০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নির্বাচনের আগে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না’

-

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেছেন, নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন কোনো সিদ্বান্ত আসছে না। পূর্ববর্তী সিদ্বান্ত অনুযায়ী আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রোহিঙ্গারা রাজি হলেই আমরা তাদের মিয়ানমারে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম স্থগিত এবং নির্বাচনের আগে প্রত্যাবাসন হচ্ছে না এ প্রসঙ্গে আবুল কালাম বলেন, স্থগিত আমরা কখনো বলিনি। কারণ এর পরে তো আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন করে আর কোনো সিদ্বান্ত হয়নি। সুতরাং আমরা আগের সিদ্বান্তেই এখনো আছি। মাঠ পর্যায়ে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা রাজি হতেও পারে, তারা রাজি হলেই আমরা পাঠাবো।
তিনি বলেন, সরকার যেহেতু এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, আপাতত ধরে নেয়া যায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নির্বাচনের আগে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না।তিনি গতকাল সোমবার দুপুরে এ কথা জানিয়েছেন।
তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিদেশী সংস্থার এবং সরকারের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনের আগে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আর শুরু করা যাচ্ছে না। এমন কি নির্বাচনের পরেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে কি না তা নিয়েও তারা সন্দিহান। কারণ মিয়ানমার যত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করবেন না ততদিন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরতে চাইবে না।
প্রসঙ্গত নানা কূটনৈতিক তৎপরতা শেষে এসব রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর উখিয়ার জামতলী ও টেকনাফের উনচিপ্রাং শরণার্থী শিবির থেকে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে দিয়ে প্রথম দফায় প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের মুখে শুরু করা যায়নি।
‘জীবন বাঁচাতে দেশান্তরী হয়েছি, আবার জীবন দিতে যাবো না’
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তরিকতার ন্যূনতম কোনো প্রকাশ ঘটায়নি মিয়ানমার। উল্টো আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে সময়ক্ষেপণের কৌশলেই হেঁটেছে। নিজেদের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখতে চীন, রাশিয়াসহ পক্ষের দেশগুলোতে কূটনীতি অব্যাহত রেখেছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সাথে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করেছেন। অবশেষে গত ১৫ নভেম্বর দিনক্ষণ, প্রস্তুতি সব ঠিক থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানেরা তাদের মাতৃভূমিতে চরম নিরাপত্তার অভাবের কারণে আর ফিরতে চান না। স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারে যেতে রাজি না হওয়ায় ঝুলে গেল প্রত্যাবাসন। বরং মিয়ানমারে নিরাপত্তাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে তারা। মিয়ানমারে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর এক বছর তিন মাস পার হতে চললেও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের আগমন থামছে না। উখিয়া প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জাতিগত নিপীড়নের শিকার এই জনগোষ্ঠী যাতে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে সে জন্য মিয়ানমারকে অব্যাহত চাপে রাখার আহবান জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পৃক্ত আছে। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত একাধিক রোহিঙ্গার সাথে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা হয়। তারা বলেন, জীবন বাঁচাতে আমরা দেশান্তরী হয়েছি। আবার জীবন দিতে যাবো না। আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের ওপর গণহত্যা ও নিপীড়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার দাবি করছি। রোহিঙ্গা মাঝি আলী আকবর বলেন, জোরপূর্বক মিয়ানমারের রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব, জাতীয়তা এবং আমাদের নিজস্ব পরিচয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের এলাকার স্থানীয় যুবক ডাক্তার মুজিব বলেন, যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা বিভিন্নভাবে নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান ও ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। সামাজিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে কিন্তু কৃতদাস হিসেবে নয়, সমান নাগরিক অধিকার নিয়ে। ১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নির্মূল শুরু হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি চৌকিতে হামলার পর সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। চরম নিপীড়নের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারী শফিকা বেগম বলেন, মিয়ানমারের বুরাইঙ্গা পাড়া তার গ্রামে বৃদ্ধা ও তরুণীদের আলাদা একটি বাড়িতে নিয়ে বার্মিজ আর্মিরা গণধর্ষণ করেছে। তিনি নিজেও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পাঁচ দিন হেঁটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বর্তমানে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা আ’লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি বাড়ানোর লক্ষ্যে গাম্বিয়ায় ওআইসির সম্মেলন শুরু ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশী আহত মধুখালীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচালক নিহত, আহত হেলপার বরিশালে নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ নয়া দিগন্তের শৈলকুপা সংবাদাতার ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ সুন্দরবনে জ্বলছে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট শায়েস্তাগঞ্জে সাবেক সেনা সদস্য ট্রাকচাপায় নিহত ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে কায়রোতে জোরদার প্রচেষ্টা

সকল