২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঠিয়া মহিলা কলেজ পরিদর্শনে এসে যা দেখলেন ইউএনও

পুঠিয়া মহিলা কলেজ পরিদর্শনে এসে ক্ষুব্ধ হয়েছেন ইউএনও - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি ছাড়াই চলছে রাজশাহীর পুঠিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজ। অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের সাথে কিছু শিক্ষকদের বিশেষ সমঝোতা থাকায় তারা আসছেন ইচ্ছেমতো। আবার অনেক শিক্ষক কলেজে না এসে মাস শেষে গড়হাজিরা দিয়ে বেতন নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওলিউজ্জামান আকস্মিক অভিযানে এসে এর সত্যতা পান। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারী দিয়েছেন।

একাধিক শিক্ষক অভিযোগ তুলে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ কোনোদিনই যথাসময়ে কলেজে আসেন না। উপাধ্যক্ষও রাজশাহী শহরে থাকার অজুহাতে কলেজে আসেন সকাল ১১টার সময়। তিনি এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে দুপুর ১২টার আগেই আবার বাড়ি ফিরেন। কলেজে এমনও শিক্ষক আছেন যারা অধ্যক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। অথচ মাস শেষে বেতন নেয়ার দিনে কলেজে এসে হাজিরা খাতায় অনুপুস্থিত দিনগুলোর স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক ছাত্রী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, কলেজে কখন ক্লাস শুরু হবে তার কোনো সময়সূচি নেই। আমরা সকাল ৯টার দিকে কলেজে এলেও শিক্ষকরা আসেন ১০টার পর। এরপর শিক্ষকরা বিভিন্ন গল্পগুজব শেষে ইচ্ছে হলে ক্লাসে আসেন। আবার অনেকেই গল্প শেষে বাড়ি ফিরে যান। শিক্ষকদের এমন অবহেলা ও কর্মকান্ডে প্রায় বেশির ভাগ ছাত্রী ক্লাসে না এসে প্রাইভেটে বেশি মনোযোগী হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২০১৬ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে সরকারী অর্থ আত্মসাত ও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে এসে এর প্রমাণ পেয়েছেন। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপসচিব নুসরাত জাবীন বানুর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় কলেজ অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমান তার শ্যালক ওই কলেজের প্রভাষক আব্দুর রউফ গত চার বছর আট মাস অনুপস্থিত ছিলেন। অথচ অধ্যক্ষ ভুয়া স্বাক্ষর করে আব্দুর রউফের নামে বেতন-ভাতাদির প্রায় ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত টিম তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে আব্দুর রউফের নামে উত্তোলনকৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। অপরদিকে প্রভাষক আব্দুর রউফ ও অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের বেতন-ভাতাদি সাময়িক বন্ধ রাখাও হয়েছিল।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ফয়েজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সবগুলোই মিথ্যা। আমি প্রতিদিন সময়মতো কলেজে আসি। আর গত বুধবারে কলেজের কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম তাই আসতে কয়দিন দেরি হয়েছে। সে সুযোগে কোনো কোনো শিক্ষক কলেজে আসেননি হয়তো।’

ছুটি ও কলেজের সভাপতির অনুমতি ছাড়াই কিভাবে ঢাকায় গেলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি ব্যস্ত বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে পুঠিয়া মহিলা কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওলিউজ্জামান বলেন, কলেজের শিক্ষকরা সময়মতো উপস্থিত থাকেন না এ বিষয়গুলো আমি শুনেছি। তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে আকস্মিক অভিযানে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের এমন কর্মকান্ডে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। আর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো অভিযোগ হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement