আগামী ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রায় ১৯ কোটি নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আগামী বছরের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচন উপলক্ষে আগামী রোববার থেকে প্রচারণা শুরু হচ্ছে।
গত রোববার ভোটার তালিকা বিষয়ে এক রিপোর্ট প্রকাশ করে দেশটির জেনারেল ইলেকশন কমিশন (কেপিইউ)। এতে বলা হয়, বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিবন্ধনকৃত ভোটার তালিকায় এখন নাম দুইবার থাকাসহ বিভিন্ন ত্রুটির অভিযোগ আসায় প্রাথমিক তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন ছয় লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি নাম বাদ দিয়েছে এবং বর্তমানে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৮ কোটি ৭১ লাখ। এর আগে ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছিল যে, ইলেকশনস সুপাভাইজারি এজেন্সি নামক একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রাথমিক ভোটার তালিকায় ২৯ লাখ ভুয়া ভোটার থাকার কথা দেশটির নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিল। আর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই কেপিইউ ভোটার তালিকা থেকে ভুয়া ভোটারের নাম বাতিলের উদ্যোগ নেয়।
আগামী সপ্তাহ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ায় সবার চোখ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জোকো উইদোদো এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক জেনারেল প্রবোয়ো সুবিয়ানতোর মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকেই থাকবে। প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো তার রানিং মেট হিসেবে মারুফ আমিন নামে একজনকে বেছে নিয়েছেন। মারুফ আমিনের অর্থনীতির ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি রয়েছে এবং তিনি একজন আলেম। অপর দিকে বিরোধী নেতা প্রবোয়ো তার রানিং মেট করেছেন জাকার্তার ডেপুটি গভর্নর ও সাবেক ব্যবসায়ী সানদিয়াগো ইউনোকে।
২০১৯ সালের নির্বাচনেই ইন্দোনেশিয়ার ভোটাররা প্রথমবারের মতো একই দিনে নিজেদের প্রেসিডেন্ট ও সংসদ সদস্য নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ১৯৯৮ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তো ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি বা এক দলের কর্তৃত্ব থেকে দেশকে মুক্ত রাখতেই ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার করা হয়। আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পদে কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য পার্লামেন্টে একটি দলের ২০ শতাংশ আসন থাকতে হবে বা নির্বাচনের সময় মোট ভোটের ২৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে। ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব স্ট্র্যাগল (পিডিআই-পি)। বর্তমান সংসদে দলটির ১০৯টি আসন রয়েছে যা পার্লামেন্টের মোট আসনের ২০ শতাংশের নিচে।
পিডিআই-পির পর দ্বিতীয় বৃহত্তম দল গোলকারের রয়েছে ১৬ শতাংশ আসন, বিরোধী নেতা প্রবোয়োর নেতৃত্বাধীন দল গেরিনদ্রার রয়েছে ১৩ শতাংশ এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রয়েছে ১১ শতাংশ। বর্তমানে নয়টি দলের সমন্বয়ে গঠিত ক্ষমাসীন জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও ডক্টর মারুফ আমিনের নেতৃত্বাধীন দল পিডিআই-পি। অপর দিকে প্রবোয়ো-সানদিয়াগোর নেতৃত্বে ডেমোক্র্যাটরা গঠন করেছে চারদলীয় জোট। পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট উইদোদো এখনো এগিয়ে রয়েছেন এবং ধর্মের প্রতি তার বিশ্বাসও ক্রমবর্ধমান থাকলেও নির্বাচনের ফলের ব্যাপারে অগ্রিম মন্তব্য করা সম্ভব নয়। পর্যবেক্ষকেরা আরো বলছেন, প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো জনমত জরিপে এগিয়ে থাকলেও গত বছর জাকার্তার গভর্নর নির্বাচনে তার সমর্থিত প্রার্থী বাসুকি জাহাজা পুর্নামা গেরিন্দ্রা পার্টি সমর্থিত আনিয়েস বাসওয়েদানের কাছে পরাজিত হন।
অবশ্য ধর্মীয় রক্ষণশীলদের ভোট লাভ নিশ্চিত করতে সরকারবিরোধীরা সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ধর্মকেই ব্যবহার করছে। অতীতে কোনো এক সময় বাসুকি জাহাজা ব্লাসফেমি আইনে অভিযুক্ত হয়েছিলেন এবং জেলও খেটেছিলেন। সরকারবিরোধীরা এই বিষয়টিকেই বড় করে প্রচার করছে। যাই হোক, নির্বাচনের আগে এখনো অনেক সময় বাকি থাকায় তরুণ ভোটার ও নতুন দল গড়ে উঠলে ভোটের চিত্র পরিবর্তন হতে পারে। কারণ দেশটির মোট ভোটারের প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩৫ বছর বা তার চেয়েও কম।
সূত্র : স্ট্রেইট টাইমস
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা