১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

মোবাইলের সূত্র ধরে ১১ মাস পর ব্যবসায়ীর কঙ্কাল উদ্ধার, আটক পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকা

নিহত ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, পাশে কঙ্কাল উদ্ধার অভিযান ও স্বজনদের আহাজারি। নিচে পুলিশের ব্রিফিং, আটক প্রেমিক মফিদুল ও শাকিল - ছবি : নয়া দিগন্ত

বগুড়ার সোনাতলায় নিখোঁজের ১১ মাস পর বস্তাবন্দী লাশের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমের জের ধরে স্ত্রী ও তার প্রেমিক, ছেলে ও ভাগিনা ওই ব্যবসায়ীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দী করে রেললাইনের পাশে পুঁতে রেখেছিলেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত চার ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে।

স্থানীয় লোকজন ও থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ রানীরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল করিম ওরফে দুদু মিয়ার পুত্র মরিচ ব্যবসায়ী মোঃ রফিকুল ইসলাম ২০১৯ সালের ১৫ জুন নিখোঁজ হয়েছে বলে ১৫ দিন পর ১ জুলাই সোনাতলা থানায় একটি জিডি করেন রফিকুল ইসলামের ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম ।

পুলিশ জানায়, নিহত রফিকুল ইসলাম মরিচ ব্যবসায়ী। তার সাথে ব্যবসা করতেন একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মহিদুল ইসলাম (৪০)। ব্যবসায়িক পার্টনারের কারণে মহিদুল ইসলাম রফিকুল ইসলামের বাড়িতে অবাধে যাওয়া আসা করতেন। একপর্যায়ে রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনা বেগমের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন মহিদুল।

এরপর তারা দু’জন (মহিদুল ও রেহেনা) মিলে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ১৪ জুন হাট থেকে মরিচ বিক্রি করে রাতে বাড়ি ফেরেন রফিকুল ইসলাম। পরিকল্পনা মতো খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে রাতে খাবার দেন স্ত্রী রেহেনা বেগম। রফিকুল খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লে অচেতন হয়ে পড়েন। এ সুযোগে স্ত্রী রেহেনা বেগম, তার বোনের ছেলে শাকিল হোসেন ও পরকীয়া প্রেমিক মহিদুল ইসলাম মিলে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন।

এরপর গভীর রাতে রফিকুল ইসলামের লাশ বস্তাবন্দী করে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নয়াপাড়া সেতুর ভাটি নামক স্থানে রেল লাইন-সংলগ্ন মহিদুল ইসলামের নিজের ধানের জমির এক কোণে পুঁতে রাখেন।

দীর্ঘদিন সোনাতলা থানা পুলিশ ওই ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান চালায়। এর একপর্যায়ে গত ১৩ মে নিহত ব্যক্তির শ্যালিকা ও একই উপজেলার তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের দাউদেরপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৭) বড় বোনের বাড়ি ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজে সহযোগিতা করার জন্য দক্ষিণ রানীরপাড়া গ্রামে আসেন। সেখানে ২-৩ দিন অবস্থান করার একপর্যায়ে ব্যাগের মধ্যে রেখে মোবাইল ফোনটি চার্জ দেয়ার পর বৈদ্যুতিক সকেটে লাগান। এ সময় খালার ব্যাগে বাবার উইনম্যাক্স মোবাইল ফোনটি দেখে ফেলেন ভাগিনা।

এ সময় নিহত রফিকুল ইসলামের ছেলে ওয়াসিম হোসেন (১৭) ওই মোবাইলটি নিজের কাছে রেখে দেয়। একপর্যায়ে খালা মোবাইলটি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তখন বিষয়টি তিনি তার চাচাদের জানান। বিষয়টি আঁচ পেয়ে শ্যালিকা ফাতেমা বেগম কৌশলে ওই বাড়ি থেকে সটকে পড়েন।

এরপর পুরো ঘটনাটি স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধিকে জানান নিহত ব্যক্তির ছেলে ও ভাইয়েরা। ওই জনপ্রতিনিধি নিহত ব্যক্তির মোবাইল ফোন উদ্ধারের বিষয়টি থানা পুলিশকে জানান। পুলিশ ওই মোবাইল ফোনের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার রাতেই ওই ঘটনার সাথে জড়িত স্ত্রী রেহেনা বেগম (৩৫), প্রেমিক মহিদুল ইসলাম (৪২), ভাগিনা শাকিল মিয়া (২৫) ছেলে জসিম মিয়াকে (১৬) আটক করে।

আটক ব্যক্তিরা পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর শুক্রবার বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞার নেতৃত্বে সোনাতলা থানা পুলিশ ১১ মাস আগে নিখোঁজ সেই ব্যক্তির বস্তাবন্দী কংকাল উদ্ধার করে। লাশ উত্তোলনের সময় স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলে হাজার হাজার উৎসুক লোকজন কেউ তাদের চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি।

সোনাতলা থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মাসউদ চৌধুরী জানান, ১১ মাস আগে স্ত্রী রেহেনা বেগম তার প্রেমিক মহিদুল ইসলামের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ বেগুনের তরকারির মধ্যে স্বামীকে রাতে খাওয়ান। এতে রফিকুল ইসলাম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে স্ত্রী ও তার প্রেমিক শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। আর এ কাজে সহযোগিতা করে রেহেনা বেগমের ভাগিনা শাকিল মিয়া ও ছেলে জসিম।

থানার জিডি
এ ব্যাপারে ভাগিনা শাকিল পুলিশকে জানান, ঘটনার দিন তার খালা রেহেনা বেগম তার ছেলে জসিমকে দিয়ে মোবাইল ফোনে তাকে বাড়িতে ডেকে আনেন তাদের দল ভারী করার জন্য। আটক শাকিল মিয়া ওই হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ জানান।

লাশ উদ্ধারের পর বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা সাংবাদিকদের জানান, পরকীয়া প্রেমের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আটক চার ব্যক্তি সম্পৃক্ততা থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement