২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে : কাদের

সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে : কাদের - ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব পালন করবেন এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা করবে। এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

ওবায়দুল কাদের রোববার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আইডিইবি’র ২২তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪১তম কাউন্সিল অধিবেশন উপলক্ষে আয়োজিত ‘৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

আইইডিবি’র সভাপতি প্রকৌশলী এম এ হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. শামসুর রহমান।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ নয় যে এ দেশের নির্বাচন জাতিসঙ্ঘের অধীনে হতে হবে। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এ দেশের সংবিধানই নির্বাচন পরিচালনা করবে।

এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, সোমালিয়া ও কঙ্গোর মতো অবস্থায় নেই। তাই আমাদের দেশে জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার বিএনপির দাবিকে অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র এক-দেড় মাস সময় রয়েছে। এমন সময়ে বিএনপির এ ধরনের দাবি মামার বাড়ীর আবদার ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, আমাদের দেশেও সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে, এ সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। জাতীয় সংসদ সদস্যরাও কোন মর্যাদা ভোগ করবে না। তাই সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া আর না দেওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে না, তা আমরা কখনো বলিনি। প্রয়োজন হলে সেনা মোতায়েন করা হবে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, সময় ও পরিস্থিতি যদি বলে দেয় সেনা মোতায়েন করা দরকার, নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে সরকার সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে বিএনপির দাবির জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বিএনপিরও একজন প্রতিনিধি রয়েছে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিএনপি জিতলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভাল, আর তারা পরাজিত হলে ইসি খারাপ, তা হতে পারে না। বিএনপির এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করা উচিত।

বিএনপির সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের জোট গঠনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি কার সঙ্গে জোট গঠন করবে তা আমরা জানি না। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জেনেছি যে, বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করলে যুক্তফ্রন্ট বিএনপির সঙ্গে জোটে যাবে না।
মন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা-সমাবেশ করতে পারবে। যারা অনুমতি চাইবে তারা এ উদ্যানে সভা-সমাবেশ করতে পারবে।

তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের দেশের উন্নয়নের অগ্রসেনানী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা অনন্য হয়ে থাকবে।

এর আগে ওবায়দুল কাদের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনোভেশন এক্সপো-২০১৮ উদ্বোধন করেন। তিনি এ সময় সারাদেশের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার এবং পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নিয়ে এক্সপোর স্টলগুলো ঘুরে দেখেন। এ প্রদর্শনীতে ৫১টি স্টল স্থান পেয়েছে।
এ প্রদর্শনী আজ রোববার এবং আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত চলবে।

আরো পড়ুন :
বাসস

উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত উন্নত হবে ততই জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনকে মাথায় রেখেই সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে।’
শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে তাঁর নামে দু’টি সেতুর উদ্বোধনকালে একথা বলেন। উদ্বোধনের পরই সেতু দু’টি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। যার একটি হচ্ছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ওপর ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ এবং অপরটি ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বাঞ্চারামপুর উপজেলায় তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ওয়াই আকৃতির ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেতু'।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুরের গঙ্গাচড়া এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে সেতু দু’টির উদ্বোধন করেন। এ সময় সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার জনগণ এবং উপকারভোগীরা দু’সেতুর অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
তাঁর সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ নৌকায় ভোট দিলেই কেবল উন্নয়নের দেখা পায় এবং এটা এখন প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই শুধু দেশের উন্নতি হয়।’

এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এ সময় রংপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী এবিএম তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ বাঞ্চারামপুর প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে একদা উত্তরবঙ্গের অবহেলিত থাকার কথা স্মরণ করে বলেন, এক সময় উত্তরবঙ্গের বহু এলাকার মত গঙ্গাচড়াও মঙ্গা প্রবণ এলাকা ছিল। কিন্তুু তাঁর সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নে আজ আর মঙ্গা নেই এই শব্দটিই যেন হারিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের শাসনেই দেশ থেকে মঙ্গা চির বিদায় নিয়েছে – বলেন তিনি।
ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই এলাকার জনগণের যখন কাজ থাকে না তখনকার সময়ের জন্য তাঁর সরকার সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দারিদ্র বিমোচনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবন মানে পরিবর্তন এনেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন।

‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’ সেতু চালুর ফলে লালমনিরহাট জেলার চার উপজেলাসহ বৃহত্তর রংপুরের কোটি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হল।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহর রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাটের কয়েকটি উপজেলার দূরত্ব কমিয়ে আনতে কাকিনা-মহিপুর এলাকায় দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে (এলজিইডি) ৮৫০ মিটার দীর্ঘ ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
সেতুর সংযোগ সড়কটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর থেকে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে যুক্ত হয়েছে।
মূল সেতুর সংযোগ সড়কের কাকিনা অংশে তিনটি কালভার্ট ও দু’টি ছোট সেতু রয়েছে। এ ছাড়া ও মূল সেতু ও পুরো সড়কজুড়ে রয়েছে আলোর ব্যবস্থা।

অন্যদিকে, ‘শেখ হাসিনা তিতাস সেত’ুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ও কুমিল্লার হোমনা উপজেলার তিতাস নদীর ত্রিমোহনায় নির্মিত দেশের প্রথম ওয়াই আকৃতির সেতু। এটি চালুর ফলে বদলে যাবে বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্বাবধানে ৯৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয়েছে ৭৭১ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮ দশমিক ১০ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি। সেতুটিতে ২৫টি পিলার, ২৪টি দৃষ্টিনন্দন স্প্যান রয়েছে। তিতাস নদীর ওপর এ সেতু চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কের বিকল্প পথ হিসেবেও কুমিল্লা দিয়ে তা ব্যবহৃত হবে বলে জানায় এলজিইডি।


আরো সংবাদ



premium cement