২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাসেলকে মাসে ৫ লাখ টাকা দিয়ে আদালতে জানাতে গ্রীন লাইনকে নির্দেশ

-

গ্রীনলাইনের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকার বাকি ৪৫ লাখ টাকা গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতেই হবে। তবে একসাথে না দিয়ে প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে নয়টি কিস্তিতে সে অর্থ পরিশোধ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

আজ মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ টাকা কমানোর আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দিয়েছেন।

আদালত বলেন, গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জরিমানার বাকি ৪৫ লাখ টাকা রাসেলকে দিতে হবে। গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে নয় কিস্তিতে রাসেলকে এই অর্থ দেবে। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে সে বিষয়ে ওই মাসের ১৫ তারিখ আদালতকে তা জানাতে হবে।

শুনানিতে আদালত গ্রীন লাইন পরিবহণের মালিকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ওজিউল্লাহ সাহেব আপনি কি বলছেন, আপনার মূল সাবমিশনটা কী বলেন।

আইনজীবী ওজিউল্লাহর কাছে জানতে চান আপনারা কতো টাকা দিয়েছেন? জবাবে আইনজীবী ওজিউল্লাহ বলেন, চিকিৎসা বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। এ ছাড়াও ৫ লাখ টাকার চেকে দেয়া হয়েছে।

এ সময় আদলত বলেন, ‘আপনারা অসহায় এ ছেলেটার একটা ব্যবস্থা করতে পারতেন। খোঁজ-খবর নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করে সমঝোতা করতে পারতেন। কোনো না কোনো ভাবে সহযোগিতা করতে পারতেন। স্বাভাবিক মানবতাবোধ (মিনিমাম হিউম্যান বিয়িং) দেখাতে পারতেন। আপনাদের আচরণ শোভনীয় নয়।’

এ সময় আদালত আরো বলেন, ‘আপনার কোনো স্টাফ এমন আচরণ করেছে তাতে আপনাদের কোনো দায় নাই।’

আপনারা আপিল বিভাগে গেছেন, সেখানে নাকচ হয়েছে। এখন আমরা বিষয়টা শুনতে বাধ্য। যদি ২৫ লাখ টাকা চিকিৎসার জন্য এবং বাকি ২৫ লাখ তার জীবন নির্বাহের জন্য দিতেন, বললে হতো। কিন্তু মানুষ হিসেবেও কিছু করেননি। আপনাদের আচরণ ছিল শোভনীয় নয়। এখন ক্ষতিপূরণের অর্থের পরিমাণ কমানোর কোনো সুযোগ নেই।

আদালত আরো বলেন, আপনারা ক্ষতিপূরণ কমানোর আর কিস্তিতে টাকা পরিশোধের সুযোগ চাইছেন। তার ওপর ইচ্ছাকৃত গাড়ি চাড়ানোতে পা হারিয়েছে। অথচ ছেলেটার একটু খোঁজ নিলেন না।

এ পর্যায়ে আদালত জানতে চান আজকে কি কোনো টাকা দিয়েছেন?

আইনজীবী ওজিউল্লাহ নীরব থাকলে রিট আবেদনের আইনজীবী খন্দকার সামসুল হক রেজা দাঁড়িয়ে বলেন, তারা আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি কিভাবে ক্ষতিপূরণ দিবে তাও জানায়নি। প্রতিদিন তাদের আয় ১ কোটি টাকা।

আদালত বলেন, আপানারা তো দেওলিয়া হয়ে যাননি। কিছু টাকা দিলে কী হতো। ছেলেটার সামনে এখনো অনেক সময় পড়ে আছে।

এ সময় বিআরটিএ’র পক্ষের আইনজীবী বলেন, বিআরটিএ ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির কার্যক্রম এখনো চলছে।

আদালত বলেন, আমরা কমিটি নয় অ্যাকশন দেখতে চাই। সড়কে এখনো বিশৃঙ্খলা রয়েছে। এবারের ঈদে অন্তত ৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছে ৭ শ’। আপনারা কিসের নিরাপত্তা দিচ্ছেন?

বিআরটিএর আইনজীবী আবারো বলেন, আমরা কমিটি করেছি।

আদালত বলেন, এটা গতানুগতিক। মানুষ মারা যাচ্ছে। বিআরটিএ কিছু করতে পারছে না।

আদালত গ্রীন লাইনের উদ্দেশে বলেন, যদি আপনার আদেশ লঙ্ঘন করেন, তাহলে আমরাও অন্য ব্যবস্থা নেব। কোনো ভাবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমানোর সুযোগ নেই। যে লোক আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার ফন্দিফিকির খোঁজে তাকে সরকার কিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় সেটা আমরা দেখব। আপনারা ধর্মঘট করতে পারেন। আমরা শপথ নিয়েছি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো।

এরপর আদালত প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে দেয়ার আদেশ দেন।

আদালতে আজ গ্রীন লাইনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো: ওজিউল্লাহ। রিটের পক্ষে ছিলেন খন্দকার সামসুল হক রেজা ও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আলম মাহমুদ বাশার।

এর আগে গত ২২ মে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য আজকের (২৫ জুন) দিন পর্যন্ত সময় দেন আদালত। কিন্তু গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ না করে আজ ক্ষতিপূরণের টাকা কমানোর জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে আদালতের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ।

গত ৩১ মার্চ গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।


আরো সংবাদ



premium cement