২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাংবাদিক নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি-পশ্চিমা সম্পর্কে কতটা প্রভাব পড়তে পারে?

সৌদি আরব
নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজি - ছবি : বিবিসি

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, কালো জ্যাকেট এবং ধূসর রঙয়ের ট্রাউজার পড়া একজন ব্যক্তি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করছেন। সেখানে সৌদি কনস্যুলেটের গেটের বাইরেই নীল রঙের জ্যাকেট পড়া একজন দাঁড়িয়ে আছেন।

যিনি সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করছেন, তিনিই নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগি। এই তার জীবিত থাকাবস্থায় শেষ ছবি।

২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সময় দুপুর সোয়া একটার দিকে তার সেখানে প্রবেশের এই দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।

পরবর্তীকালে যা ঘটেছে, তা এক রহস্যের বিষয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, নিখোঁজ সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করছেন।

 

সৌদি-পশ্চিমা সম্পর্ক ঝুঁকিতে
এই ঘটনা শুধুমাত্র সৌদিআরব এবং তুরস্কের সম্পর্কে তিক্ততা আরও বাড়িয়েছে, তা নয়।

পশ্চিমাদের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে।

এমনকি সৌদি যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমান পশ্চিমা বিশ্বে যে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন, সেই চেষ্টাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত এবং সৌদি সরকারের সমালোচক জামাল খাসোগজি ২ অক্টোবর দুপুরে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর তাকে যে পাওয়া যায়নি, সেদিনই ভোরে সৌদি থেকে একটি প্রাইভেট জেট বিমান নামে ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে।

সিসিটিভিতে এই জেট বিমান অবতরণের দৃশ্য ধরা পড়ে।

তুরস্কের টেলিভিশনে প্রচারিত এই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিমান থেকে নয়জন ব্যক্তি নেমে আসে। পরে আরেকটি বিমানে করে আরও ছয়জন আসে।

তারা ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের কাছে দু'টি হোটেলে ওঠে।

সন্দেহভাজন ১৫ জন
তুরস্কে সরকার সমর্থক সংবাদপত্র সাবাহ বলেছে, সন্দেহভাজন এই ১৫ জনকে সৌদি এজেন্ট হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের নাম এবং ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে সাংবাদ নিখোঁজ হওয়ার দিনে ১৫ জন সন্দেহভাজন ইস্তাম্বুলে সকালে ঢুকেছিল এবং পরে সৌদি ফিরে গেছে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বলা হয়েছে।

তুর্কি পত্রিকায় আরো বলা হয়েছে, ১৫ জনের মধ্যে কর্ণেল মাহের মুত্রেব নামের একজন সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা।

মোহাম্মদ আলমাদানি নামের আরেকজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হবেন।

তারা সকলেই ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নিজেদেরকে সৌদি সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

তাদের হোটেল বুকিং দেয়া হয়েছিল কয়েকদিনের জন্য। কিন্তু তারা ছিলেন অল্প কয়েকঘন্টা।

সাংবাদিক মি: খাসোগি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন তার প্রাক্তন স্ত্রীর তালাক সম্পর্কিত কাগজপত্র নিতে।

কারণ তিনি তার তুর্কি বান্ধবী হাতিস চেঙ্গিসকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।

তিনি সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের আগমুহূর্তে সেখানে তার বান্ধবীর কাছে দু'টি মোবাইল ফোন রেখেছিলেন।

সেই থেকে তার বান্ধবী হেতিস চেঙ্গিস সৌদি কনস্যুলেটের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু মি. খাসোগি সৌদি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে আসেননি।

তদন্ত এখন কোন পর্যায়ে?
তুরস্কের তদন্তকারীরা সৌদি কনস্যুলেটে অফিসে তল্লাশি শুরু করেছে।

তারা কনস্যুলেট জেনারেলের বাসভবন এবং বাগান এলাকায় তল্লাশির অনুমতি চেয়েছে। এখনও অনুমতি মেলেনি।

তদন্তকারিরা সিসিটিভি ফুটেজে পর্যালোচনা করে দেখেছে, সাংবাদিক খাসোগি কনস্যুলেটে ঢোকার দুই ঘন্টার মধ্যে একটা কালো গাড়ি কনস্যুলেটের ভিতরে দফতর থেকে কনস্যুলেট জেনারেলের বাসভবন পর্যন্ত গেছে।

সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের দুই ঘন্টার মধ্যেই জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তকারিরা ধারণা করছে।

অন্ধ চোখ
ঘটনাটি ইতিমধ্যেই সৌদিআরব এবং তুরস্কের মধ্যে তিক্ততা বাড়িয়েছে।

তুরস্ক বিশ্বাস করছে, সৌদি কনস্যুলেটের ভিতরে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে খুন করার পর তার লাশ গুম করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হলে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা চরম পর্যায়ে যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

কিন্তু সৌদি আরবের ব্যাপারে পশ্চিমাদের যে অন্ধ সমর্থন ছিল, তাতেও চির ধরতে পারে বলে বিশ্লেষকরা বলছেন।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ব্রিটেন বিষয়টাতে সৌদি আরবের কাছে জরুরি জবাব চায়।

তবে পশ্চিমাদের নিজেদেরও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রাজনীতি এবং স্বার্থের বিষয় আছে ।


আরো সংবাদ



premium cement