২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলার মাটিতে রাজাকার, খুনী, তাদের দোসরদের কোনো স্থান হবে না : প্রধানমন্ত্রী

-

বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় স্বাধীনতাবিরোধীদের অভিযুক্ত করে বলেছেন, বাংলার মাটিতে রাজাকার, খুনী এবং তাদের দোসরদের কোনো স্থান হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজাকার, খুনী, আলবদর এবং আল শামস এবং ’৭৫’র ১৫ আগস্ট এবং ৩ নভেম্বরের খুনীদের যারা দোসর, খুনীদের মদদদাতা তাদের কারো স্থান বাংলার মাটিতে ভবিষ্যতে কোনোদিন ইনশাআল্লাহ হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়িস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে সেভাবেই চিন্তা করতে হবে, এই দেশ যেন আবারো ওই খুনীদের রাজত্ব না হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা যেন অব্যাহত থাকে। গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছে, শহীদ হয়েছে, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। ব্যর্থ হয় নাই এবং ভবিষ্যতেও আর কেউ তা ব্যর্থ করতে পারবে না।’

চলমান সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি ও মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান সেটা অব্যাহত থাকবে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্মরণসভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন এবং স্মরণ সভাটি পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক মো: আমিনুল ইসলাম।

স্মরণসভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এবং অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানকও বক্তৃতা করেন।

আরো বক্তৃতা করেন, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি অ্যাডভোকেট রহমত উল্লাহ এমপি এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং খুনীদের এদেশে বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে। এদের যারা দোসর বা ষড়যন্ত্রকারী হয়তো আজকে আমরা তাদের বিচার করে যেতে পারলাম না বা হয়তো আমরা চেষ্টা করবো বা আগামীতে যারা আসবে, কোনো না কোনো দিন, এই ষড়যন্ত্রকারীরাও একসময় ধরা পড়বে। তাদের এই রহস্য উদঘাটন অবশ্যই হবে। কারণ ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না।

তিনি বলেন, কেউ না কেউ এই বিচারটা করবে, এটা হবে, সেদিন আসবেই। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাম যখন এদেশ থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল ঘাতক দল তখন তারা ভেবেছিল কোনোদিন আর এই নাম ফিরে আসবে না। কিন্তু তা হয়নি। ২১ বছর পর আবার ফিরে এসেছে।

‘আবারো সময় আসবে আমাদের এবং এই দেশ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর হবে,’ বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদ এবং দেশ মাতৃকার সকল গণআন্দোলনের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ এর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এই দেশের মানুষ সারাজীবন বঞ্চিত থাকবে, ক্ষুধার্ত থাকবে, অবহেলিত থাকবে, সেটাই চেয়েছিল বিএনপি।

তিনি বলেন, ‘একটা দল যার চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে জেলে। আবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে করলো (তারেক রহমান), সে আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং পলাতক।’

প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভের সাথে এসময় বিএনপি’র রাজনীতির সাথে যুক্তদের আত্মমর্যাদার প্রশ্ন তুলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না যারা বিএনপি করেন তাদের কোনো মেরুদণ্ড আছে কিনা সেটাই আমার সন্দেহ। তারা শুধু মায়াকান্না কাঁদে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের ফাঁসির রায় আমরা কার্যকর করতে পেরেছি। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার করে তার রায়ও কার্যকর করতে পেরেছি।’

‘৩ নভেম্বরের জেল হত্যার বিচার হয়েছে এবং এখনো যে কয়টা খুনী এখানে সেখানে পালিয়ে আছে তাদেরও খোঁজ-খবর করা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল তখন অনেকে ভেবেছে পরিবারকে নিঃশেষ করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড। কিন্তু ৩ নভেম্বর যখন জেলখানায় চার নেতাকে হত্যা করা হলো তখন বাংলার মানুষ পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছিল এটা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের কাজ। কারণ তারা একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা যায় না। কিন্তু, তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। গণভবন থেকে সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই যেন ঢুকতে দেয়া হয়।’

তিনি বলেন, জিয়া এই ষড়যন্ত্রের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত ছিল বলেই মোশতাক যখন রাষ্ট্রপতি হলো, নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। কাজেই মোশতাকের পতনের সাথে সাথে জিয়ার হাতে সমস্ত ক্ষমতা চলে আসলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দেইনি। অর্থনৈতিকভাবে দেশের উন্নতি করা, দেশের অবকাঠামোসহ সার্বিক উন্নয়ন এবং দারিদ্রের হাত থেকে এদেশের মানুষকে মুক্তি দিতে চেয়েছি।

‘জাতির পিতা যেভাবে চেয়েছিলেন এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, সেটাই আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা সেটাই করে যাচ্ছি,’ বলেন তিনি।

তিনি কোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে গেলে তার সাথে কথোপকথনে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারায় বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানগণই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন কিভাবে আমরা এত তাড়াতাড়ি উন্নতিটা করতে পারলাম।’

এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘জবাব আমার একটাই যদি আন্তরিকতা থাকে এবং আমার বাবা ও মায়ের কাছ থেকে যেটা শিখেছি দেশের প্রতি যদি সেই ভালোবাসা থাকে, দেশের মানুষের প্রতি দরদ থাকে, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থাকে তাহলে অসাধ্য সাধন করা যায়। কারণ সে সময় মানুষের সমর্থন পাওয়া যায়। আর মানুষের সমর্থন এবং দোয়াটাই এ সময় সবথেকে বেশি কাজে লাগে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আজকে বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের একটা বিস্ময়। সেই সম্মান এবং মর্যাদাটা বাংলাদেশ আজকে পেয়েছে।’

এই সম্মান ধরে রেখে এগিয়ে যাওয়ায় তার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা একদিন গড়ে তুলবো, ইনশাআল্লাহ।’

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement