২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আরেক মামলায় জামিন : খালেদা জিয়া কি মুক্তি পেতে পারেন?

বিএনপি
খালেদা জিয়া - ফাইল ছবি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

বুধবার খালেদা জিয়ার জামিন আদেশের পর তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি প্রথম থেকে বলেছি সরকার বিভিন্নভাবে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। কুমিল্লার এই মামলায় তার বহু আগে জামিন পাওয়া উচিত ছিল। সরকার বিভিন্ন উপায়ে এটাকে দীর্ঘায়িত করছে। এক বছর আগে হাইকোর্ট এই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেন। কিন্তু সরকার এটা নিয়ে আবার আপিল বিভাগে যেতে পারে বলে আমি মনে করি। সে ক্ষেত্রে আবারো বেশ কিছু সময় ক্ষেপণ হবে। তাই বেগম খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন, সেটা আদালতের চেয়ে সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কেননা আদালত তাকে বিভিন্ন মামলায় জামিন দেয়ার পরও কালক্ষেপণ করার জন্য সরকারের তরফ থেকে উচ্চ আদালতে মামলাটি নিয়ে যায়।

খন্দকার মাহবুব হোসেন আরো বলেন, আমি এখনো মনে করি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সে ক্ষেত্রে সাজা হলেও জামিন পাওয়ার ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবে উচ্চ আদালতে উনার জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না। কেননা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ আসামিকে জামিন প্রদান করেন। সেই ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি একজন বয়স্ক মহিলা। তদুপরি বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘদিন নির্জন কারাবাসে থাকার ফলে তিনি আজ গুরুতর অসুস্থ। তাই আমি মনে করি যে মামলায় সাজা হয়েছে। সেসব মামলায় তিনি জামিন পাবেন, যদি না সরকার ইচ্ছকৃতভাবে বাধা সৃষ্টি না করে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, গত বছরের ১২ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া জামিন পান। সেদিনই তার জেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবসত এবং সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি এখন পর্যন্ত কারামুক্তি পাননি। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে তার কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করছে। আইন যদি তার নিজস্ব গতিতে চলে তা হলে তিনি অবিলম্বে মুক্তি পেয়ে জনগণের কাছে ফিরে আসবেন।

অন্য দিকে হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে সংবাদিকদের জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: বশির উল্লাহ।

আদালতের আদেশের সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, এ এইচ এম কামরুজ্জামান মামুন, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মো: আখতারুজ্জামান, মাসুদ রানা, সালমা সুলতানা সোমা, আনিছুর রহমান খান, গোলাম আক্তার জাকির প্রমুখ।

অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: বশির উল্লাহ।

গত বছরের ২৮ মে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার দুটি ঘটনায় হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা দুই মামলায় ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করলে আপিল বিভাগ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় করা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত করেন।

বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধ চলাকালে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুরে একটি নৈশকোচে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। আইকন পরিবহনের ওই বাসটি কক্সবাজার থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। ওই ঘটনায় আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে সাতজন নিহত হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর আরো একজন মারা যান। এ ঘটনায় ৩ ফেব্রুয়ারি চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরির্দশক (এসআই) নূরুজ্জামান হাওলাদার বাদি হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দু’টি মামলা করেন। এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের মার্চে চার্জশিট দেয় পুলিশ।


আরো সংবাদ



premium cement