২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন হতে পারে : তথ্যমন্ত্রী

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন - সংগৃহীত

উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে গণতন্ত্র, গণমাধ্যম ও সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, উগ্রবাদের হুমকি ডিজিটাল সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সমস্যা মোকবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। এর বিরুদ্ধে লড়তে সরকার ও সংবাদমাধ্যমকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, যেকোনো আইন পরীক্ষা করা যায়, সংশোধন করা যায়। প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন হতে পারে।

তিনি ডিজিটাল দুনিয়ায় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তাররোধে সংবাদমাধ্যমকে সরকারের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।

রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হকের সভাপতিত্বে কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সেতারা মুসা, সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা ও কোষাধ্যক্ষ আখতার জাহান মালিক অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার বলে আসছে, সম্প্রতি সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উগ্রবাদের বিস্তার ঠেকাতেও সহায়ক হবে। চলতি মাসের শুরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সাইবার সিকিউরিটি এখন প্রতিটি দেশেই বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসসহ নানা ধরনের অপরাধের বিস্তার ঘটছে জিডিটাল মাধ্যমে। সেসব মাথায় রেখেই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করেছে।

তবে ওই আইনের আটটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন তা সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, ওই ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থি। তিনি বলেন, আমি আশ্বস্ত করতে পারি, গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য এ আইন করা হয়নি।

তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, অন্যান্য পেশার মত সাংবাদিকতায় নারীর অংশগ্রহণ ক্রমশ বাড়লেও ব্যবধান যে এখনও অনেক বেশি। ১৯৮৭ সাল থেকে ৩০ বছরে বাংলাদেশে সংবাদকর্মীদের মধ্যে নারীদের হার ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে মাত্র ১৩ শতাংশ হয়েছে। এই হারকে আগামী তিন বছরে ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করার প্রস্তাব রাখলে তাতে সায় দেন তথ্যমন্ত্রী।

তবে ওই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সবার আগে দক্ষতার উন্নয়ন প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সংবাদ কক্ষে ও প্রতিবেদক হিসেবে নারীদের সংখ্যা বাড়াতে হলে দক্ষতা ও যোগ্যতা বাড়ানের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন আমরা খুব সহজেই নিজেদের শিক্ষিত বা প্রশিক্ষিত করে তুলতে পারি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর পরিবেশ এখন আগের তুলনায় বেশি নারীবান্ধব। নারীদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে এগিয়ে আসতে হবে।

১১ বছর পর ১৭ বছরের পুরনো বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নেন। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেতারা মূসা এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে বসে। বয়স ৮০ পেরুনো এই নারী সেই ১৯৫০’র দশকে তার সাংবাদিকতার শুরুর দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি আশা করি, আগামী বছর এই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

আরো পড়ুন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সংশোধনের দাবি সম্পাদক পরিষদের

বিশেষ সংবাদদাতা, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগসহ লিখিত আপত্তি ও প্রয়োজনীয় সুপারিশগুলো নিয়ে মন্ত্রীসভায় আলোচনা করে তা নিরসনের উদ্যোগ নেবে সরকার। তবে নতুন করে আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করার পর সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে তারা আবারও বসবেন। তবে আইনটি সংসদে পাস হলেও রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করায় বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সম্পাদক পরিষদও আশা প্রকাশ করে বলেছে, তারাও মনে করেন আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ের তথ্য মন্ত্রণালয়ে মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে সরকারের তিন মন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টার প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সম্পাদক পরিষদের নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদক পরিষদ নেতাদের মধ্যে দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নুরুল কবীর, ইনডিপেনডেন্টের সম্পাদক শামসুর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান, ইনকিলাব সম্পাদক বাহাউদ্দিন আহমেদ, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান মো. হানিফ এবং সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।


প্রসঙ্গত. সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এটি আইনে পরিণত হবে। সম্পাদক পরিষদ এই আইনের অন্তত নয়টি ধারা নিয়ে আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই আইন বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। আইনটির প্রতিবাদে ২৯ সেপ্টেম্বর মানববন্ধনের কর্মসূচি দিয়েছিল। এরপর তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর ওই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সম্পাদক পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি ¯’গিত করে রোববারের আলোচনায় অংশ নেয়।

বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কয়েকটি ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের লিখিত সুপারিশ পেয়েছি। এখানে আমরা সবাই একমত হয়েছি যে পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারকে সঙ্গে নিয়ে এই লিখিত সুপারিশগুলো আমি উপস্থাপন করবো। মন্ত্রিসভা বৈঠকের অনুমোদন সাপেক্ষে আমাদেরকে দেওয়া টার্ম অব রেফারেন্স (টিওআর) অনুযায়ী পরবর্তীতে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আবারও আমরা আলাপ-আলোচনায় বসবো। জাতিসংঘে অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী কাল ( সোমবার) দেশে ফিরবেন। ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠক আছে। কিন্তু ওই বৈঠকে অতিরিক্ত এজেন্ডা থাকায় এটি উপস্থাপন সম্ভব হবে না। এরপরের বৈঠকে এটি উপস্থাপন করা হবে।

আইনমন্ত্রী বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এ রকম একটা আইন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে, আমরা সেই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। কিন্তু এ রকম একটা আইন যেন সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বা বাকস্বাধীনতা ক্ষুণœ না করে- সেই ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য ধারা নিয়ে কারও বক্তব্য নেই। যেহেতু আইনটি সংসদের পাস হয়ে গেছে, তাই ২১ ধারা যেভাবে আছে সেভাবে থাকবে। এখন বাকিগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সম্পাদক পরিষদের আপত্তি ও বক্তব্যগুলোকে মন্ত্রিসভায় তুলে ধরা হবে। তারপর মন্ত্রিসভা যে কার্যপরিধি ঠিক করে দেবে, সেই অনুযায়ী আলোচনায় বসার জন্য তাঁরা সম্মত হয়েছেন।

এ সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ যে উদ্বেগ জানিয়েছে সেই উদ্বেগের বিষয়ে আমরা শ্রদ্ধাশীল। আলোচনার মাধ্যমেই নিষ্পত্তি করতে পারবেন বলে তাঁরা মনে করেন। তাদের দেয়া আপত্তিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি, লিপিবদ্ধ করেছি। তবে তাদের আপত্তিগুলো আরও পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য তাদের সঙ্গে আরও কয়েকবার বৈঠক করতে হতে পারে। সরকার মনে করে গণমাধ্যমের কর্মীদের নিরাপদ রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আইনটি সংসদে পাস হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির দরবারে এটি এখনও যায়নি। রাষ্ট্রপতির সই না হওয়ায় আইনটি এখনও কার্যকর নয়। তবে দেশে ডিজিটাল অপরাধ বেড়ে গেছে। এসব এখন আপদ, বিপদ এবং উৎপাতে পরিণত হয়েছে। এর থেকে রক্ষা পেতেই এই আইন করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা রক্ষায় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সম্পাদক পরিষদ এ আইন নিয়ে যে উদ্বেগ ও আশঙ্কা জানিয়েছে তা দূর করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার।

আইনটি নিয়ে সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে সরকার আরও বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই এখনই কোনও মন্তব্য করা সমীচিন হবে না। তার এ মন্তব্যের পর সম্পাদকরাও এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল সমাজে রূপান্তরিত হচ্ছে। এ ডিজিটাল জগতে ডিজিটাল অপরাধীরা উৎপাত ও বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ অপরাধীদের শক্ত হতে দমন করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। তবে কোনো আইন দ্বারা যদি গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেটি আমাদেরও উদ্বেগ। আমি মনে করি গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করা গণতান্ত্রিক কাজ।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সামনে সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম জানান, বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২৫, ২৮, ২৯,৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। আমরা এসব ধারার বিরুদ্ধে আপত্তি ও কিছু সুপারিশ সরকারের তিন মন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে উপস্থাপন করেছি। আইনটির ২১ নম্বর ধারা সম্পর্কেও আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম তবে সরকারের ব্যাখ্যায় আমরা সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, এ ধরনের একটি আইন হোক তা আমরা চাই কিন্তু, তা যেন স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি না করে। সংসদে পাস হওয়া এ আইনটি বাতিল নয় আমরা সংশোধন চাই। সে কারণে এই আইনের বিষয়ে আমাদের আপত্তিগুলো আমরা লিখিত আকারে দিয়েছি। আইনটি সংসদে পাস হওয়ার আগে আমরা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বসেছিলাম এবং অনেক পথ এগিয়েছিলাম। সংসদীয় কমিটির সঙ্গে দুই দফা আমরা বসেছি। তবে কথা থাকলেও তৃতীয় দফা আর বসা হয়নি। সংসদীয় কমিটি আমাদের সঙ্গে তৃতীয় দফা না বসে কেন আইনটি সংসদে পাস করেছে সেটা আমরা জানি না। তবে তথ্যমন্ত্রী আবারও আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছেন, তার এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

মাহফুজ আনাম বলেন, সম্পাদক পরিষদ মনে করেন, যে আইনটি সংসদে পাস হয়েছে সেটা সংবিধানে বাক ও গণমাধ্যমের যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, তার লঙ্ঘন করবে। এটি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতন্ত্রেরও পরিপন্থী। আমরা মনে করি যে পরিবেশে সাংবাদিকতা হয় তার পরিপন্থী। সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে এই আইন সর্ম্পকে বিস্তারিত আপত্তি ও উদ্বেগের জায়গাগুলো নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ খবরের কাগজে ছাপা হয়েছে। সাংবাদিক ও জনগণের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে- আপনারা এই আইনটি ভালভাবে পড়ুন এবং আপনারাও সুক্ষুভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করুন এই আইনটি দেশের জন্য ভাল কি না। ওনারা আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের অভিযোগগুলো নিয়ে তারা আগামি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে একটা আলোচনার দ্বার উম্মোচন করবেন। যেসব জায়গায় আমাদের আপত্তি তার প্রত্যেকটি পয়েন্ট আকারে মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস হয়। এ আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। বরং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাকে ভিন্নভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংযোজন এবং ঔপনিবেশিক আমলের ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট-১৯২৩’কে এ আইনের ৩২ ধারায় সংযুক্ত করার মাধ্যমে তা গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। এদিকে আইন পাস হওয়ার পর সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের সব সংগঠন এর বিরোধিতা করে। একইসঙ্গে সম্পাদক পরিষদ আইনটি পাস হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর পরিষদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
পরে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তথ্যমন্ত্রী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করে ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনটি নিয়ে বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, বর্তমান সরকার আলোচনায় বিশ্বাষী। আমি বিশ্বাষ করি আলোচনার মাধ্যমেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবিদকের যে আপত্তি রয়েছে তা দুর করা সম্ভাব হবে। তথ্যমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সম্পাদক পরিষদ কর্মসূচি স্থগিত রেখে বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হয়। সম্পাদক পরিষদ থেকে বলা হয়, আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement