২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হরিলুট

-

হুদা সাহেবের ক্ষুধা লাগে না। যেটুকু লাগে তাতেও ডাক্তারের এই নিষেধ সেই নিধেষ। এটা খাওয়া যাবে না, ওটা খাওয়া যাবে না। মানে এক কথায় তার জীবনজুড়ে এখন হাজারো ‘না’-এর সম্মিলন। শরীরে নানা রোগ বাঁধিয়ে জীবন সায়াহ্নে এখন তিনি চার দেয়ালে বন্দী। অথচ যখন শরীরে শক্তি ছিল, খাবার রুচি ছিল, তখন না খেয়ে খেয়ে তিল তিল করে এই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। জীবনের এই বয়সে এসে যখন একটু আরাম করবেন, ইচ্ছেমতো খাবেন, তখনই নানা ধরনের রোগ ঘিরে ধরেছে তাকে। কে বোঝে তার ব্যথা? যাদের জন্য তিনি এই সম্পদ গড়েছেন তারা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। বড় ছেলে আর বউ থাকে আমেরিকায়। ছোটটি সপরিবারে কানাডায়। মেয়েটি বিয়ে দিয়েছেন বড় ব্যবসায়ীর ছেলের সাথে। তারাও আছে নিজেদের মতো করে। মাঝে মাঝে ফোন করে। কিন্তু হুদা সাহেব সেই ফোনে কোনো আন্তরিকতার গন্ধ পান না। সবাই তার সাথে ভদ্রতা করে। একেবারেই খোঁজখবর বা ফোনটোন না করলে যদি কিছু মনে করে, তাই মাঝে মাঝে ফোন করে জানতে চায়Ñ বাবা, তোমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে তো? হুদা সাহেবের স্ত্রী বিয়োগ হয়েছেন দু’বছর হলো। স্ত্রী বেঁচে থাকতেও বাড়িটা কেমন জমজমাট ছিল। এতবড় বাড়ি এখন মনে হয় বিরান ভূমি। একজন কেয়ারটেকার, একজন মালি, রান্না করে দেয়ার মতো একজন আয়া আছেন। তারাই এখন হুদা সাহেবের চার পাশ ঘিরে থাকে।
নিজের সন্তানরা সব ব্যস্ত নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে। একটা সময় হুদা সাহেবও যেমন ব্যস্ত ছিলেন। আজ যেন সব ব্যস্ততা ছুটি নিয়েছে তার কাছ থেকে। বড় তাড়াতাড়ি সময়গুলো শেষ হয়ে গেল। হুদা সাহেব বালিশে মাথা দিয়ে এসব ভাবেন আর অগোচরে চোখ ভেজান। অথচ একটা সময় এ বাড়িজুড়ে ছিল কত কোলাহল। নানা দিকের আত্মীয়স্বজন বছরজুড়ে পড়ে থাকত তার বাড়িতে। কতজনই তার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজ নিজ ক্যারিয়ার গড়েছে। তার উপার্জিত সম্পদ নিজের মতো করে ব্যবহার করেছে। কেউ গোচরে কেউ অগোচরে। হুদা সাহেব বুঝতে পারতেন তার বাড়িতে হরিলুট চলছে। তাও নানা কথা ভেবে কাউকে কিছু বলা হয়নি। মনে মনে সান্ত¡না নিতেন যদি ওরা ভালো থাকে, ভালো কিছু করতে পারে। হয় হোক আমার কিছু সম্পদের হানি। কিন্তু হুদা সাহেব যাদের জন্য এত কিছু করলেন তারা আজ কেউ তার পাশে নেই। জীবনের এই অন্তিমলগ্নে কেউ একদিন খোঁজও নিলো না। এটাই তার আফসোস। যখন অর্থ ছিল, খাবার শক্তি ছিল, তখন খাননি সম্পদ কমে যাবে বা নষ্ট হওয়ার ভয়ে। আজ যখন এত এত সম্পদ তখন খাবার ইচ্ছে থাকলেও তিনি খেতে পারছেন না। পকেটে লাখ টাকার বান্ডেল, চোখের সামনে পছন্দের সব প্রিয় খাবার, কিন্তু সে খাবারগুলো খেতে তার হাজার বাধা। খাবার খেয়ে ভোগান্তির চেয়ে না খাওয়া ভালোÑ এই ধর্মই পালন করছেন তিনি।
বড় ছেলে আর মেয়ের ঘরে দু-দুটো নাতি আর নাতনি রয়েছে হুদা সাহেবের। তারা মাঝে মাঝে ফোন করে দাদু আর নানুর কাছে বড় বড় আবদার করে। প্রথম দিকে তিনি তাদের সে আবদার যথাসম্ভব পূরণ করেছেন। এখন আর অত সহজে তিনি নরম হন না। নাতিদের শুনিয়ে দেনÑ তোদের বাবা-মাকে তো অনেক দিয়েছি। সবাইকে ভালো থাকার জন্য যা যা করণীয় সব করে দিয়েছি। তোদের বাবা-মারা ইচ্ছে মতোন যখন যা খুশি বাবার কাছ থেকে নিয়েছে। তোরাও একটু বাবার কাছে চেয়ে দেখ। তারা তো আর অসচ্ছল নয়। এখনো কেন দাদুর কাছে চাইতে বলে? দাদুর সময় শেষ। এবার বাবা-মার কাছে চাও। তোমার বাবা-মাদের বোঝা উচিত সন্তানের চাহিদা পূরণ করতে কত কী লাগে? তারা কী পরিমাণ তোমার এই বুড়ো দাদুর কাছ থেকে নিয়েছে। কিন্তু এই বুড়ো বাবার ক্ষেত্রে কতটুকুই বা দায়িত্ব পালন করেছে? বাবাকে তারা ব্যবহার করেছে অর্থের প্রয়োজনে। বাবার সম্পদকে হরিলুট ভেবেছে সবাই। বাবার সম্পদ দিয়ে সবাই যে যার মতো জগত করে নিয়েছে। এখন আর বাবাকে প্রয়োজন পড়ে না।
হুদা সাহেব সব সন্তানের জন্য দায়িত্বের চেয়েও বেশি কিছু করে দিয়েছেন। এখনো তার অঢেল সম্পদ পড়ে আছে। আর এই সম্পদের প্রতি সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনের সবার লোলুপ দৃষ্টি। হুদা সাহেব সেটা নিখুঁত বুঝতে পেরেছন। আর তিনি ভালো করেই জানেন তার এই অবশিষ্ট সম্পদ যদি সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয় তবে তা ভালো কোনো কাজে ব্যবহার হবে না। এ সম্পদ তার হরিলুট হয়ে যাবে। তাই সবার অগোচরে তিনি সব সম্পদ ট্রাস্টি করে রেখেছেন। সম্পদগুলো যাতে মানুষের কল্যাণে লাগে।
মোহাম্মদপুর, ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement
এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি

সকল