২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মুক্ত সমাজ না থাকলে, অপরাধ বাড়বেই : ড. শাহদীন মালিক

মুক্ত সমাজ না থাকলে, অপরাধ বাড়বেই : ড. শাহদীন মালিক - ছবি : সংগৃহীত

বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, মুক্ত সমাজ না থাকলে, অপরাধ বাড়বেই। এখন তাই হচ্ছে। স্বাধীনতা যত কম থাকবে, অত্যাচার তত বাড়বে, যেটি এখন আমাদের সমাজে হচ্ছে। তিনি বলেন, সমস্যা কি সেটি বুঝছি, কি সমাধান ,বা সংকট উত্তরনের উপায় কি জানি না, বলতে পারছি না।

বিশিষ্ট এ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, সকল ক্ষেত্রে যার যে দায়িত্ব, তা থেকে দূরে সরে গিয়ে সবাই রাজনৈতিক মতাদর্শের সমর্থক হয়ে গেছেন। কেউ বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক মতাদর্শের বয়ান দিচ্ছেন, আবার কেউ সাবেক ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক মতাদর্শকে তুলে ধরছেন। সবাই এটাতেই মেতে গেছি। কেউই তার সঠিক কাজটি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এ অবস্থা বেশী দিন চলতে থাকলে, সমাজ ও দেশকে শংকায়িত করে।

তিনি বলেন, ভাবমূর্তি বা ইজ্জত নিয়েও এখন সবার চিন্তা। কিন্তু ভাবমূর্তিও এখন আইনের ধারায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এর ফলে আমরা সামন্ত যুগের দিকেই যাচ্ছি। এটি আমাদের আরো শংকায়িত করছে। তিনি বলেন, এর সমাধান কি বলতে পারছি না।

শনিবার সকালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ‘শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতার পক্ষে দাড়ান’শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে র‌্যাগিং, গণ রুমের নির্যাতন হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তার সুযোগ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকার কারণেই অপরাধমূলক কার্যক্রম হচ্ছে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা দায়িত্বে ছিলেন আরেক বিশিষ্ট আইনজীবী সি আর আবরার। আলোচনায় অংশ নেন ড. সারা হোসেন, হাসনাত আবদুল কাইয়ুম, খ্যাতিমান ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম, প্রাথমিক শিক্ষক নেতা শামসুদ্দিন মাসুদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। আলোচনাটি আয়োজক হচ্ছে ‘ ল লাইফ কালচার নামের একটি সংগঠন এবং তাদের সহযোগিত ছিল আরো দু’টি সংগঠন ইয়ুথ ফর হিউম্যান রাইটস ও এ্যালমনাই এসোসিয়েশন ফর ইউনির্ভাসি অব সিডনী। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ব্র্যাক ইউনির্ভাসিটির শিক্ষক সাইমুম রেজা তালুকদার।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫০টি শিক্ষাঙ্গনে মানবাধিকার লংঘন, যৌন হয়রানী, দুর্নীতি এবং স্বাধীনতা হরনের ঘটনা ঘটেছে। যদিও সবগুলোর প্রেক্ষাপট, কারণ ও উৎস এক নয়, কিন্তু সব ক্ষেত্রেই এটি মিল হচ্ছে, ক্ষমতাধরদের দ্বারা মুক্তচিন্তকদের নিশ্চুপ করার প্রয়াস। বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অনেক ক্ষেত্রে অবসরে কিংবা চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত আইনে মামলা করা হয়েছে উপরন্তু এসেছে পাঠ্যপুস্তকের অপ্রতিনিধিত্বশীল পরিবর্তন।

অন্যদিকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহনের অপরাধে ঢালাওভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার, যৌন হয়রানী ও নিপীড়ন মামলা এবং হামলা হয়েছে; যা সামগ্রিকভাবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা বলার পরিসর কমে এসেছে।

আলোচনা সভা শেষে সর্বসম্মত এক বিবৃতিতে সরকার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে বলা হয়, সংবিধানে শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্তকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অতি সত্বর যেন তাদের সনদে শিক্ষার স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ বিধান অন্তর্ভূক্ত করে।


আরো সংবাদ



premium cement