২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্মার্টফোন আসক্তি কমবে কি?

-

স্মার্টফোন দিয়ে কি কি করা যেতে পারে, ব্ল্যাকবেরি তা প্রথম দেখিয়ে দিয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে বাজারে এলো আইফোন। মানুষ যেন মিনি-কম্পিউটার হাতে পেয়ে গেল। শুধু ফোনকল আর বার্তা পাঠানোর বাইরেও যে কিছু করার আছে, মানুষ তা শিখে গেল। এরপর থেকে
স্মার্টফোন হয়ে উঠেছে প্রতিদিনের সঙ্গী। তবে বর্তমানে স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্মার্টফোন ছাড়া এখন অনেকেই অচল। স্মার্টফোন আসক্তির আদ্যপান্ত নিয়ে লিখেছেন সুমনা শারমিন

স্মার্টফোন ছাড়া এক দিনও চলে না অনেকের। এই বাস্তবতার মুখোমুখি এখন কমবেশি সবাই। তবে কিছু মানুষ আছেন, সারা দিন স্মার্টফোনে চোখ ডুবিয়ে থাকেন। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছেÑ আশপাশের মানুষের সাথে কথা না বলে অনেক মানুষ স্মার্টফোনের টাচস্ক্রিনের দিকে চেয়েই সময় পার করে দেন। কয়েক বছর আগেও এমন চিত্র ছিল না। তখন ছিল ফিচার ফোনের যুগ। ফোনে ইন্টারনেট-সুবিধা থাকা মানে বিলাসিতা বলেই মনে করা হতো।
১৯৭৬ সালে বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের হাতে কম্পিউটার পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন স্টিভ জবস। চার দশক পর অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত সাবেক প্রধান নির্বাহীর স্বপ্ন অনেকটাই বাস্তবে রূপ পেয়েছে। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের হাতে স্মার্টফোন পৌঁছেছে।
খুব কম সময়ে দূর-দূরান্তের খবর হাতের মুঠোয় এনে দেয় এই স্মার্টফোন। রাস্তা হারিয়ে ফেললে স্মার্টফোনই চিনিয়ে নিয়ে যায় গন্তব্যস্থল। এরকমই প্রচুর সুবিধা মানুষকে এনে দেয় স্মার্টফোন। কিন্তু শুধুই কি সুবিধা? স্মার্টফোনের ব্যবহার যেভাবে বাড়ছে, তাতে অনেকেই স্মার্টফোন অ্যাডিকশনে আক্রান্ত।
বিশ্বের অসংখ্য মানুষের দাবি, ফেসবুক ক্রমবর্ধমান সমস্যা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ফেসবুকের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য তৃতীয় পরে প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে যাচ্ছে। অনেক সময় ফেসবুক গ্রাহক তথ্যের মাধ্যমে বড় অঙ্কের ব্যবসা করছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে জোরালো সমালোচনা শুরু হয় ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারির পর। রাজনৈতিক পরামর্শক ও ডাটা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানটির একটি অ্যাপ নিজেদের প্লাটফর্মে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল ফেসবুক, যা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তাদের অ্যাপের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীর পাশাপাশি তাদের বন্ধু তালিকার অন্যদেরও তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরের পে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের হাতিয়ে নেয়া তথ্য নির্বাচন প্রভাবিত করতে ব্যবহার করে।
স্মার্টফোনের কল্যাণে তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল মাধ্যমে সবসময় সক্রিয় থাকছে। এর জন্য শুধু ফেসবুক এককভাবে দায়ী নয়। ডিজিটাল মাধ্যম আসক্তি শুধু ফেসবুকের সমস্যা বা ‘কিডস’ ইস্যু নয়। স্মার্টফোন ডিভাইস উন্মোচনের এক দশক পর এখন প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের জীবনযাপনে বড় ধরনের ডিজিটাল রূপান্তর এসেছে। বিশ্বের অসংখ্য মানুষ সর্বদা ই-মেইল, মেসেজিং, শপিং, ব্যাংকিং ও সোস্যাল নেটওয়ার্কিংসহ অসংখ্য ডিজিটাল সেবার সঙ্গে সংযুক্ত থাকছেন, যা সম্ভব হচ্ছে স্মার্টফোনের মতো মোবাইল ডিভাইসের কারণে। কম্পিউটিংয়ের প্রায় সব সুবিধা এখন স্মার্টফোনে মিলছে। তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ সর্বদা সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, গেমিং কিংবা বিনোদন অ্যাপে সময় ব্যয় করছে। মোবাইল ডিভাইসের উত্থান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ সহজ করেছে ঠিকই। এসব ডিভাইস সম্পর্কে মানুষ যতটা না জানে, তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে অনেক পরিবারেই দেখা যায়, বড়দের তুলনায় ছোটরাই মা-বাবার স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট বেশি ব্যবহার করছে। এমনকি এতে তারা অভিভাবকদের চেয়ে বেশি পারদর্শিতাও অর্জন করে ফেলেছে। অনেক শিশুর েেত্র এটা রীতিমতো আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। শিশুরা মা-বাবার ফোন নিয়ে এত বেশি সময় কাটাচ্ছে যে, অনেক অভিভাবকই এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
স্মার্টফোন শিশুর আসক্তি এমনপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অ্যাপলের বিনিয়োগকারীরা পর্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছে পড়েছেন। বিনিয়োগকারীদের প থেকে এরই মধ্যে আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যাতে এমন সফটওয়্যার উন্নয়ন করেন, যা শিশুরা কতণ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে, তা সীমিত করে দেবে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে অ্যাপলের বিনিয়োগকারী দুই প্রতিষ্ঠান জানা পার্টনার্স ও ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট টিচারস রিটায়ারমেন্ট সিস্টেমের প থেকে এক চিঠিতে অ্যাপলকে ডিজিটাল লক ব্যবস্থা চালুর আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, শিশু-কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার যে প্রভাব ফেলছে, তা অ্যাপলকে বিবেচনায় নিতে হবে। চিঠিতে প্রতিষ্ঠান দুটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, অ্যাপল যদি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের ব্যাপারে কোনো পদপে না নেয়, তাহলে তাদের সুনাম ও শেয়ারমূল্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি টিনএজার মনে করে, তাদের মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি ঘিরে তারা এক ধরনের আত্মপীড়া বোধ করে যে, তাদের কোনো মেসেজ এলে সঙ্গে সঙ্গেই তার জবাব দিতে হবে। সার্বিক বিবেচনায় কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসের উল্লেখযোগ্য সাফল্য মানবসমাজের জন্য অনিচ্ছাকৃত কিছু পরিণতিও এনেছে। কম্পিউটিং ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন আসক্তি এবং মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এরই মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্মার্টফোন নির্মাতাদের উচিত ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন আসক্তি মোকাবেলা করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
স্বর্ণের দাম ভরিতে কমলো ১১৫৫ টাকা গাজায় গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানালো উত্তর আয়ারল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার হোসেনপুরে চাঞ্চল্যকর সবুজ মিয়ার হত্যায় ভাতিজা গ্রেফতার দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় সীমান্তে গুলির শব্দ নেই, তবুও আতঙ্কে স্থানীয়রা রাঙ্গাবালীর খালে পাওয়া টর্পেডো উদ্ধার করেছে নৌ-বাহিনী লক্ষ্মীপুরে বিজয়ী ও পরাজিত উভয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আটক ৩৪ বছরেও মুছেনি ভয়াল ২৯ এপ্রিলের দুঃসহ স্মৃতি যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড উত্তর ইসরাইলে হামাসের রকেট হামলা প্রচণ্ড গরমে বেতাগীতে ৪ শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অসুস্থ

সকল