২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুলিশি নির্যাতন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিন্দা

পুলিশি নির্যাতন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা - নয়া দিগন্ত

বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি কাওরান বাজার মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ।বিক্ষোভকারীরা বাঁধা উপেক্ষা করে সামনে যেতে চাইলে পুলিশ মারমুখী হয়ে উঠে। কয়েকদফা বেদড়ক লাঠিচার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ বৃহস্পতিবার কর্মসূচিতে পুলিশী হামলার ও সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। বাম গণতান্ত্রিক জোট হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।

এদিকে ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশী হামলায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতনসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী আহত হওযার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীক গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয় অথচ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলতে গেলে পুলিশ নির্যাতন করছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এ ধরণের পলিশী নির্যাতন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা। অপরদিকে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এক বিবৃতিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাও এর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উস্কানিতে কাওরানা বাজারে পুলিশী হামলা এবং জোটের সমন্বয়কারী সাইফুল হক, জোটের নেতা জোনায়েদ সাকী, রাজেকুজ্জামান রতনসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে বেধড়ক লাঠিচার্জ করে আহত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে খালেকুজ্জামান শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলাকারী পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। একই সাথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ হস্তক্ষেপ, বাধা ও হামলা আইন করে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম এক বিবৃতিতে আজ ২০ সেপ্টেম্বর বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা এবং সাতক্ষীরায় কর্মসূচি থেকে ৩ জনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ঘটনার শুরু
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট কর্তৃক তাদের দশ দফা দাবি বাস্তবায়নে ঢাকাসহ সারাদেশে তারা একর্মসূচি পালন করে। একর্মসূচির অংশ হিসাবে গতকাল বেলা ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন,সরকার যেন যেনভাবে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু তারা জানে না জনগণ এটা আর বরদাশত করবে না।

তিনি বলেন, জনগণ ম্যাজিক নির্বাচন দেখতে চায় না। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন,গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ অঅহমদ.ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষে বাম মোর্চার নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মৎস্য ভবন,শাহবাগ, বাংলা মটর হয়ে কাওরান বাজার অতিক্রম করতে গেলেই প্রথমে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ বাধা দেয়।কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়েই পুলিশ কাটাতারের ব্যারিকেড দেয়। কিন্তু বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা কাটাতারের ব্যারিকেড সড়িয়ে দিয়ে সামনে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। বেশ কয়েকবার তারা বিক্ষোভকারীদেও ধাওয়াও দেয়। এসময়ে কিছুক্ষনের জন্য পুরো এলাকায় সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে ব্যানারা ফেস্টুন কেড়ে নেয়। পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতারাই বেশি আহত হন। এর হলেন জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নুসহ আরো আহত হন সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জলি তালুকদার, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, লুনা নূর, নিমাই গাঙ্গুলী, শরিফুজ্জামান শরীফ, মঞ্জুর মঈন, হাবীব ইমন, শাখারভ হোসেন সেবক।

আনোয়ার বাস্তবপন্থী, মিমো, আশরাফুল আলম, রতন কুমার দাস, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরউদ্দীন পাপ্পু, মিজানুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল ইসলাম, ফিরোজ আহমেদ, শেখ মো. শিমুল, নাজমুল হাসান, ইমরান হোসেন, রোকসানা আক্তার, নাসিরউদ্দিন, আল আমিন, মো. উজ্জ্বল, গার্মেন্ট শ্রমিকনেতা জয়নাল আবেদীন, মাহমুদুল হাসান হৃদয়, রফিক, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জহর লাল রায়, কাওসার আহমেদ রিপন, মেহেদী, তামহিদ শুভ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ছাত্র ফেডারেশন নেতা জাসেন আলম, রাবেয়া রফিক রিমি, ইমরান হোসেন, সোহাগ, ইরফান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, ছাত্রফ্রন্টের নেতা মুক্তা বাড়ৈ, সঞ্জীব ম-ল, রুবেল মিয়া, রাতুল, মীম, শোভন রহমান, ডালিম আল মামুন, অনিক দাস, নাজমুন্নাহার আঁখিসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশের হামলায় কর্তব্যরত সাংবাদিকরাও আহত হন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে কর্মীরা শান্ত হন। এবং কাওরান বাজার তিতাস মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

সাতক্ষীরায় তিনজন গ্রেপ্তার
এদিকে জোটের পক্ষ ধেতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা নেতা বাসদ সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, বাসদ (মার্কসবাদী)’র নেতা খগেন্দ্রনাথ ও প্রশান্ত রায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।


আরো সংবাদ



premium cement