২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা; বিপদে সৌদি আরব

সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইইউর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা - ছবি : সংগৃহীত

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ। বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞাসহ হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব পাস হয়। 

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাস হওয়া প্রস্তাবের আইনগত ভিত্তি নেই। ইইউর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পাস হওয়া প্রস্তাব মানার েেত্র কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকে না। খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাসের পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছ, ‘সৌদি আরব থেকে দেয়া ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।’ খাশোগির হত্যাকাণ্ড মূলত ‘সৌদি আরবে মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক ও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক নিপীড়নের অংশ।’ 


এ ঘটনায় সৌদিবিরোধী পদেেপর অংশ হিসেবে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের সাথে সাথে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট সুনির্দিষ্ট সন্দেহভাজনদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণের মতো পৃথক পৃথক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন নিষেধাজ্ঞাই সৌদি আরবকে কঠিন বার্তা পৌঁছে দেবে। 

কয়েক দিন আগেই প্রথম ইউরোপীয় দেশ হিসেবে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল জার্মানি। রোববার চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল বলেছিলেন, ‘খাশোগির হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বর্তমান পরিস্থিতিতে অস্ত্র বিক্রি সম্ভব নয়।’

সৌদি কৌঁসুলির বক্তব্য
বিবিসি ও আলজাজিরা

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত বলে স্বীকার করেছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল-আখবারিয়ার খবরে এ কথা বলা হয়েছে। এই খুনের ঘটনায় দায়ী সব ‘অপরাধীকে’ সাজা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আল-আখবারিয়া জানায়, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য গঠিত সৌদি আরব ও তুরস্কের যৌথ টাস্কফোর্সের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ হত্যাকাণ্ডকে পূর্ব পরিকল্পিত বলেছেন সৌদির সরকারি কৌঁসুলি। তারা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলেও জানায় চ্যানেলটি।

খাশোগি খুনের ঘটনায় দায়ী সব অপরাধীকে সাজা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। রাজধানী রিয়াদে বুধবার বাণিজ্যিক সম্মেলনের ভাষণে তিনি বলেন, ‘এ অপরাধ সব সৌদি নাগরিকের কাছেই যন্ত্রণাদায়ক’। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সাথে কখনো কোনো বিরোধ হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ড একটি জঘন্য অপরাধ। এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এ অপরাধের পেছনে যারা আছে তাদের বিচার করা হবে... শেষপর্যন্ত ন্যায়বিচারেরই জয় হবে।’

তুরস্কের সাথে বেশ ভালোভাবে সহযোগিতার মধ্য দিয়েই কাজ চলছে জানিয়ে যুবরাজ বলেন, ‘বেদনাদায়ক এ ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে অনেক মানুষই সৌদি আরব আর তুরস্কের মধ্যে বিরোধ বাধানোর চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলব যে, এ কাজে আপনারা কখনই সফল হবেন না। কোনো বিরোধ কখনো হবে না। দুই দেশের সরকার অপরাধীদের সাজা দিতে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে এবং শেষ পর্যন্ত যে ন্যায়বিচারই জয়ী হবে তা আমরা বিশ্ববাসীর সামনে প্রমাণ করে দেবো। 
গত ২ অক্টোবর তুরস্কে ইস্তাম্বুলের সৌদি কন্স্যুলেটে খাশোগি নিহত হওয়ার পর এটিই জনসম্মুখে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানের প্রথম বক্তব্য। খাশোগি খুনের ঘটনায় যুবরাজের কোনো ভূমিকা থাকার অভিযোগ সৌদি আরব এর আগে অস্বীকার করেছে। খাশোগি নিজের বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ২ অক্টোবর কন্স্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর আর বেরিয়ে আসেননি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার কলাম লেখক ও স্বেচ্ছানির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। সৌদি আরব তাকে হত্যার জন্য দুর্বৃত্ত ঘাতকদের দায়ী করেছে।

শুরুতে অস্বীকার করলেও ১৯ অক্টোবর সৌদি জানায়, তুরস্কের ইস্তাম্বুল কন্স্যুলেটে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সাথে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে খাশোগির মৃত্যু হয়। এর দুদিন পরই খাশোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ঊর্ধ্বতন পাঁচ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় ১৮ জনকে। 

তবে সৌদির এসব বক্তব্যে এখনো সন্তুষ্ট হয়নি ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। তাদের ধারণা, খাশোগির খুনের পেছনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই মূল কলকাঠি নেড়েছেন। গত মঙ্গলবার তুর্কি পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণেও হত্যার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তবে এখন পর্যন্ত হত্যকাণ্ডের সাথে যুবরাজের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৌদি আরব।

হত্যাকাণ্ডের অডিও শুনেছেন সিআইএ প্রধান
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালক জিনা হ্যাসপেল জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের অডিও রেকর্ড শুনেছেন। গত সোমবার হ্যাসপেল তুরস্ক সফরে আসেন। তার এই সফরের সময় তাকে এ অডিও রেকর্ড শোনানো হয়। খাশোগি নিহত হওয়ার পর থেকেই তুরস্কের প থেকে তার হত্যার অডিও রেকর্ড তাদের কাছে আছে বলে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এ অডিও কিভাবে তারা পেয়েছে বা অডিও রেকর্ডে কী আছে তা নিয়ে বিস্তারিত কিছুই জানায়নি তুরস্ক। তবে খাশোগি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য ও বিস্তারিত সৌদি সরকারকে প্রকাশ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় তারা।


আরো সংবাদ



premium cement