২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাশিয়ার চেয়েও সৌদির সামরিক ব্যয় বেশি!

সৌদি আরবের সামরিক ব্যয় বিশ্বের উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। - ছবি: সংগৃহীত

ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করার পর সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক দিয়ে শুধু রাশিয়াকে অতিক্রম নয়, বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে তৃতীয় শীর্ষ বরাদ্দকারী দেশের অবস্থানে পৌঁছেছে সৌদি আরব।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সৌদি আরব ২০১৭ সালে সামরিক খাতে ৬৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৯.২ শতাংশ বেশি।

এর আগে সামরিক বাজেট বরাদ্দের দিক দিয়ে আমেরিকা ও চীনের পর রাশিয়া ছিল তৃতীয় এবং সৌদি আরব ছিল চতুর্থ। কিন্তু গত বছর রাশিয়া সামরিক বাজেটের পরিমাণ এক পঞ্চমাংশ হ্রাস করায় সৌদি আরব তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। সৌদি আরব একাই পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে সামরিকীকরণ করার চেষ্টা করছে। সামরিক খাতে সৌদি আরবের এ পদপে কয়েকটি দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

এক দিকে, সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করছে। দেশটি ইয়েমেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ও বিপুল অস্ত্র কিনছে। এসআইপিআরআইয়ের একজন গবেষক সিমন বেসম্যান বলেছেন, রিয়াদের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধবিগ্রহ। এসব যুদ্ধবিগ্রহে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সৌদি আরব জড়িত। সিরিয়ায় তৎপর আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্রের অন্যতম জোগানদাতা হচ্ছে সৌদি আরব।

সামরিক খাতে সৌদি আরবের ব্যাপক অর্থ বরাদ্দের আরেকটি বাধ্যবাধকতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক। সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সামনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে অস্ত্রসম্ভারের ছবি তুলে ধরেছেন তা বিরল। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের অর্থ আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়েছে।

এ ছাড়া সৌদি আরব ২০১১ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এখন অস্ত্র ব্যয় দেশটির মোট জিডিপির শতকরা ১০ শতাংশ।

সৌদি আরবের ৬৯ বিলিয়ন ডলার সামরিক ব্যয়ের পাশাপাশি রাশিয়ার এ ব্যয় ৬৬, ফ্রান্সের ৫৭, ভারতের ৬৩ এবং ব্রিটেনের খরচ হচ্ছে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময় অর্থাৎ গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ৬০৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে নিজের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। চীনের সামরিক বাজেট ছিল ২২৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক সঙ্ঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যাচ্ছে, যা মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে বাধ্য।

গত বছর সৌদি আরবে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সফরে যান তখন দেশটির কাছে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি সই হয়। গত বছর বিশ্বে সামরিক ব্যয় তার আগের বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে বিশ্বে সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১৭৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার।

গত বছর শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সামরিক ব্যয় বেড়েছে ৬.২ শতাংশ যা এসব দেশের জিডিপির ৫.২ শতাংশ। সাত থেকে ১০টি মুসলিম দেশ এ ধরনের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। এরা হচ্ছে ওমান, যার অস্ত্র ব্যয় জিডিপির ১২, সৌদি আরব ১০, কুয়েত ৫.৮, জর্ডান ৪.৮, লেবানন ৪.৫ এবং বাহরাইন জিডিপির ৪.১ শতাংশ সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আলজেরিয়ার সামরিক ব্যয় ৫.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে প্রযুক্তি ব্যয় ইরান তার ৮০ মিলিয়ন জনসংখ্যার তুলনায় অন্তত ইসরাইলের চেয়ে বৃদ্ধি করেছে। ইসরাইলের জনসংখ্যা ৯ মিলিয়ন। ১৯৯৬ সালে ইরান ৯৬০টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করে এবং একই বছর ইসরাইল করে ১০ হাজারটি। এরপর ইরানে এ ধরনের গবেষণা প্রবন্ধ বাড়তে থাকে। হারেৎজ বলছে, বছরে ৪১ হাজার বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করছে ইরান। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় তুরস্ক ও সৌদি আরবও পিছিয়ে নেই।

 

আরো পড়ুন: সৌদি আরবে এবার ব্যাংক পরিচালনায় নারী

নয়া দিগন্ত অনলাইন , ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৫০


সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে একটি ব্যাংক পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সৌদি ব্রিটিশ ব্যাংক (এসএবিবি) ও আলাওয়াল ব্যাংকের একত্রীকরণের পর গঠিত হতে যাওয়া নতুন একটি ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন সৌদি নারীব্যবসায়ী লুবনা আল ওলায়ান।


বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে রয়েছেন এই নারী। আগামী দিনে অর্থলগ্নিকারী শিল্পে সৌদি নারীদের পথিকৃৎ হিসেবে থেকে যাবেন আল ওলায়ান।

ফোবর্সের ২০১৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় নাম উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এই সৌদি নারী ব্যবসায়ীর।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’ এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি দেশটিতে নারীর ক্ষমতায়নে নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এসএবিবি ও আলাওয়াল ব্যাংকের একত্রীকরণের ফলে নতুন ব্যাংকটি সৌদি আরবের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাংকে পরিণত হতে যাচ্ছে। ব্যাংকটির মূলধন দাঁড়াবে ১৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসিও ব্যাংকটির আংশিক মালিকানায় থাকবে।

দীর্ঘ দিন ধরে রক্ষণশীল নীতি মেনে চলা সৌদি আরবের সাম্প্রতিক উদারপন্থা অবলম্বনেরই ফল হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত জুনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলে সৌদি নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পায়।


আরো সংবাদ



premium cement