২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গর্ভপাত নাৎসি জমানার অপরাধের সমান: পোপ ফ্রান্সিস

গর্ভপাত নাৎসি জমানার অপরাধের সমান: পোপ ফ্রান্সিস - সংগৃহীত

কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া এক বক্তব্যে ভ্যাটিকানের আর্জেন্টাইন পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, গর্ভপাত ‘ভয়ঙ্কর’। এটি সংস্কৃতিবিরোধী। বার্থ ডিফেক্টের আঁচ পেয়ে গর্ভপাত করানো নাৎসিদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের সাথে তুলনীয়। সন্তানের জন্মগত কোনো শারীরিক দুর্বলতা থাকতেই পারে, এই ভয়ে যাঁরা গর্ভপাত করান, তাঁরা নাৎসি জমানার জন্ম নিয়ন্ত্রণের মতোই কুকীর্তি করেন।

রোমান ক্যাথলিক চার্চের সংরক্ষণশীল প্রতিনিধিরা তাঁকে গর্ভপাতের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কোনো মন্তব্য না করতে অনুরোধ করেছিলেন।তবে সে নিষেধাজ্ঞা মানেন নি পোপ। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, শুধু খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা পূরণের জন্যই সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখানো হচ্ছে না। এর কড়া বিরোধিতা করেন তিনি। এর আগেও পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট ও দ্বিতীয় জন পল গর্ভপাতের বিরুদ্ধে একই ধরনের অবস্থান নিয়েছিলেন।

তিনি সমালোচনা করে বলেন গর্ভাবস্থাতেই বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর জন্মত্রুটি শনাক্ত করা হচ্ছে। তারপরেই গর্ভপাতের মধ্য দিয়ে ত্রুটিযুক্ত শিশুর জন্ম ঠেকানো হচ্ছে। কনফেডারেশন অব ইতালিয়ান ফ্যামিলি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে গর্ভপাতের সঙ্গে নাৎসিদের অপরাধের তুলনা করেন পোপ ফ্রান্সিস। তার মতে, দুর্বলদের শেষ করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নাৎসিরা যে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছিল, এটি তারই সমতুল্য।

পোপ বলেন, ‘শিশুরা যেভাবে পৃথিবীতে আসে, ঈশ্বর যেভাবে তাদের পাঠান, ঈশ্বর যেভাবে তাদেরকে অনুমোদন করেন, তাদেরকে সেভাবেই আমাদের গ্রহণ করা উচিত; এমনকি তারা যদি অসুস্থ হয়, তখনও।

তিরিশের দশকে, নাৎসি শাসনকালে প্রজনন কর্মসূচির আওতায় ইহুদি এবং অন্যান্য সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর কয়েক লাখ মানুষের প্রজনন সক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, জোর করে। পরবর্তী প্রজন্মে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম রুখতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে মেরে ফেলা হয়েছিল। সেই সময়ের সঙ্গে গর্ভপাতকে তুলনা করেন পোপ ফ্রান্সিস।

মিয়ানমারের কঠোর সমালোচনায় পোপ ফ্রান্সিস

মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতার কঠোর সমালোচনা করেছেন পোপ ফ্রান্সিস। গতকাল বুধবার তিনি বলেছেন, সেখানে তাদের হত্যা ও নির্যাতনের কারণ, তারা তাদের সংস্কৃতি ও মুসলিম বিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে চায়। রয়টার্স। 

গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর পোপ ফ্রান্সিস জনসম্মুখে সাপ্তাহিক ভাষণে এ মন্তব্য করলেন। জাতিসঙ্ঘের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী গণহারে হত্যা করেছে। পাশাপাশি তারা নারী ও মেয়ে শিশুদের গণধর্ষণ করেছে এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘তারা বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের হত্যা করা হচ্ছে, কারণ তারা তাদের সংস্কৃতি ও মুসলিম বিশ্বাস নিয়ে বাস করতে চায়। তাদের মিয়ানমার থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তারা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কারণ কেউ তাদের চায় না। কিন্তু তারা ভালো, শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা খ্রিষ্টান নয়। তারা ভালো মানুষ। তারা আমাদের ভাইবোন।’

গত শুক্রবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জাইদ রাআদ আল-হুসাইন বলেন, মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এসব অভিযোগ তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সরকার বরাবরই রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রায় সব অভিযোগই অস্বীকার করে আসছে। পোপ ফ্রান্সিস চলতি বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

‘সব বয়সী শিশুসহ নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের হত্যা, পালাতে থাকা লোকদের ওপর নির্বিচারে গুলি, পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, গণহারে আটক, গণহারে ও পদ্ধতিগতভাবে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন, ইচ্ছাকৃতভাবে খাবার ও খাবারের উৎস ধ্বংস করাসহ নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে স্যা দিয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে।

ট্রাম্প খ্রিস্টান নয় ‌: পোপ ফ্রান্সিস

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এবার তোপ দাগলেন স্বয়ং পোপ ফ্রান্সিস। প্রায় প্রতিদিন নতুন নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর ধর্ম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার মেক্সিকো সফরের শেষদিনে ট্রাম্প প্রসঙ্গে পোপ বলেন, যে মানুষ সেতু বাঁধার বদলে দেওয়াল তোলার কথা বলে, সে আর যাই হোক, খ্রিস্টান নয়। 

গত বছর ডিসেম্বরে এক নির্বাচনি সভায় ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে আগে মেক্সিকান অভিবাসীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়াবেন। কারণ, ওই দেশ থেকেই যত খুনি এবং ধর্ষক এসে জড়ো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এমনকি সীমান্তে উঁচু দেওয়াল তুলে মেক্সিকোকে আমেরিকার থেকে দূরে রাখবেন বলে দাবি করেন তিনি। 

বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের এইধরনের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার তীব্র নিন্দা করেন পোপ। বলেন, একজন সত্যিকারের খ্রিস্টান পৃথিবীর কোথাও কোনওদিন দেওয়াল তোলার কথা বলবে না। পোপের বক্তব্য প্রকাশ হওয়ার পরেই টুইটারে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ট্রাম্প। 
পোপের মন্তব্যকে ‘অশোভন এবং লজ্জাজনক’ বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, একজন ধর্মীয় নেতার কোনও অধিকার নেই অন্য মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকে আঙুল তোলার। তবে পোপের এই বক্তব্যের জন্য সরাসরি মেক্সিকো সরকারের ‘উস্কানি’কেই দায়ী করেছেন ট্রাম্প। তিনি আরও বলেন, ভ্যাটিকান যেদিন আইএস আক্রমণের মুখে পড়বে, তখন পোপ নিজেই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখার জন্য প্রার্থনা করবেন। 

ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া ডিরেক্টর ড্যান স্ক্যাভিনো ভ্যাটিকানের ছবি দিয়ে ব্যঙ্গ করে লেখেন, ‘চমৎকার মন্তব্য পোপের— যদিও তার নিজের ঘাঁটি ভ্যাটিকানই ঘেরা উঁচু পাঁচিলে।’

আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ বললেন পোপ ফ্রান্সিস
আলজাজিরা ও বিবিসি

এক শতাব্দী আগে তুর্কি ওসমানী সাম্রাজ্যের সেনাবাহিনীর হাতে বিপুল আর্মেনিয়ান হত্যা করার ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস। আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভান সফরকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগেও তিনি একই ধরনের কথা বলেছিলেন। 

আর্মেনিয়ার দাবি, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করে তুরস্কের সেনারা। তবে তুরস্ক গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এ সংখ্যাটা অনেক বাড়িয়ে বলা হয়েছে। একটি সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে হত্যাযজ্ঞ চালানো হলে তাকে গণহত্যা বলা হয়। তুরস্ক বলছে, সে সময় একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আর্মেনিয়াকে টার্গেট করে গণহত্যা চালানো হয়নি। এ ছাড়া ওসমানী সাম্রাজ্যের পতনের সময় বহু তুর্কি নাগরিকও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

শুক্রবার আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রসাদে বক্তব্য রাখার সময় পোপ ফ্রান্সিস বলেন, গত শাতাব্দীর শুরুতে ওই শোকাবহ ‘গণহত্যা’র মধ্য দিয়ে শুরু হয় ধারাবাহিক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এর আগে ২০১৫ সালে এই গণহত্যার কথা উল্লেখ করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। এতে ুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে তুরস্ক। সে সময়ও আর্মেনিয়ান হত্যার ঘটনাকে গত শতকের প্রথম গণহত্যা বলে দাবি করেন পোপ।

পোপের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এমনকি ভ্যাটিকান থেকে রাষ্ট্রদূতও প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক। তবে জার্মানি-ফ্রান্স-রাশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশ এরই মধ্যে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement