০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উপসাগরে উত্তেজনা নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান সৌদি আরবের

সংবাদ সম্মেলনে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর :ইন্টারনেট -

সৌদি আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য আঞ্চলিক উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ ও আরব লিগের জরুরি বৈঠক ডেকেছে। গত শনিবার সৌদি আরবের সরকারি সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, বাদশাহ সালমান এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘আগ্রাসন ও তার পরিণাম’ সম্পর্কে আলোচনার জন্য ৩০ মে মক্কায় দু’টি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।
একটি সম্মেলন হবে জিসিসির। অন্যটি হবে আরব লিগের। এ দু’টি সম্মেলনেই আঞ্চলিক ‘আগ্রাসন ও তার পরিণতি’ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি এ বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য উপসাগরীয় ও আরব দেশগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইরানের হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ও বোমারু বিমান মোতায়েন করায় অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার ফুজাইরাহ উপকূলে রহস্যজনক নাশকতায় সৌদি আরবের দু’টি তেলবাহী টেঙ্কারসহ চারটি জাহাজের ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনার পর গত মঙ্গলবার সৌদি আরবের একটি প্রধান তেলের পাইপলাইনে ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হাউছি বিদ্রোহীরা ড্রোন হামলা চালায়। ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে এটা হবে তেল রফতানির বিকল্প রুট। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে আসছে।
যুদ্ধ এড়াতে চায়, কিন্তু জবাব দিতে প্রস্তুত
এ দিকে রয়টার্স জানায়, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর বলেছেন, তার দেশ মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা করবে কিন্তু আক্রান্ত হলে ‘সর্ব শক্তি ও দৃঢ়তা’ নিয়ে জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুতও আছে। গত সপ্তাহে দু’টি সৌদি তেলবাহী ট্যাংকার ও তেল স্থাপনায় হামলার পর গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেছেন। ইরান ওই অঞ্চলটি অস্থিতিশীল করতে চাইছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, বল এখন ইরানের কোর্টে। ইরান যেন মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করা থেকে বিরত থাকে তার দায়িত্ব নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার সৌদি আরবের দু’টি তেল স্থাপনার ড্রোন হামলা হয়। ইরানের অনুগত ইয়েমেনের শিয়া হাউছি বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করে। তেহরানই ওই হামলার নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ রিয়াদের।
এ হামলার দুই দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে চারটি জাহাজে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা হয়। হামলার শিকার চারটি জাহাজের মধ্যে সৌদি আরবের দু’টি তেলবাহী ট্যাংকার আছে। কোনো পক্ষ এ হামলার দায় স্বীকার করেনি। এসব হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান। কিন্তু ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি নিয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা চলার মধ্যে এসব হামলার ঘটনায় উত্তেজনা আরো টান টান হয়ে ওঠে। যেকোনো সময় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত শুরু হয়ে যেতে পারে এমন উদ্বেগ দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতেই সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবেইর সংবাদ সম্মেলনে ওই পরোক্ষ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য যা করা সম্ভব সৌদি আরব তা করবে এবং একই সময় এটিও পুনর্নিশ্চিত করছে যে এই ঘটনায় অন্য পক্ষ যুদ্ধ বেছে নিলে, সৌদি আরব সর্ব শক্তি ও দৃঢ়তা নিয়ে জবাব দিবে এবং নিজেকে ও নিজের স্বার্থকে রক্ষা করবে।’
এসব হামলার ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ৩০ মে মক্কায় উপসাগরীয় ও আরব নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ জানিয়েছেন, তেহরানও কোনো যুদ্ধ চায় না এবং কোনো দেশ ‘ইরানের মুখোমুখি হওয়ার বিভ্রমে’ ভুগছে না বলে মনে করছেন তারা।
আদেল আল জুবেইর বলেছেন, তেলের ট্যাংকারে হামলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের কাছে কিছু তথ্য এসেছে। তদন্ত শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা তা প্রকাশ করব। ওদিকে আন্তর্জাতিক সংশয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বার বার ইঙ্গিত করছে যে, ইরানের পক্ষ থেকে ক্রমে হুমকি আসছে। এই দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইল ও সৌদি আরব দীর্ঘ সময় ধরে শত্রু ও প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। রোববার সৌদি প্রেস এজেন্সি বলেছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।


আরো সংবাদ



premium cement