২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আস্থার সঙ্কট : টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টার‌ন্যাশনাল বাংলাদেশ(টিআইবি) - ছবি : সংগ্রহ

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে আস্থার সঙ্কট রয়েছে বলে মনে করেন টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকাকালীন নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনে হেরে গেলে ফলাফল মেনে না নেয়ার প্রবণতা রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে।’

সোমবার ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন ও শুদ্ধাচার বিষয়ক একটি রিপোর্ট প্রকাশের জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকে একচ্ছত্রভাবে কেন্দ্রীয়করণের প্রবণতা বিদ্যমান। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হ্রাস পেয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনে আস্থার সংকট রয়েছে।’

টিআইবির রিপোর্টে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশে যতটা আগ্রহী থাকে, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর ইশতেহার বাস্ততবায়নে ততটা আগ্রহী থাকে না। তাই সরকার গঠনকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেয়া অঙ্গীকার কতটুকু পূরণ করছে সে সম্পর্কে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। সংসদে আত্মপরিচয়ে সংকটাপন্ন বিরোধীদলীয় সংস্কৃতি দেখা যায় বলে রিপোর্টে উঠে আসে।

এ সময় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অর্ন্তভুক্তির জন্য টিআইবি ৬টি ক্যাটাগরিতে ৩০টির বেশি সুপারিশ পেশ করে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সংসদে সরকারি দলের একচ্ছত্র ভূমিকা নিরুৎসাহিত করতে দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা একই ব্যাক্তি না হওয়া।

বিরোধী দলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া, ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নিয়োগ দেওয়া, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এমপিদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি। এমন কোনো আইন সংস্কার না করা যা দুদকের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা খর্ব করে।

আরো পড়ুন:

নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে : মওদুদ
১৯৯১ সালের মতোই সংবিধানের বাইরে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে একাদশ নির্বাচন হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

আজ সোমবার সকালে এক প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, সংবিধান কোনোদিন বাধা হতে পারে না মানুষের কল্যাণের জন্য। কারণ সংবিধান মানুষের জন্য, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচন আপনাদের মনে আছে। বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সাহেব প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় তিনি অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছিলেন। সেটা কী সংবিধানে ছিলো? ছিলো না। পরে একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটাকে বৈধতা দেয়া হয়েছিলো। এখানেও তাই হবে। আজকে সরকার বলছে যে, নির্বাচনকালীন সরকার হবে। এই ধরনের সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নাই। তার মানে সংবিধানের বাইরে গিয়ে তারা এই সরকার করতে চাচ্ছেন। তাহলে আমরা যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি সেটাও তো সংবিধানের বাইরে থেকেও করা যায়।


জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে এই প্রতিবাদ সভা হয়। সংগঠনের সভাপতি সাঈদ হাসানের মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সরকারের উদ্দেশে সাবেক আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে যদি আপনারা নির্বাচনকালীন সরকার করতে রাজি হন তাহলে আসুন সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ব্যবস্থা করি। এতে দেশের মানুষ আশান্বিত হবে, দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে,একটা নির্ভেজাল গণতন্ত্র হবে। সেই নির্বাচনে দেশের মানুষ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সত্যিকার অর্থে একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার আমরা সেই নির্বাচনের মাধ্যমে পাবো।

তিনি বলেন, সরকারের সাথে আমাদের তফাতটা হলো তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার করতে চায়। এই নির্বাচন কালীন সরকারের কারা থাকবেন? যিনি প্রধানমন্ত্রী আছেন তিনি থাকবেন, এখন যারা মন্ত্রী আছেন তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মন্ত্রীই থাকবেন। তাদের অধীনেই প্রশাসন থাকবে, পুলিশ বাহিনী থাকবে, র‌্যাব থাকবে। নির্বাচন পরিচালনা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আজকে যারা বলছেন যে, নির্দলীয় সরকার অসাংবিধানিক। তারা ১৯৯৫-৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবথায়ক সরকার ব্যবস্থা তার ধারণা, এটা তার ব্রেইন চাইল্ড। তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আজকে তারাই উল্টো কথা বলেছেন।

জাতিসঙ্ঘে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সফর সম্পর্কে সরকারের বক্তব্যের জবাবে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বড় বড় নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে যে, তারা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে, তারা খুবই আতঙ্কিত হয়েছেন বলে মনে হয়। কী করে এটা সম্ভবপর হলো জাতিসংঘ থেকে বিএনপিকে দাওয়াত দেবে জাতিসঙ্ঘ যাওয়ার জন্য। এটা তাদের সহ্য হয় নাই। তারা অনেক বিরূপ মন্তব্য করেছেন যার সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক নাই। যেমন একটা উদাহরণ দেই। আমাদের মহাসচিব কখনোই বলেন নাই যে, তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। সকলেরই জানা এটা কখনো এই পর্যায়ে হয় না। সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও তার টিমের সাথে আমাদের মহাসচিবের নেতৃত্বে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তারা কোনো নালিশ করতে যান নাই, সরকারের সমালোচনা করতে যান নাই। তারা গেছেন দেশের বর্তমান বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার জন্য। এটা আমাদের মহাসচিবের দায়িত্ব ছিলো এটাকে উপস্থাপন করেছেন। দেশে সত্যিকারের অবস্থাটা কী, আইনের শাসনের কী অবস্থা, বিচার বিভাগের কী অবস্থা, মৌলিক অধিকারের কী অবস্থা, বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে, গুম হয়ে গেছে তিন শত নেতাকর্মী- এগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। সরকার এতে বিচলিত হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement