০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গতানুগতিক বাজেট

-

গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য যে বাজেটটি পেশ করা হয় তার পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে অতীতের মতো। বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের ১১তম বাজেট। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী নতুনত্বের আওয়াজ তুলেছিলেন। বলেছিলেন, ব্যাংকিং খাত সংস্কারের কথা। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এজন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেননি। খেলাপি ঋণ সংস্কৃতির অবসানে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা বললেও কিভাবে সেটি করবেন, এ সম্পর্কে কোনো পথ নির্দেশ পাওয়া গেল না।

‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আয় ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে তিন লাখ ৮১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু ভালো দিক হলো- করবহির্ভূত আয় বাড়ানোর উদ্যোগ, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে উন্নয়ন ব্যয় সাত শতাংশ রাখা, শস্য বীমা চালুর উদ্যোগ, নতুন ভ্যাট আইন, রেমিট্যান্সকে হুন্ডি ব্যবসায় থেকে সরিয়ে নিয়ে ব্যাংকিং খাতে আকৃষ্ট করার জন্য দুই শতাংশ হারে ভর্তুকির প্রস্তাব ইত্যাদি। রফতানিতে উৎসাহ দেয়ার জন্য তৈরী পোশাকসহ কিছু খাতে নগদ সহায়তা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া তরুণদের মধ্যে সব ধরনের ব্যবসায় উদ্যোগ সৃষ্টির জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে।

চরম দুর্দশায় থাকা ব্যাংকিং খাতের প্রতি যতটা মনোযোগ দেয়া উচিত ছিল বাজেটে তা দেয়া হয়নি। এ খাতে বিদ্যমান ভয়াবহ সঙ্কট ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে বড় ধরনের আস্থাহীনতা সৃষ্টি করেছে, যা কর্মসংস্থানে স্থবিরতা সৃষ্টি করছে। জিডিপিতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ২৩ শতাংশে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিপুলসংখ্যক চাকরিপ্রার্থীর জন্য চাকরির বাজার অপর্যাপ্ত। চাকরির মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে দক্ষ জনবল আমদানি করতে হচ্ছে। কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতা এবং প্রার্থীদের দক্ষতার অভাব নিরসনে বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন- ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার ছিল। তাও নেয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘যারা অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী, বাজেট এবারো তাদের পক্ষেই গেছে। পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার বা অর্থনৈতিক কৌশল দেখা যায়নি’।

চলতি বছরে মাত্র তিন মাসেই দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। গত মার্চ শেষে সার্বিক ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাজেট পেশের কিছু দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দু’টি সার্কুলার জারি করেছে। একটি সার্কুলারে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে, যা গ্রহণীয় নয়। এতে প্রকৃত খেলাপিরা এর দায় থেকে বেঁচে যাবে। খেলাপি হতে উৎসাহিত বোধ করবেন এবং নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীরা হবেন নিরুৎসাহিত। ফলে নতুন সংজ্ঞার আলোকে আপাতত খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে যেতে পারে। প্রকৃত পক্ষে এতে খেলাপি ঋণ বাড়বে। এটি দেশের ব্যাংকের জন্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি ডেকে আনবে। আরেকটি সার্কুলার আরো উদ্বেগজনক, যার ওপর হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। মূলত ব্যাংকিং খাতের সঙ্কট অনেক দিন ধরে অব্যাহত কাঠামোগত সমস্যার কুফল।

দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ এ অবস্থার জন্য দায়ী। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারাও এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। ব্যাংক কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও কবে এটা গঠন করা হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী। ব্যাংক খাত বর্তমানে যে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে দ্রুত কমিশন গঠন করা উচিত। অর্থঋণ আদালত যুগোপযোগী করা জরুরি। খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে আইনি দুর্বলতা দূর করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া উচিত। আমাদের অর্থনীতিতে উৎপাদনশীল খাতের পরিসর বাড়ছে না এবং এর বহুমুখীকরণও হচ্ছে না। এক খাতকেন্দ্রিক নির্ভরতা বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছে। তৈরী পোশাক শিল্পের পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য উৎপাদনশীল নতুন কোনো খাত সৃষ্টি হচ্ছে না। ক্ষুদ্র কল কারখানাও কমে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেট পাশের আগে এসব বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় আসা উচিত।

বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ ও সমস্যা নির্ধারণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় হচ্ছে বেশি। অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ অত্যধিক। প্রতি বছরেই বাজেট ঘাটতি থেকে যাচ্ছে কেন? ঘাটতি ঠেকাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, যার বোঝা শেষ পর্যন্ত জনগণের ঘাড়েই চাপে। এবারো প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা ধার নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অথচ খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকিং খাতের এ সক্ষমতা কতটুকু আছে, তা দেখা অপরিহার্য। ব্যবসায় সংগঠনের নেতারাও আশঙ্কা করছেন- এ খাত থেকে ঋণ নিলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন কম, ফলে বিনিয়োগের স্থবিরতা নাও কাটতে পারে এবং সুদের হার বেড়ে যেতে পারে। অর্থমন্ত্রী সমৃদ্ধির যে সোপান রচনা করতে চেয়েছেন, তাতে বৈষম্য কমানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির কথা যতই বলা হোক, জনগণ এর সুফল না পেলে তা অর্থবহ হবে না মোটেই। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণ এবং দুর্নীতি ও অপচয় কমিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

লেখক : ব্যাংকার
ই-মেইল : main706@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
পাথরঘাটায় দেড় মণ হরিণের গোশত উদ্ধার টঙ্গীবাড়ীতে অজ্ঞাত কিশোরের গলা কাটা লাশ উদ্ধার জাল দলিলে আপনার জমি দখল হয়ে গেলে কী করবেন? আমির খানকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ সম্মাননা টানা জয়ের খোঁজে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে বাংলাদেশ ‘শুক্রবার ক্লাস নেয়ার বিষয়টি ভুল করে ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল’ চকরিয়ায় চিংড়ি ঘের থেকে একজনের লাশ উদ্ধার জনগণের কথা চিন্তা করে জনবান্ধব আইন তৈরি করতে হবে : আইনমন্ত্রী হাওরের ৯৭ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ : কৃষি মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার চায় শিক্ষক সমিতি কিশোরগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তঃসত্তা মা ও পাঁচ বছরের ছেলের মৃত্যু

সকল