দরজা খুললেন। শিরিন বেগম ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলেন, কনিকা আর ফাহাদ ফিরলে যেন তাদের চাবি আর চিঠিটা দিয়ে দেন। ভদ্রমহিলা এই দায়িত্ব পালন করবেন বলে হাসিমুখে জানিয়ে দিলেন।
রিকশায় চেপে বসলেন শিরিন বেগম। তিনি এখন বাস কাউন্টারে যাচ্ছেন। সেখান থেকে বাসে করে যাবেন গ্রামের বাড়ি। আর কখনো এই শহরে আসবেন না। ভুলেও না।
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না মিয়ানমারে ফিরল সেনাসহ আশ্রিত ২৮৮ জন বিএনপি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে : কাদের

সকল