২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এরশাদের শূন্য আসনে মনোনয়ন নিয়ে জাপায় বিভক্তি

জি এম কাদের ও রওশন এরশাদ, ইনসেটে এরশাদের ভাগনি ড. মেহেজেবুন্নেছা রহমান (টুম্পা) ও এরশাদ-রওশন দম্পতির ছেলে রাহগির আল মাহির (সাদ এরশাদ) - ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন পার্টির সিনিয়র নেতারা। এরশাদ পরিবারের ৪ সদস্যের পাশাপাশি দলের অন্তত তিনজন নেতা ওই আসনে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদ তার ছেলে শাদ এরশাদকে সেখান থেকে এমপি বানাতে চান। কিন্তু পার্টির অনেক সিনিয়র নেতা ও স্থানীয় জাপার নেতাকর্মীরা তা মানতে নারাজ। তারা চান রংপুরের তৃণমূলকে প্রাধান্য দিয়ে প্রার্থী নির্বাচিত হোক। এতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। রওশন এরশাদের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছেন না তিনি। এ শূন্য আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে এখন দর কষাকষিতে নেমেছেন দেবর-ভাবী। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ দিকে রংপুর-৩ আসনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে গত শনিবার গঠিত পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তারা বলছেন, পার্টির গঠনতন্ত্রে বিভাগ অনুযায়ী সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বোর্ড গঠন করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। 

দলীয় সূত্র জানায়, এরশাদ পরিবারই এখনও রংপুর-৩ আসনে মনোনয়নের বিষয়ে একমত হতে পারেনি। পরিবার থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ ছাড়াও ভাতিজা (ছোট ভাইয়ের ছেলে) সাবেক এমপি আসিফ শাহরিয়ার, ভাতিজা (মামাতো ভাইয়ের ছেলে) মেজর (অব:) খালেদ আখতার, ভাগনী (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পাও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর স্ত্রী।
দলটির একাধিক নেতা জানান, রংপুর-৩ আসন জাতীয় পার্টির সুপ্রিম কমান্ডের হাতেই থাকার কথা। তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা দেখা দিলে চমক হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যান নিজেই এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। তিনি নিজে না হলে ওই আসনে তার ভাই আমেরিকা প্রবাসী ড. হুসেইন মুর্শেদও প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে জিএম কাদেরের লালমনিরহাট-৩ আসনে দেখা যেতে পারে অন্য কাউকে।

পরিবারের বাইরে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে আলটিমেটাম দিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত এ আসনে মনোনয়ন পেলেই বিজয়ী হবেন এমনটা ধরে নিয়ে লবিং-তদবির বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রার্থীরা। অনেকেই পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। 

দলটির বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, মরহুম এরশাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুর-৩ আসন থেকে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার আগ্রহ রয়েছে তার সহোদর ও পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের। সে ক্ষেত্রে এ আসনে অনেক হিসেব-নিকেশ করে মনোনয়ন দিতে চান তিনি।

এ বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য একটি বোর্ড গঠন করে দিয়েছি। তারাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। বোর্ড গঠনে পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়রিটি মানা হয়নি এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সিনিয়রদের নিয়েই করতে হবে এমনটি অত্যাবশ্যকীয় নয়। প্রয়োজনে গঠনতন্ত্রও পরিবর্তন হতে পারে। 

সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলার জন্য পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও শেখ মুহম্মদ সিরাজুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে- এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টি কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এখনও কোনো সিদ্ধান্ত বা অফিসিয়াল আলোচনা হয়নি। তবে আমরা স্থানীয় নেতাদের কাছ থেকে ৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম চেয়ে পাঠাব। পরে দলের প্রেসিডিয়াম অথবা পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement