১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

চাহিদা বাড়ছে পাটপণ্যের

-

জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন পণ্য থেকে দূরে সরে আসছে মানুষ। এতে করে পরিবেশবান্ধব পাটপণ্যের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া দেশে বেশ কয়েকটি পণ্যের মোড়কে পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বেড়েছে।
এ সেক্টরের উদ্যোক্তারা বলছেন, রফতানি বাজারই ছিল আগে পাটজাত পণ্যের মূল বাজার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ভেতরে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদনেও এসেছে বৈচিত্র্য। এখন দেশের বাজারের ক্রেতাদের চাহিদা রয়েছে পাটের তৈরী নানা ধরনের ব্যাগ, পার্টস, জুতা, পুতুল, ম্যাট, শতরঞ্জি, শিকা, পাপোশ, সুতা, ঝুড়ি, ল্যাম্পশেড, কাপড়, টুপি, চাবির রিং, মানিব্যাগ, ক্যালেন্ডার, কম্বল, পাট ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি ফাইবার গ্লাসসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্যে।
পাটপণ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রাহেলা জুট ক্রাফটের স্বত্ব¡াধিকারী শামীম আরা দিপা বলেন, রফতানি বাজারই ছিল আগে পাটজাত পণ্যের মূল বাজার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ভেতরে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদনেও এসেছে বৈচিত্র্য। উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারের পাশাপাশি সৌদি আরব, সুদান, থাইল্যান্ড, হংকং, ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়ায় রফতানি হচ্ছে। পাটের তৈরী বিভিন্ন ধরনের ব্যাগের প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। সাধারণত বিদেশী ক্রয়াদেশের অর্ডারের ভিত্তিতেই নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে থাকি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো: সহিদুজ্জামান বলেন, একসময় প্রধান রফতানি পণ্য হিসেবে পাটখাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো। রফতানি আয়ের একটি ভালো অংশ এখনো পাটখাত থেকে এসে থাকে। পাট থেকে সুতাসহ অন্যান্য পাটসামগ্রী উৎপাদন হয়ে থাকে। গড়ে বর্তমানে পৃথিবীতে ১৯ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করে ৩২ লাখ টন পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। যার ২৫ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ ৮.৩৩ লাখ টন বা পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ২৬.০২ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়ে থাকে।
পাট পণ্যে উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করতে হবে। শুধু কাঁচামাল রফতানি না করে পাটের তৈরী পণ্য উৎপাদন করতে হবে। তাহলে দেশ আর্থিকভাবে অধিক লাভবান হবে এবং রফতানি আয়ের বড় একটি অংশ অর্জন করা সম্ভব।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২৫টি দেশের বাইরেও কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ১২০টি দেশে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে শপিংব্যাগের চাহিদা রয়েছে। তাই পাটজাত শপিং ব্যাগ রফতানির েেত্র এ দেশের ভালো সুযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ১০২ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয় ছিল ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কৌশলগত ল্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কিছুটা কম হয়েছে। এ সময়ে ল্যমাত্রা ছিল ১০৫ কোটি ৫০ লাখ।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবির) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে কাঁচা পাট রফতানিতে আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; পাট সুতা ও কুণ্ডলি রফতানিতে আয় হয়েছে ৬৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, পাটের বস্তা ও ব্যাগ রফতানি হয়েছে ১২ কোটি ২৮ লাখ ডলারের এবং পাটজাত অন্যান্য পণ্য থেকে রফতানি আয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
পাট ও পাটপণ্য রফতানির বিষয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উৎপাদন ও পণ্য বহুমুখীকরণে আমরা এখনো পিছিয়ে থাকায় পর্যাপ্ত পাট ও পাটপণ্য রফতানি করা যাচ্ছে না। তবে সরকার মানসম্মত পাট উৎপাদন ও পণ্য বহুমুখীকরণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। নীতি সহায়তার পাশাপাশি পণ্য বৈচিত্র্যকরণে নগদ সহায়তা বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, রফতানিমুখী পাটপণ্য বহুমুখীকরণে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি করে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। মানসম্মত পাটজাত পণ্য উৎপাদন হওয়ায় রফতানি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান জানান, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের জনগণ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়ায় সেখানে পাটপণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এই চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ নতুন নতুন বৈচিত্র্যপূর্ণ পণ্য উৎপাদন করছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে স্বদেশী পাটপণ্যের কার্যকর ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব কারণে পাট ও পাটপণ্য রফতানি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান আরো জানান, দেশের অভ্যন্তরে পাটের উৎপাদন বাড়াতে মানসম্মত বীজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। যেন কৃষকরা অন্য ফসলের তুলনায় পাটচাষে লাভবান হতে পারেন। এতে তারা পাট উৎপাদনে আগ্রহী হবে এবং উৎপাদন বাড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
দেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্তখাতে মোট ২২টি পাটকল চালু রয়েছে এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ২০০ পাটকল আছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কংগো, কোস্টারিকা, মিসর, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, জার্মানি, গোয়েতেমালা, হাইতি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইরান, জাপান, জর্দান, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, সুদান, দণি আফ্রিকা, তাইওয়ান, তাজাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ওগান্ডা, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামে পাট ও পাটপণ্য রফতানি করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement