২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুসলিম দেশে বাজলো ইসরাইলের জাতীয় সঙ্গীত!

ইসরাইলি মন্ত্রী মিরি রেগেভ। - ছবি: সংগৃহীত

কোন মুসলিম দেশে ইসরাইলের জাতীয় সঙ্গীত বাজছে এরকম বিষয় কল্পনাও করা যেতো না। কিন্তু সেই অকল্পনীয় বিষয়ই সত্যি হয়েছে। মুসলমানদের কাছে অভিশপ্ত হিসেবে পরিচিত ইসরাইলী রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত বেজেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে জুডু প্রতিযোগিতায় বেজেছে মুসলমানদের প্রধান শত্রু ইসরাইলের জাতীয় সঙ্গীত। আরব আমিরাত সব রীতিনীতি লঙ্ঘন করে ইসরাইলি প্রতিযোগীকে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার পর থেকেই এ বিষয়ে সমালোচনা চলছিল। প্রতিযোগিতায় ইসরাইলি প্রতিযোগী একটি স্বর্ণপদক পায় এবং এরপরই বাজানো হয় দখলদারদের জাতীয় সঙ্গীত। কোনো মুসলিম দেশে এই প্রথম ইসরাইলের জাতীয় সঙ্গীত বাজলো বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে।

এছাড়া, ইসরাইলের সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামন্ত্রী মিরি রেগেভকেও আবু ধাবি সফরের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং আমিরাতের জুডু ফেডারেশনের প্রধান নাসের আত্তামিমি তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনগণসহ বিশ্বের মুসলমানরা দেশটির এ ধরণের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি জাতি এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সংযুক্ত আরব আমিরাত বহু দিন ধরেই দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সব ধরণের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাখঢাক করা হলেও এবার তা করা হয় নি।

ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদ দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক ও যোগাযোগ রাখবে না বলে এর আগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে মুসলিম দেশগুলো।

 

আরো পড়ুন : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কেন ওমান গেলেন?

আতাউর রহমান, ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৩:৩৪


ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আকস্মিক সফরে শুক্রবার ওমান গিয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজেক রবিনের পর দ্বিতীয় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সেখানে গেলেন।

এদিকে নেতানিয়াহুর এ সফরের নিন্দা জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইরান। শনিবার এক বিবৃতিতে ইরানি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইসরাইল ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।


ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে জায়নিস্টরা (ইসরাইল) মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনীদের বিরুদ্ধে ৭০ বছর ধরে চলা দখলদারিত্ব এবং হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করছে।’

নেতানিয়াহুর অফিস থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উপসাগরীয় দেশটির শাসক সুলতান কাবুসের আমন্ত্রণে শুক্রবার হঠাৎ করেই নেতানিয়াহু সেখানে গেছেন।

ইরানের মুখপাত্র বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইসলামিক দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন।

‘ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ দাবিতে আত্মসমর্পণ এবং জায়নিস্টরা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে এদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং মুসলমান ও ফিলিস্তিনি জাতির অধিকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে’, বলেন কাসেমি।

১৯৯৫ সালে জেরুসালেমে ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ ও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসেফ বিন আলাবির মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।

ওমান ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম দেখভালের জন্য ১৯৯৬ সালে দেশদুটি অফিস স্থাপনে সম্মত হয়েছে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় ফিলিস্তিনী ইনতিফাদার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে মাসকাট আবারো ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক ভেঙে দেয়।

এদিকে, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর হাতে গোপন ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থাকার কথা নাকচ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। তিনি বলেছেন, মিথ্যা অভিযোগ তুলে ইহুদিবাদী ইসরাইল লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

ইসরাইল সম্প্রতি অভিযোগ করেছে যে, বৈরুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে হিজবুল্লাহ গোপনে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনা করছে। প্রেসিডেন্ট আউন ইসরাইলের এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ২৩ অক্টোবর লেবাননে মোতায়েনকৃত জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল স্টিফানো ডেল কোলের সাথে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

মিশেল আউন বলেন, সীমান্ত নিরুপণ করার বিষয়ে ইসরাইলের অস্বীকৃতিই প্রমাণ করে তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। অথচ সীমান্ত ঠিক করার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, ইসরাইলি বাহিনী লেবাননের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সিরিয়ায় অব্যাহতভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে।

বৈঠকে ডেল কোল বলেন, লেবাননের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি জাতিসঙ্ঘ সচিবালয়ের সাথে আলোচনা চালাচ্ছেন। তথ্যসূত্র : আনাদোলু এজেন্সি ও পার্স টুডে

আরো পড়ুন : আল-আকসা মসজিদবিহীন জেরুসালেমের পরিকল্পনা, সিরীয় ভূখণ্ডেরও স্বীকৃতি চায় ইসরাইল

আল-জাজিরা, রয়টার্স, জেরুসালেম পোস্ট ও বিবিসি, ২৬ মে ২০১৮

বেপরোয়া হয়ে পড়েছে ইসরাইল। একর পর এক স্বপ্ন পূরণের দিকে ছুটছে দেশটি। ইতোমধ্যেই জেরুসালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদবিহীন একটি পোস্টার নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রাইডম্যান।

তেল আবিবের কাছেই অবস্থিত ইসরাইলি শহরে ডেভিড ফ্রিডম্যানের সফরে তার হাতে ছবিটি তুলে দেন আচিয়ার এক কর্মকর্তা। সমালোচকরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে জেরুসালেমে আল-আকসা মসজিদকে গুড়িয়ে দেয়ার ইসরাইলি পরিকল্পনা সামনে আসলো।

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দিয়ে ফিলিস্তিনের জেরুসালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের পর এবার সিরিয়ার গোলান মালভূমিরও স্বীকৃতি চাইছে ইসরাইল। ১৯৬৭ সালে এই মালভূমির একাংশ দখল করে নেয় তেল আবিব। সিরিয়ার কাছ থেকে দখলে নেয়া গোলান মালভূমিকে এবার ইসরাইলের এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ ঘোষণা ত্বরান্বিত করতে মার্কিন প্রশাসনে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে ইসরাইল।

জেরুসালেমের স্বীকৃতি আদায়ের পর উজ্জীবিত ইসরাইল গোলানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ট্রাম্প প্রাশাসনের ওপর চাপ তৈরি করছে। ২৪ মে ২০১৮ বুধবার রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা স্বীকার করেছেন ইসরাইলের গোয়েন্দামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ।

ইসরাইল কাটজ বলেন, গোলান মালভূমির ইস্যুটি ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে এজেন্ডার প্রথমে রয়েছে। আমেরিকা দখলকৃত গোলান মালভূমিকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে তা হবে ইরানের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ইরানবিরোধী তৎপরতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। গত ৫১ বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় গোলান স্বীকৃতির বিষয়টি প্রধান ইস্যু হিসেবে ঘুরপাক খাচ্ছে ।

তিনি বলেন, গোলান মালভূমি বিষয়ে পদ্ক্ষেপ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সেখানে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মার্কিন স্বীকৃতি সম্বলিত বিবৃতি হবে ইরানের জন্য আরো একটি বেদনাদায়ক জবাব। চলতি বছর আরো কয়েক মাস পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তেহরানকে এই বার্তা দেয়া হবে যে, তারা দেখুক যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরাইলকে ধ্বংস করার চেষ্টার প্রতিফল তারা পাচ্ছে।

১২০০ বর্গফুটের গোলান মালভূমি সিরিয়া ও ইসরাইল দুই দেশের জন্যই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে ছয় দিনের যুদ্ধে অঞ্চলটি দখল করে নেয় ইসরাইল। পরে ১৯৮১ সালে এসে এটিকে তারা নিজেদের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করে। সেখানে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কখনো তেল আবিবের এই দখলদারিত্বের স্বীকৃতি দেয়নি।

১৯৬৭ সালে দখলের পর থেকেই গোলান মালভূমিতে ইসরাইলে বড় ধরনের সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। অথচ শান্তিচুক্তির আওতায় ওই ভূখণ্ড কাগজে-কলমে ফেরত দেয়া হয়েছে। আর এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ভূমিকে ইসরাইলের ‘নিজস্ব ভূমি’ বলেই স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল।

সিরিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে গোলানকে দামেস্কের কাছে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল ইসরাইল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের প্রভাব ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মালভূমিটির নিয়ন্ত্রণ এখন নিজের কাছে রাখতেই আগ্রহী ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবেলার কৌশল হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনও গোলান নিয়ে ইসরাইলের প্রস্তাব বিবেচনা করছে বলে জানান কাটজ।

গোলান মালভূমিটির সাথে জর্ডানেরও সীমান্ত আছে। তেলআবিবের দখল থেকে গোলানমুক্ত করতে ১৯৭৩ সালে সেখানে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ব্যর্থ হয় দামেস্ক। পরের বছর দুই দেশের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হয়। এরপর থেকে গোলান নিয়ে তুলনামূলকভাবে শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।


আরো সংবাদ



premium cement