২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খাশোগি নিখোঁজ : এরদোগানকে ফোন করে যা বললেন বাদশা সালমান

রোববার রাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়েব এরদোগানের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ - সংগৃহীত

সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তার সরকার বিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে রোববার রাতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়েব এরদোগানের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এরদোগানের দফরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ফোনালাপে খাশোগির নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনে সম্মত হওয়ায় তুরস্ককে ধন্যবাদ জানান সৌদি বাদশা সালমান। তিনি তুরস্কেকে ‘ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, আঙ্কারার সাথে সব ক্ষেত্রে সম্পর্ক ও সহযোগিতা শক্তিশালী করতে চায় রিয়াদ।

এ সময় এরদোগানও সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলস্থ সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকে জামাল খাশোগি নিখোঁজ রয়েছেন। ওই ঘটনার পর এই প্রথম তুরস্ক ও সৌদি আরবের শীর্ষ নেতারা টেলিফোনে কথা বললেন।

মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমগুলো বলেছে, খাশোগির নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সৌদি আরবের ওপর যে প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর জন্যই বাদশা সালমান রোববার রাতে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে ফোন করেন।

তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের কাছে থাকা তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দাবি করেছে, সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার পর খাশোগিকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এবং পরে তার লাশ টুকরা টুকরা করে গোপনে ওই কূটনৈতিক মিশন থেকে বাইরে নেয়া হয়।

 

খাশোগিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে!

বিবিসি

তুরস্ক সরকার মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছে, তাদের হাতে অডিও এবং ভিডিও প্রমাণ রয়েছে যে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়েছে।

মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা দেশটির প্রভাবশালী সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, এসব রেকর্ডিংয়ে দেখা যাচ্ছে সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কনসুলেটের ভেতরে জামাল খাশোগিকে আটক করেছে। এরপর হত্যা করে তার দেহকে খণ্ড-বিখণ্ড করেছে।

বিশেষভাবে অডিও রেকর্ডিং থেকে এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সৌদি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের যোগসাজশের গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে তারা দাবি করছে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা, যিনি এই অডিও এবং ভিডিও সম্পর্কে জানেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, "জামাল খাশোগি কনস্যুলেটের ভেতরে ঢোকার পর সেখানে কী ঘটেছিল তার একটা ধারণা ওই অডিও রেকর্ড থেকে জানা যাচ্ছে।"

"আপনি শুনতে পাবেন লোকজন আরবিতে কথা বলছে, "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, "আপনি শুনতে পাবেন তাকে (জামাল খাশোগিকে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে এবং পরে খুন করা হচ্ছে।"

তুর্কী কর্তৃপক্ষ অন্য যে মার্কিন কর্মকর্তাকে এই প্রমাণ দেখিয়েছে, তিনি বলছেন এসব রেকর্ডিং থেকে জামাল খাশোগিকে মারধরের প্রমাণ মিলেছে।

জামাল খাশোগি এক সময় সৌদি রাজপরিবারের খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সৌদি সরকার এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচনা করে তিনি সংবাদপত্রে লেখা ছাপিয়েছেন।

তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের একজন নিয়মিত কলামিস্ট ছিলেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের ওই খবরে বলা হয়েছে, খাসোগজি নিখোঁজ হওয়ার সাথে সাথেই তুরস্ক কেন সৌদি আরবকে দোষারোপ করেছে এসব প্রমাণ থেকে তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কিন্তু তুর্কী সরকার এসব অডিও এবং ভিডিও প্রকাশ করতে নারাজ কারণ এতে প্রমাণ হয়ে যাবে যে তুরস্ক একটি বিদেশি দূতাবাসের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি চালাচ্ছে।

সৌদি আরব এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।

খাসোগির অন্তর্ধানের ঘটনা যৌথভাবে তদন্ত করার জন্য তারা তুরস্কের প্রতি প্রস্তাব দিয়েছে এবং আঙ্কারা সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বলে ওয়াশিংটন পোস্ট খবর দিয়েছে।

কেন সৌদি কনস্যুলেটে এসেছিলেন জামাল খাশোগি?
খাশোগির কনস্যুলেটে আসার উদ্দেশ্য ছিল, তার পূর্বতন স্ত্রীকে যে তিনি ডিভোর্স (তালাক) দিয়েছেন - এ মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র নেয়া, যাতে তিনি তুর্কী বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে পারেন।

খাশোগি তার মোবাইল ফোনটি চেঙ্গিসের হাতে দিয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকেন।

চেঙ্গিস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, খাশোগি এ সময় বিমর্ষ এবং মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। কারণ তাকে ওই ভবনে ঢুকতে হচ্ছে।

হাতিস আরো বলেন, খাশোগি তাকে বলেছিলেন যদি তিনি কনস্যুলেট থেকে বের না হন, তাহলে তিনি যেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের একজন উপদেষ্টাকে ফোন করেন।

তিনি জানান, তিনি কনস্যুলেটের বাইরে অপেক্ষা করেন মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর একটা থেকে মধ্যরাতের পর পর্যন্ত।

কিন্তু তিনি জামাল খাশোগিকে কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেননি। বুধবার সকালবেলা কনস্যুলেট খোলার সময় তিনি আবার সেখানে উপস্থিত হন। কিন্তু খাশোগির কোনো খোঁজ মেলেনি। এর পর থেকেই তিনি নিরুদ্দেশ।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement