২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল

পুলিশ
পুলিশ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ক্ষতিপূরণ দিতে রুল - নয়া দিগন্ত

মানিকগঞ্জের দুই পুলিশের হাতে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে ডাক বাংলোতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় সরকারের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।

চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট আটজনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো: আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো: আব্দুল হালিম। তার সাথে ছিলেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল।

পরে ব্যারিস্টার মো: আব্দুল হালিম বলেন, ধর্ষণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ কারণে আদালত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।

প্রসঙ্গত, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি ডাক বাংলোতে আটকে রেখে ধর্ষণ ও মাদক সেবন করানোর অভিযোগ করেন সাভারের এক নারী।

এরপর জেলা পুলিশ সুপার অভিযোগটি পেয়ে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দীকীকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপর দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আরো পড়ুন :
ইয়াবা খাইয়ে ধর্ষণ! দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় এক নারীকে দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অস্ত্রের মুখে ওই নারীকে ইয়াবা সেবনেও বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর তাৎক্ষণিক ওই দুই কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন সাটুরিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম।

অভিযোগকারী নারী ঢাকার আশুলিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা। তিনি জানান, সেকেন্দার হোসেন আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় তার কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়ে জমি কেনেন। জমি বিক্রির লাভের অংশ তাকে দেয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবে তিনি সেকেন্দার হোসেনের কাছে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু টাকা শোধ না করে সেকেন্দার তাকে ঘুরাতে থাকেন। সাটুরিয়া থানায় বদলি হওয়ার পরও তিনি সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার তিনি তার এক ভাগ্নিকে (২০) সঙ্গে নিয়ে সাটুরিয়া থানায় যান। সেখানে সেকেন্দার তাকে টাকা দেয়া হবে জানিয়ে ডাকবাংলোতে নিয়ে যান। সন্ধ্যার পর সাটুরিয়া থানার এএসআই মাজহারুলকে সঙ্গে নিয়ে ডাকবাংলোতে যান সেকেন্দার।

অভিযোগকারী জানান, সেখানে দুই পুলিশ কর্মকর্তা টাকা দিতে অস্বীকার করে উল্টো হুমকি দেন। পরে তারা ডাকবাংলোর একটি কক্ষে ইয়াবা সেবন করেন ও তার ভাগ্নিকে জোর করে ইয়াবা সেবন করান। তারা অভিযোগকারীর ভাগ্নিকে সারারাত আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে সাটুরিয়ার ওসি বিষয়টি জানতে পেরে ডাকবাংলোয় যান। তিনি ওই নারীদের জিজ্ঞাসাবাদও করেন। তবে দুই পুলিশ কর্মকর্তার হুমকির কারণে তারা ওসিকে কিছু জানানোর সাহস পাননি। পরে ওসির উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে টাকা দেওয়ার কথা জানান এসআই সেকেন্দার। এ জন্য দুই নারীকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়। টাকার জন্য তারা ওই ডাকবাংলোতেই অপেক্ষা করেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার পর ওই দুই কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছেন। কিন্তু ওই সময়েও তাদের কোনো টাকা দেননি এসআই সেকেন্দার। বরং আগের রাতের মতোই তারা পাওনাদারের ভাগ্নিকে ধর্ষণ করেন। পরে শুক্রবার সকালে ৫ হাজার টাকা হাতে দিয়ে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন এসআই সেকেন্দার ও এএসআই মাজহারুল।

নির্যাতনের শিকার তরুণী বলেন, প্রতিবেশী খালার সঙ্গে তিনি সাটুরিয়া গিয়েছিলেন। তাদের সেদিনই ফিরে আসার কথা থাকলেও দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের আটকিয়ে রাখেন। তারা অস্ত্রের মুখে তাকে মাদক সেবন করানোর পর ধর্ষণ করে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী নারী। ওই সময় ঘটনা প্রকাশ করলে গুম করার হুমকিও দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শুক্রবার সকালে সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সাভারে ফিরে পরিচিত সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান তিনি। পরে রোববার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।

সাটুরিয়া থানার ওসি আমিনুর ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সাটুরিয়া ডাকবাংলোতে এক নারীকে এসআই সেকেন্দার হোসেনের সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখা গেছে। বিষয়টি দ্রুত মিটিয়ে ফেলার জন্য সেকেন্দারকে বলা হয়েছিল। ওই সময় অভিযোগকারীরা তাকে ধর্ষণের কথা জানাননি বলে দাবি করেন ওসি। তবে শনিবার রাতে পুলিশ সুপার ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাটুরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করেন। পরে জানতে পারেন, তাদের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এসআই সেকেন্দার হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এক নারী তার কাছে পাওনা টাকার জন্য সাটুরিয়া এসেছিলেন। তাকে কিছু টাকাও দেয়া হয়েছে।

পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার কারণ জানতে চাইলে সেকেন্দার বলেন, তিনি সে ব্যাপারে কিছু জানেন না।

মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর শনিবার রাতেই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement