২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনা

হারতে চায় না আওয়ামী লীগ - ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচনী রাজনীতিতে কোনোভাবেই হারতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। স্থানীয় থেকে জাতীয় সব নির্বাচনেই এ ধারা অব্যাহত রাখতে চান ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। সেই লক্ষ্যে যা কিছু দরকার সবই করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে এক দিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়ানো এবং অন্য দিকে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত জোটের কোনো জনসমর্থন নেই বলে দেশ-বিদেশে প্রমাণ করতে চান তারা। 

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সব নির্বাচনে নিজেদের প্রাধান্য ধরে রাখার চেষ্টা চালায়। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা পরিষদ এবং সর্বোপরি সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে সর্বাত্মক কৌশল নেয় ক্ষমতাসীনরা। তবে চলতি মেয়াদের শেষ দিকে এসে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনগুলোতে বিশেষ নজর দেয় তারা। যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়িয়ে বিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের নানামুখী চাপে রেখে নিজ দলের প্রার্থীদের জয় নিশ্চিতে মনোযোগ দেন নীতিনির্ধারকেরা। ফলে দৃশ্যমান অনেক কিছু এড়িয়ে সহজেই বিজয় লাভ করেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রয়োগ করা বিশেষ এ কৌশল বেশ সমাদৃত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলে। সে জন্য আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও একই কৌশলের আশ্রয় নেয়া হবে বলে দলের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিজয়ের এ ধারা আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনেও অব্যাহত রাখতে চান সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। 
মতাসীন দলটির শীর্ষ নেতাদের মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাজীপুরের নবনির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গণভবনে দেখা করতে গেলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গাজীপুরের ভোট আগামী নির্বাচনে বিজয়ের পথ দেখাচ্ছে, বিজয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগকে।’

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে জয় নিশ্চিত করে সারা দেশে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মনোবল দুর্বল করে ফেলতে চায় আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি, এর উল্টো হলে একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের মনে চিড় ধরবে। তাই জেতার জন্য রাজনৈতিক সব কৌশলই আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে চায়।

এসব নেতা আরো বলেন, নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের জন্য খুলনা ও গাজীপুরে সব কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। আর এসব কৌশলের সুফলও ঘরে তুলেছে ক্ষমতাসীনরা। সে জন্য আসন্ন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় তারা। যার সুফল আগামী জাতীয় নির্বাচনে ঘরে তুলবে আওয়ামী লীগ। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে জয়ী হওয়ার উৎসব পালন করতে করতেই জাতীয় নির্বাচন চলে আসবে। এতে নেতাকর্মীদের মনোবলও চাঙ্গা থাকবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে নির্বাচনে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এসব নির্বাচনে হেরে গেলে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও নানা গুজব ও সংশয়-সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করবে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে পরাজয়ের কোনো রিস্ক নেয়া যাবে না।

তাদের মতে, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দী এবং তারেক রহমান না থাকায় বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনও বর্জন করতে পারে। এতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আবারো নির্বাচনের অংশগ্রহণমূলক বৈশিষ্ট্য নিয়ে যাতে প্রশ্ন উঠতে না পারে সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কৌশল নিয়েছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে সিটি নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোকে টার্গেট করা হয়েছে। এসব নির্বাচনে কোনোভাবেই হারতে চায় না আওয়ামী লীগ। ফলে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি না এলেও স্থানীয় এসব নির্বাচনে সরকারি দলের বিজয়ের পরিসংখ্যান দেশ-বিদেশে দেশ-বিদেশে তুলে ধরে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের জনসমর্থন বা প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি আনা হবে। এতে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি আর হালে পানি পাবে না। 

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘খুলনা দিয়ে আওয়ামী লীগের বিজয় শুরু হয়েছে, গাজীপুরেও হলো। আগামী নির্বাচনগুলোতেও আমাদের বিজয় হবে। এগুলো সরকারের উন্নয়ন, দেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির ফসল।’ 
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, ‘কোনো নির্বাচনে পরাজিত হলে যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরে। তারা হতাশ হয়। তাই সিটি নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের কর্মীরা চায় নৌকার প্রার্থীই জয়ী হবে।’ 
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘গত দশ বছরে যেসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে তারই সুফল হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে নৌকার প্রার্থীর বিজয় আসছে। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে সব নির্বাচনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাই এখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল।’

 


আরো সংবাদ



premium cement