২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমালোচকদের জন্য মিসর উন্মুক্ত কারাগার

সমালোচকদের জন্য মিসর উন্মুক্ত কারাগার - ছবি : সংগৃহীত

শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে মিসর কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সাথে যে আইনের দ্বারা মিসরের নাগরিকদের বাকস্বাধীনতাকে কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে সে আইনটিকেও বিলুপ্ত করার আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যামনেস্টি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মিসর, সমালোচকদের জন্য এক উন্মুক্ত কারাগার’ নামে একটি প্রচারণা শুরু করে। সংস্থাটি বলেছে, মিসরবাসী এখন অভূতপূর্ব কঠোরতার মধ্যে তাদের দিন অতিবাহিত করছেন। পুরো দেশে এখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে চেপে ধরা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি জানায়, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল সিসি ও দেশটির সাধারণ মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করায় গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ১১১ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অ্যামনেস্টির উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের প্রচারণা পরিচালক নাজিয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন মিসরে সরকারের সমালোচনা করা অনেক বেশি বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সিসির শাসনামলে দেশটির নাগরিকরা শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশ করতে চাইলে তাদেরকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’

তিনি মিসরের নিরাপত্তাবাহিনীকে নিষ্ঠুর বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তারা নির্মমভাবে স্বাধীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জায়গাগুলোতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের ৩০ বছরের দমনমূলক শাসনকালের চেয়েও এ পদপেগুলো অনেক কঠোর, যা সমালোচকদের জন্য মিসরকে একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে।’ মিসর সরকার অ্যামনেস্টির এই বিবৃতির ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কায়রো সব সময় অপেশাদারি আচরণ ও শত্রুপক্ষের হাতের পুতুল হিসেবে কাজ করার জন্য অ্যামনেস্টি বা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে অভিযুক্ত করে থাকে।

আরো পড়ুন :

ফাঁসির সেলে মুরসি, হত্যার হুমকি!
এএফপি

মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি টানা পাঁচ রমজান ধরে ফাঁসির সেলে রয়েছেন। মুরসির পরিবার দাবি করেছেন, কারাগারে মোহাম্মদ মুরসিকে বারবার হত্যা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না তার। হুমকির বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। 

কারাগারে মিসরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির এই অবস্থার জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সরকারকে দায়ী করেছে মোহাম্মদ মুরসির পরিবার।


মোহাম্মদ মুরসির পরিবারের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্টকে মেরে ফেলার হুমকির পাশাপাশি তাঁর সাথে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে না দিয়ে আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে।

মুরসি ২০১৩ সালে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন।  এই ৫ বছরে মাত্র দুবার তাকে তার পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

আরো পড়ুন :

মুরসির বিচার স্থগিত, মিসরে কীসের ইঙ্গিত?

সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিচার স্থগিত করেছে দেশটির একটি আদালত। মিসরের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত অবৈধ প্রবেশ- নামে পরিচিত একটি মামলা আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে কায়রোর অপরাধ আদালত।

২০১২ সালের ৩০ জুন মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি। এর এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মুরসিকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি।


তখন থেকেই মুরসি আর তার হাজার হাজার সমর্থক বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। মানবাধিকার গ্রুপগুলো এসব বিচারকে রাজনৈতিক আখ্যা দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি মিসর সরকার।

২০১৩ সালের ওই অভ্যুত্থানের পর মিসরীয় কর্তৃপক্ষ বিরোধী আর সমালোচকদের ওপর নজিরবিহীন দমন অভিযান শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে অনেককেই বিনা বিচারে আটক রাখা হয়েছে, গুম করে ফেলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement