২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঠাকুরগাঁও-১ আসন

মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে ৫ জন

মির্জা ফখরুল - ছবি : সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও ১ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলে তেমন যোগ্য কেউ না থাকায় আর কারো নাম শোনা যাচ্ছে না, আর কারো প্রচারও নেই। অন্য দিকে বিগত কয়েক বছরের সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে এখানে আওয়ামী লীগের অবস্থান ও ফলাফল ছিল ইতিবাচক। ১৯৯৬ সালসহ বিগত চারটি নির্বাচনের মধ্যে তিনবার বিজয় লাভ করেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। সামনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও তিনি নিজেকে দলের যোগ্যতম প্রার্থী বলে মনে করছেন।

তবে তারুণ্য ও তৃণমূল নেতাদের সাথে দূরত্বসহ অযোগ্যতার প্রশ্ন তুলে নৌকার হাল ধরতে মনোনয়ন যুদ্ধে রয়েছেন ছয় নেতা। 

নৌকার মাঝির প্রতিযোগিতায় পাঁচ নেতা : আওয়ামী লীগের বর্তমান সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের বিপরীতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাদেক কুরাইশি। ২০০৫ সাল থেকে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালে জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব লাভ করেন। আর ২০১৬ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। সাদেক কুরাইশী জানান, ‘কর্মী-সমর্থকেরা সংসদ নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করছেন। এ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। তবে দলীয় নির্দেশ মেনে নেব। অন্য দিকে রয়েছেন তারুণ্যের অহঙ্কার, রাজনীতির কঠিন সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত সৈনিক সদর আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক অরুণাংশু দত্ত টিটো। তিনি গত ২০১৬ সালের ১৯ মে-তে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ নির্বাচনে তিনি এক লাখ ১৯ হাজার ভোট পেয়ে হেরে যান। টিটো জানান, তার প্রতি ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ তরুণ সমাজের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। তিনি জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই তাকে সমর্থন দেবেন। নেত্রী চাইলে এ আসনে দাঁড়াবেন তিনি। এ ছাড়াও মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন বাবু, গত মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাহমিনা আখতার মোল্লা। 

এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজী চৌধুরী। এরা সবাই গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ১৪ দলীয় জোট না হলে ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরী নির্বাচন করবেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জেলা সভাপতি মনসুর আলীও দলের পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমর্থক রয়েছেন। অবস্থা বুঝে নির্বাচনের কারণে তারা বরাবরের মতো বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। 

বিএনপিতে একক মির্জা ফখরুল : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতিতে আসার আগে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক ছিলেন। পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার বেশ সুনাম ছিল। ফলে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে তার অনেক শুভাকাক্সক্ষী রয়েছে।

ছাত্রাবস্থায় ছাত্র ইউনিয়ন থেকে রাজনীতির সূত্রপাত হলেও ১৯৮৯ সালে নির্দলীয়ভাবে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মির্জা ফখরুল। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তবে ২০০১ সালে জয়ী হওয়ার পর বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মির্জা ফখরুল। পাঁচ বছর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের পর ভারমুক্ত হন মির্জা ফখরুল। এবারের নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। নির্বাচনকে উপলক্ষ করে এলাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন তিনি। তাই দুই ঈদ ও অন্যান্য সামাজিক উৎসবে কী মৃত্যুতে তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন। 

বর্তমান জেলা বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। এ আসনে তার কোনো বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।’ 

সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও যেকোনো একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে দলকে। সে ক্ষেত্রে মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন দলীয় প্রার্থী। এ আসনে বর্তমান মোট ভোটারসংখ্যা রয়েছে চার লাখ ২১ হাজার ৬২। তবে এক লাখেরও বেশি রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট। 

নৌকার সমর্থকেরা বৈঠা হাতে দেখতে চান তরুণদের : ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এ আসনে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন রমেশ চন্দ্র সেন। ২০০১ সালে তিনি মির্জা ফখরুলের কাছে হারলেও ২০০৮ সালে এ আসন পুনরুদ্ধার করেন। সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে আবার নির্বাচিত হন তিনি। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব আর স্পষ্ট হলেও তিক্ত কথা বলার কারণে এবার নতুনরা কোমর বেঁধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারা।
তরুণ নেতাদের বক্তব্য রমেশ চন্দ্র সেন এলাকায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু এই সংসদ সদস্যকে নিয়ে অসন্তোষ আছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। কিছু ভুল সিদ্ধান্ত, বয়সে বৃদ্ধ হওয়ায় দলের বিভক্তি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে দলের ছয় তরুণ নেতা মনোনয়ন লাভে লবিং শুরু করেছেন দলের শীর্ষপর্যায়ে। 

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কোনো প্রয়োজনে রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে গেলে তিনি গ্রাহ্য করেন না। এ কারণে অনেক তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে রমেশ চন্দ্র সেনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। 

রব উঠেছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম খাদেমুল ইসলামের ছেলে আমেরিকান কূটনীতিক তরুণ শাহেদুল ইসলাম শাহেদকে নিয়ে, ফেসবুক-টুইটার বা বাজারে-হোটেলে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলার কৃতী সন্তান শাহেদকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। শাহেদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে তার নেক নজরে রয়েছেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে। তার মনোনয়ন প্রাপ্তি সম্পর্কে দলের উচ্চ মহলের সমর্থনও রয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী মকবুল হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশের অনেক বয়স হয়েছে। তিনি এখন জাতীয় পর্যায়ের বড় পদে থাকায় এলাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে চাইছেন বলে আমি প্রার্থী হতে চাচ্ছি।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী অরুণাংশু দত্ত টিটো বলেন, দলের তৃণমূল কর্মিসভায় বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তাকে প্রার্থী করা হলে তিনি যে কোনো প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পাবেন। তবে মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাবেন বলে জানান তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement