২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উদ্বিড়াল

-

রোকনের ছোট মামা জাপান থাকেন। কত দিন সে মামাকে দেখে না! একসময় এই মামাই তার সব বিপদের ঢাল ছিল। তার মা যখন লেখাপড়ার জন্য চাপ দিতেন, তখন ছোট মামাই তাকে আগলে রাখতেন। এ জন্য তাকেও কম বকা খেতে হতো না। তার মা প্রায়ই বলতেন, ‘নিজে তো হয়েছিস আমড়া কাঠের ঢেঁকি! এখন আমার ছেলের পিছে লেগেছিস।’ তার মামা কখনোই এসব গায়ে মাখতেন না। রোকনের কাছে তিনি রাজ্যের জ্ঞানী লোক। ছোট মামা জানেন না, এমন কিছু দুনিয়াতে নেই। তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘লেখাপড়া করে কিছু হয় না। জগতে যত জ্ঞানী-গুণী ছিলেন তাদের সবারই ছিল জন্মগত প্রতিভা। সাধনা করে রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথ দুনিয়াতে এসেছেন রবীন্দ্রনাথ হয়েই, যা হওয়ার তা হবে। যা হওয়ার নয়, তা কখনো হবে না। ডেউয়া বড় হয়ে কাঁঠাল হয় না। কাঁঠালের জাত আলাদা। এই দুনিয়া যার ইশারায় চলে তিনি যতটুকু দেন, মানুষ ততটুকুই পান। এর বেশি নয়। আমার বড় ভাই লেখাপড়া করে বৃত্তি নিয়ে আমেরিকা চলে গেল। এখন সে ক্যালটেক ভার্সিটির অধ্যাপক। আমার মা-বাবা খুব করে চাইতেন, আমিও তার মতো হই। আমিও কি কম করে চেয়েছি? লেখাপড়া কম করেছি? কিন্তু হলো কই! বুঝলি তো? কপালে থাকতে হয়।’ রোকন সবই বোঝে। মামার সবকিছুতে শিল্পের বিভাস। এ কারণেই মামাকে রোকনের এত পছন্দ। কিন্তু বোঝে না তার মা। তার মায়ের কাছে লেখাপড়া ছাড়া জগৎ-সংসারে আর কোনো কাজ নেই।
গোধূলির নরম আলোয় শান বাঁধানো পুকুরপাড়ে বসে আছেন ছোট মামা। গায়ে সাদা চাদর। মামাকে ধ্যানী দরবেশের মতো লাগছে। আনমনে পুকুরের স্থির পানিতে চেয়ে আছেন। আকাশে ভাঙা বাসনের মতো এলোমেলো মেঘ। পুকুরের পানিতে প্রতিফলন হয়েছে। মনে হচ্ছে মামার মনের কষ্টগুলো মেঘ হয়ে আকাশে ভাসছে। রোকন কিছুক্ষণ থোম হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দেখল মামার কোনো ভাবান্তর নেই। রোকন ডাক দিতেই মামা মাথা তুলে তাকালেন। দার্শনিকের মতো কথা বলা শুরু করলেন। ‘বুঝলি, আমি বড় হয়ে গেছি। এ সংসারে কেউ কারো দায়িত্ব নেয় না। নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়। সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিচ্ছেন বাবা। বাংলার সজল বরষা দেখে আর মুগ্ধ হবো না। বাস্তবতার মুখোমুখি হবো। নিজের অন্ন নিজে জোটাব। এ রকম দিন একদিন তোরও আসবে।’
সত্যি সত্যি একদিন মামা জাপান চলে গেলেন। রোকন ভাবলেন, মামা কিছু দিনের মধ্যেই ফিরে আসবেন। জাপানে মামার মন টেকবে না। কিন্তু দিন যায়, মাস যায়, মামা আসেন না। সামনে পৌষ মাসে ১০ বছর পূর্ণ হবে। মামা জাপান যাওয়ার সময় ধনুর্ভঙ্গপণ করেছিলেনÑ প্রতিষ্ঠিত না হয়ে আসবেন না।
রোকন শুনেছে মামা পৌষ মাসেই আসবেন। মামাবাড়িতে উৎসবের আমেজ। সবচেয়ে বেশি খুশি রোকন। ছোট মামা মানেই চমক। অবশেষে মামা এলেন। বিশাল বড় বড় লাগেজ নিয়ে। বাড়ির সবার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে এসেছেন। তবে রোকনের জন্য বাড়তি চমক। মামা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। দুই দিন গেল ঘুমাতে ঘুমাতে। মামার অনেক বন্ধু-বান্ধব আসতে লাগল। মামা জাফরান লাল রঙের লাগেজটা খুলে বিড়ালের মতো কী যেন বেড় করলেন। ‘এটা কী?’ রোকন জিজ্ঞেস করল। মামা হেসে বললেন, ‘এটাই তোর চমক। রোবট উদ্বিড়াল। রিমোটে চলে। নদীতে ছেড়ে দিলে মাছ ধরে পাড়ে ফিরবে।’ রোকন যারপরনাই খুশি। তার আর তর সইছে না। কখন উদ্বিড়ালটার পরীক্ষা নেবে! বাড়ির পাশেই পদ্মা নদী। রোকন আর তার মামা নদীর পাড়ে চলে গেল। অন্যরা এখনো বুঝতে পারেনি। রোবটটা নদীতে ছাড়তে রোকনের খুব ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে ছাড়লেই হারিয়ে যাবে। তার মামা পানিতে ছাড়লেন। রিমোট টিপলেন। নাহ্, মাছ নেই। কিছুক্ষণ পর মামার চোখে-মুখে আনন্দের রোশনাই। মাছ পেয়েছে! মাছকে ফলো করছে! ধরে ফেলেছে! মামার উল্লাস। রিমোট টিপে রোবটটাকে পাড়ে আনল। অনেক বড় একটা রিঠা মাছ ধরেছে। রোকন খুব খুশি। মামা আগের মতোই আছেন। ভারী ভারী কথা বলা শুরু করলেন, ‘অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে খুঁজলে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। সবাই সব কিছু দেখে না। সবার চোখের সামনে একটি পর্দা থাকে। কেউ কেউ এ পর্দা সরিয়ে দেখতে পারে। সেই-ই আর দশজন থেকে আলাদা হয়। কত সুন্দর রোবট জাপানিরা বানিয়েছে! জানিস, জাপানিরা খুব পরিশ্রমী। আর পরিশ্রম ছাড়া কিছু হয়ও না। যেকোনো অর্জন পরিশ্রম দাবি করে।’


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল