২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এনায়েতপুরে যমুনায় আবারো তীব্র ভাঙন

বিলীন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ ৫৫ ঘরবাড়ি, ভাঙনরোধে নেই কোনো ব্যবস্থা
-

সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এনায়েতপুরে আবারো তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আর হুমকির মুখে পড়েছে দেশের বৃহৎ কাপড়ের হাট, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, আঞ্চলিক সড়কসহ ৫টি গ্রামের প্রায় ২৭ হাজার ঘরবাড়ি ও তাঁত কারখানা। এদিকে ভাঙনরোধে পাউবো কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এলাকাবাসী দ্রুত ভাঙনরোধে প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত তিন দিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি চর ও জালালপুরের অন্তত ৫৫টি ঘরবাড়ি, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রাহ্মনগ্রাম কবরস্থান, মসজিদ ও মাদরাসাসহ বহু ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে গেছে। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পশ্চিম তীরে অবস্থিত এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মণগ্রাম-আড়কান্দি থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের হাট, সিরাজগঞ্জ-পাচিল আঞ্চলিক সড়ক, তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ মাঠসহ বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নদী তীরে অবস্থিত পাঁচটি গ্রামের অন্তত ২৭ হাজার ঘরবাড়ি ও কয়েকশ’ একর আবাদি জমি রয়েছে হুমুকির মুখে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত মানুষের আহাজারি নদী ভাঙন দেখতে প্রতিদিনই দূরদূরান্তের মানুষ আসছে। কিন্তু পাউবো কর্র্র্তৃপক্ষ কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির তরফ থেকে ভাঙনরোধে নেয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নেয়া না হলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী এনায়েতপুরের বহু স্থাপনা। এঘটনায় তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

আজ বুধবার সকালে ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরে গিয়ে জানা গেছে, যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো জলিল সরকার, আবুল কাশেম, জমিলা বেগম, হাওয়া খাতুন ও নার্গিস খাতুনের বাড়িসহ প্রায় ৫৫টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এসময় ফলদ ও কাঠ বাগান নদীতে বিলীন হয়েছে।

আড়কান্দি চরের বাসিন্দা এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম শামীম হক জানায়, নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ঈদের পর থেকে যমুনা রুদ্ররূপ ধারন করেছে। প্রবল ¯্রােতে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে প্রতিদিনই বিশাল বিশাল এলাকা দেবে যাচ্ছে। সবাই ঘরবাড়ি সরানো নিয়ে ব্যস্ত ঈদের কোনো আনন্দ এদের মধ্যে নেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী বলেন, গত বছর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, এমপি ও পাউবো কর্মকর্তারা নদী ভাঙন পরিদর্শনে এসে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেও এর কোনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এলাকাবাসী ত্রাণ নয় এখন তীর রক্ষা বাঁধ চায়।

এ বিষয়ে খুকনী ইউপি চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া ও জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, যমুনার রাক্ষুসী থাবা এক সপ্তাহ স্থায়ী হলে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি চর ও জালালপুরের বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এখনই ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষা, চিকিৎসা ও তাঁত শিল্পের এলাকার শত শত মানুষকে সম্বল হারিয়ে পথে বসতে হবে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাজমুল হুসাইন খাঁন বলেন, এনায়েতপুরের নদী ভাঙনের বিষয়ে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। ভাঙনের ভয়াবহতা রোধে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। আশা করছি দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement